২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:২৩:০৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্য ‘জনগণের সাথে তামাশা’ : রিজভী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্য ‘জনগণের সাথে তামাশা’ : রিজভী রুহুল কবির রিজভী


যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্য ‘জনগণের সাথে তামাশা’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, কিসের নালিশ? উনি (ওবায়দুল কাদের) কি শুনেছেন... কি কথা-বার্তা হয়েছে... উনি কি জানেন? আমরা তো কেউ জানি না। আর বিদেশীরা আসলে বিশেষ করে গণতান্ত্রিক দেশের কর্মকর্তারা আসলে সরকারি দল, বিরোধী দল সবার সাথে বসেন... এটা তো রেওয়াজ, এটা তো দীর্ঘ দিনের ঐতিহ্য। তারা (যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল) ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং সেই কারণেই আমাদের নেতৃবৃন্দ দেখা করতে গেছেন। সেখানে কি আলোচনা হয়েছে, কি কথা হয়েছে সেটা তো আমরা কেউ জানি না। আমাদের নেতৃবৃন্দ যারা গেছেন পার্টির সংগ্রামী মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তারা তো কিছু বলেননি। তাহলে উনি (ওবায়দুল কাদের) জানলেন কি করে? তাহলে উনি কি কোনো গোপন ডিভাইস কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন নাকি। আর কথা-বার্তা উনি যেভাবে বলেন তাতে মনে হচ্ছে যে, উনি বোধহয় বিএনপির বিকল্প স্থায়ী কমিটির সদস্য .... মনে হচ্ছে যে, বিএনপির অনেক গোপন কথা তিনি আগেই জেনে যাচ্ছেন। এগুলো আসলে জনগনের সাথে তামাশা করা, প্রতারণা করা।”

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি) দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর আইলিন লাউবাকার এবং ইউএসএইড সহকারী প্রশাসক ও এশিয়া ব্যুরো মাইকেল শিফার, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার। বিএনপির এই বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপি জনগণের চেয়ে বিদেশীদের কাছে নালিশ দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করে। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে যে ভুল করেছে, এর খেসারত তাদের অনেকদিন দিতে হবে। অচিরে টের পাবে তারা রাজনীতিতে নিজেদেরকে কতটা সংকুচিত করে ফেলেছে।”

বিদেশী কাছে নালিশ প্রসঙ্গে রিজভী পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ’ নালিশ... ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারা (আওয়ামী লীগ) কি করেছেন? শুধু দেশে নয়, বিদেশে গিয়ে এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে গিয়ে বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধে খুব জোরালো কণ্ঠে সেখানে তারা কথা বলেছেন।”

‘খেসারত আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে’

‘নির্বাচনে না যাওয়ার খেসারত বিএনপিকে অনেকদিন দিতে হবে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এহেন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, দেখুন খেসারত তারা দিয়েছে, আমরা দেইনি। আমরা সত্য ও কমিটমেন্টকে সব সময় অগ্রাধিকার দিয়েছি। যেমন আপনারা জানেন যে, এরশাদের আমলে তারা জনগণের কাছে কমিটমেন্ট করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তারা সেটা পাল্টে দিয়েছে। তারা বলেছিলো, এরশাদের অধীনে যারা নির্বাচনে যাবে তারা জাতীয় বেঈমান হবে... আর নিজেরা নিজের কথাই জাতীয় বেঈমান হয়ে নির্বাচনে গেছেন। বিএনপি সেটা করেনি... বিএনপি সুস্পষ্টভাবে তাদের অঙ্গীকারে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল এবং তার রেজাল্ট আমরা পেয়েছি। জনগণ কিন্তু সব বিচার করে, বিবেচনা করে যে, এই রাজনৈতিক দলটি জনগণের সাথে যে ওয়াদা করে সেই ওয়াদা তারা ভঙ্গ করে না বলেই ৯১ সালে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি সরকার একজন বিচারপতিকে দিয়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন.... যেখানে কোনো স্বৈরাচারের হস্তক্ষেপ ছিলো না সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করেছে। এই পুরস্কারটা বিএনপি পেয়েছে জনগণের পক্ষ থেকে। আর তারাই দেখবেন এদেশে যখন অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে তখন এই যে, কথাগুলো বলছেন বিভ্রান্তি ছাড়ানোর... এর পরিণতি আওয়ামী লীগকে ভোগ করতে হবে এবং ওবায়দুল কাদের সাহেবরা যে মিথ্যাচার করছেন সেটাও তাদের ভোগ করতে হবে। আমরা সত্যের পক্ষে, আমরা ন্যায়ের পক্ষে, আমরা কমিটমেন্টের পক্ষে এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে।”

