২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৫৮:৪৩ অপরাহ্ন


কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে মাথা ব্যাথাই নেই বিএনপির
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৬-২০২২
কুমিল্লার নির্বাচন নিয়ে মাথা   ব্যাথাই নেই বিএনপির


কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে কোনো মাথা-ব্যাথাই নেই বিএনপির । নেই তাদের বিন্দুমাত্রও আগ্রহ। এমনকি এর আয়োজনে নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষতা বা সক্ষমতা কিংবা সাহসিকতা পর্যবেক্ষণেও বিএনপির কোনো কৌতুহলও নেই। এধারণা পাওয়া গেছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা সাথে কথা বলে। ১৫ জুন বুধবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

কুমিল্লা নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন ও পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন দুজন। মোট কেন্দ্র ১০৫টি। পাঁচজন মেয়র প্রার্থী। ১০৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৩৮ জন সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী। সদর ও দক্ষিণ উপজেলার ২৭টি ওয়ার্ডের সব কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ হবে। 

বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য ও মন্তব্য

অনেক হাক ডাক দিয়ে এই নির্বাচনের কথা প্রচার করা হলেও স্থানীয় প্রশাসনই ১০৫ ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৮৯টি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, সাতটি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৯টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এমন নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও তাদের বেশ কয়েকজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন,যাদেরকে বহিষ্কার করেছে দল। তবে দলের এসব নেতারা যারা নির্বাচনে অংশ নিলেও তারা কতটা বিএনপিমনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের ব্যাপারে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় মাঠ পর্যবেক্ষণ করে।

অনেকে মনে করে তারা কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনেরই রাজনৈতিক কুটকৌশল বাস্তবায়ন করছেন এরা। বিশেষ করে মনিরুল হক সাক্কু’ যে আ ক ম বাহাউদ্দিনের একজন বিশ্বস্ত রাজনৈতিক পার্টনার তা সবারই মুখে মুখে। এদু’জনের সর্ম্পক যে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির উর্ধে তা কুমিল্লাবাসীর মুখে মুখে। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন কুমিল্লার এমন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই প্রতিনিধিকে বলেন, এখানে (কুমিল্লা) কোনো দলের খবরদারি আরো খারাপ ভাবে প্রকাশ করলে বলা যায় মাতব্বরি অন্তত পক্ষে আ ক ম বাহাউদ্দিনের আমলে হবে না। 

তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, কুমিল্লায় নির্বাচন নিয়ে দেখভাল বা আরো ভালো কিছু করতে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকেও কোনো কমিটি করা যায়নি। যা নারায়ণগঞ্জের সিটি কপোরেশনের বেলায় করা হয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালি টিম দলের মেয়র প্রার্থীরা পক্ষে কাজ করেছিল। কিন্তু এখানে আসলে প্রমাণ হয় যে কুমিল্লায় আ ক ম বাহাউদ্দিনের একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য ও কমান্ড। এখানে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের প্রতিনিধিই অসেননি। এছাড়া বিএনপি থেকে বহিষ্কারের আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও মনিরুল হক সাক্কু ঠিকই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। কারণ আ ক ম বাহাউদ্দিনের বলয়ের বাইরে যেতে তার সামথ্য হয়নি। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতও আ ক ম বাহাউদ্দিনের একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য ও কমান্ডের বাইরে না।

এমনকি অনেকে মনে করেন আরফানুল হক রিফাতও এসব জেনে বুঝে আ ক ম বাহাউদ্দিনের একচ্ছত্র রাজনৈতিক আধিপত্য ও কমান্ডের বাইরে পা রাখতে সাহস পায়নি। অপরদিকে সর্বশেষ  নির্বাচন কমিশন (ইসি) চিঠি দেওয়ার পরও কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন এলাকা না ছাড়লে ইসির কিছুই করার নেই বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের মন্তব্যেও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি। অন্ততপক্ষে আ ক ম বাহাউদ্দিনকে গোপনেও ইসি’র প্রতি মৌখিক সম্মান দেখাতেও পরামর্শ দেয়া হয়নি, পাছে আ ক ম বাহাউদ্দিনের বিরাগভাজন হতে হয়। 

বিএনপি’র আগ্রহ নেই

এদিকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দলটির কোনো পর্যায়েরই নেতাকমীদের মধ্যে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই । তাদের মতে, যদি সেভাবে আগ্রহ থাকতো তাহলে কুমিল্লায় বিএনপির নেতাকর্মীরা শহর প্রকম্পিত করে তুলতো। জানা গেছে বিএনপির পক্ষ থেকে শহরে একধরনের প্রচারণাও চালানো হয়েছে যে বিএনপির সমর্থকরা যেনো ভোট দিকে কেন্দ্রেও না যায়। এমনকি কেমন ভোট হচ্ছে বা কারা জিততে যাচ্ছে সেব্যাপারেও যেনো কোনো উৎসক্য না দেখায়। 

এব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া যিনি কুমিল্লা বিএনপিরও সাংগঠনিক সম্পাদক তিনি সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধিকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে পাতানো ভোটাবিহীন নির্বাচনের যে বিএনপি অংশ নেবে না তা চূড়ান্ত। এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তাদের সকল অপকর্ম বৈধতা দেয়ার জন্য তো আমরা অবৈধ্য সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নিবো না তা বলেই দিয়েছে দল। যারা এনির্দেশ অমান্য করেছে তাদেরতো দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। এসব বহিস্কৃতদের পেছনে যারা যাচ্ছে তাদের ব্যাপারেও দশ মনিটর করছে। 

কারণ আমরাতো জানি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কী নির্বাচন হবে। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কুসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় আমরা মনিরুল হক সাক্কু, নিজাম উদ্দিন কায়সারকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি। আর সত্যি কথা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনো মাথা-ব্যাথাই নেই। নেই কোনো ধরনের বিন্দুমাত্র আগ্রহ। আমরা বিএনপি নেতাকর্মী সমর্থকদেরও অনুরোধ রাখছি তারা যেনো দলের অনুরোধটুকু রাখেন। তারা যেনো ভোট দিতেও না যায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে বিএনপির নেতাকর্মী এবং সমর্থকরাও এনির্বাচনে ভোট দিতে যাবে না।



শেয়ার করুন