পিলখানার ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যাবে না

রিজভী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনার ১৫ বছর পর ডামি সরকারের মন্ত্রীরা এখন বলছেন, ঘটনার সঙ্গে নাকি বিএনপি জড়িত। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ তার বাসভবনে সফররত ভারতের আগরতলা প্রেসক্লাব প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বলেছেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিএনপি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তারাই ষড়যন্ত্র করে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটিয়েছিল... চৌকষ অফিসারদের হত্যা করা হয়েছিল। এই ঘটনার পেছনে বিএনপি ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। ষড়যন্ত্র তারাই যে করেছে তা স্পষ্ট। সেদিন পিলখানায় কি ঘটেছিল, কারা ঘটিয়েছিল, কেন ঘটেছিল, ঘটনার নেপথ্যের নায়ক কারা, কারা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে....সবকিছুই আওয়ামী ঠুসি পরা হাছান মাহমুদ স্বীকার না করলেও দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে সত্য ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে। গতকালও পিলখানার সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা নিয়ে বিজিবির (সাবেক বিডিআর) সাবেক ডিজি লে. জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মইনুল ইসলাম গতকাল (সোমবার) একটি গণমাধ্যমে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তা দেখে কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? সেদিন জনগণ যা দেখেছে এবং যা বিশ্বাস করেছে তারই প্রতিফলন ঘটেছে সাবেক ডিজি’র বক্তব্যে। তিনি বলেন, সাবেক ডিজির সাক্ষাৎকারটি গতকাল প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তিনি পরিস্কারভাবে বলেছেন, একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বিদ্রোহীদের সাথে জড়িত ছিল ও বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার সময় বাইরে তারা জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরের প্ররোচনা ইত্যাদি নিয়ে তিনি যা বলেছেন সেটি ঘটনার দিন থেকেই জনগণ বিশ্বাস করে। সাবেক ডিজি তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিল তাদেরকে কাজ করতে দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। আমরা বলতে চাই, পিলখানা ট্র্যাজিডির রহস্য ধামাচাপা দেয়া যাবে না, একদিন এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটিত হবে এবং প্রকৃত অপরাধীদের বিচার হবেই। পিলখানায় সেনা অভিযান না চালানো, খুনীদের আপ্যায়ন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা ও অনেককে বিদেশে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দেয়ায় নানান প্রশ্নের জন্ম দেয়। সেই সব প্রশ্ন ক্ষোভের সংগে উচ্চারণের দায়ে আরো অনেকে চাকরি হারান। ২০১১ সালের ৩০ আগস্ট প্রকাশিত উইকিলিকস এর ফাঁস করা গোপন তথ্য, ঘটনায় জড়িতদের স্বাক্ষ্য প্রমাণ, তাদের বিচার প্রক্রিয়া, তদন্ত কমিটির আংশিক প্রতিবেদন, দেশী বিদেশী পত্র পত্রিকা-মিডিয়ার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টার মাথায় বিধ্বস্ত বিডিআরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা লেফটেন্যন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. মইনুল ইসলামের সর্বশেষ বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণ হয় আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঠান্ডামাথায় সুপরিকল্পতভাবে বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকষ সেনা কর্মকর্তাকে এবং তাদের অনেকের পরিবারের সদস্যদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। আর পেছনে তাদেরকে শক্তি যুগিয়েছে এই সরকারের প্রভুরা... বিদেশে যারা প্রভু আছে তারা।” বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকে দূর্বল করতেই পিলখানার হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিলো বলে মন্তব্য করেন রিজভী। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সাহিদা রফিক, তাহসিনা রুশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন