১৭ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০২:০৭:১৭ পূর্বাহ্ন


‘আওয়ামী দুঃশাসন হটাতে হবে’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
‘আওয়ামী দুঃশাসন হটাতে হবে’ মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ফাইল ছবি)


সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, আমরা বলতে চাই, আওয়ামী লীগের বর্তমান দুঃশাসন নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক। দেশ এখন দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে না খাওয়া মানুষ, অন্যদিকে মুষ্টিমেয় লুটেরা ধনী। আওয়ামী দুঃশাসন হটাতে হবে। 

সিপিবির উদ্যোগে ঢাকায় শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে গত শুক্রবার সমাবেশে তিনি একথা বলেন। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সিপিবির সদস্য এম এম আকাশ। সমাবেশ পরিচালনা করেন সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। সমাবেশে পার্টির সম্পাদকম-লীর সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম, এ এন রাশেদাসহ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এজন্য মেহনতি মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। বামপন্থীদের একত্র করতে হবে। কমিউনিস্ট পার্টি বর্তমানে ক্ষমতার কথা ভাবার কথা শুরু করেছে। আমরা বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তুলবো। বামপন্থীদের নেতৃত্বে বিকল্প গড়ে তুলতে হবে। রাজনীতিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কাছে কুক্ষিগত রাখার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই। ২০০১ সালে পল্টনের মহাসমাবেশে বোমা হামলায় আমাদের ৫ জন শহিদ হয়েছিলেন, দুঃশাসনের বাইরে বিকল্প শক্তির উত্থানের দাবিতে।

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, দেশে সংঘাতের রাজনীতি চলছে। গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলছে ও ভয়ের রাজনীতি চলছে। হামলা মামলাসহ চলছে সর্বত্র দলীয়করণ। মানুষের জানমালের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঋণখেলাপিদের ঋণ উদ্ধারে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। সরকার আইএমএফের সাথে অযৌক্তিক চুক্তি করেছে। ইতিমধ্যেই বিদ্যুৎ, গ্যাসের দাম বেড়ে গেছে। আমরা বলতে চাই উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী নয়। দেশে গণতন্ত্র না থাকলে স্থিতিশীল উন্নয়ন সম্ভব নয়। সামনে নির্বাচন, ক্ষমতার খেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। সরকার গণতন্ত্রকে জিম্মি করে রেখেছে। কমিউনিস্ট পার্টি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। ভয় দেখিয়ে কোনো সরকার রেহাই পাবে না। কমিউনিস্ট পার্টি জনগণের পক্ষে লড়াই করবে। আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগ-বিএনপির নীতি একই। ২০১৮ তে যেভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, এবার যদি সরকার সেরকম ভোট করতে চায় কমিউনিস্ট পার্টি জনগণকে সাথে নিয়ে এর প্রতিরোধ করবে। 

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, দেশে দুর্নীতি ও লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বাংলাদেশে বর্তমানের নীতি হলো ‘যে করে আয় তার পকেট ফাঁকা, আর যে আয় করে না তার পকেট থাকে মোটা’। দেশের কমিউনিস্ট পার্টি এ ব্যবস্থা বদলের জন্য লড়াই করছে। বামপন্থী কমিউনিস্টরা করে নীতিনিষ্ঠ রাজনীতি। বর্তমানে দুর্নীতি-দুঃশাসন ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে ফেলেছে। বাংলার জনগণকে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। অনেকে স্লোগান দিচ্ছে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। কিন্তু আমরা বলি, সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। আমরা ক্ষমতায় গেলে জিনিসপত্রের দাম কমাবো, ফড়িয়াদের দৌরাত্ম্য কমাবো, সিন্ডিকেট ভেঙে দেবো। সরকার কমিউনিস্টদের, বামপন্থীদের উপেক্ষা করে, কেননা কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আসলে তারা লুটপাট করতে পারবে না। আমাদের সামনে বড় সংকট এই দুঃশাসন। তিনি দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে গণসংগ্রাম গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণকে নীতিহীন শক্তিকে ‘না’ ও নীতিশীল শক্তিকে ‘হ্যা’ বলতে হবে। 

এম এম আকাশ বলেন, শহিদের রক্ত কখনো বৃথা যায় না। আগে বলা হতো বংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম কমলেও দেশে দাম কমে না। সরকার সাধারণ ঋণখেলাপিদের ঋণ মওকুফ করে দিচ্ছে। অবিলম্বে পাচারকৃতদের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। তদন্ত করে কালো টাকা ফেরত আনা হোক। বর্তমান বাংলাদেশে, সুশাসনের অভাব, দুর্নীতির কারণে পুঁজিবাদ স্বজন তোষণমূলক পুঁজিবাদ। আওয়ামী লীগ-বিএনপি হলো লুটেরাদের দল। বিকল্প বাম শক্তির উত্থান এখন সময়ের দাবি।

সমাবেশ শেষে কয়েক হাজার মানুষের লাল পতাকা মিছিল শাহবাগ প্রজন্ম চত্বর থেকে শুরু হয়ে এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত হয়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশের আগে বিভিন্ন এলাকা থেকে লাল পতাকা নিয়ে পার্টির নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। 

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের এইদিনে রাজধানীর পল্টন ময়দানে সিপিবির মহাসমাবেশে বোমা হামলা চালানো হয়। সিপিবির দাবি প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতক চক্রের এই হামলায় খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সিপিবি নেতা ও দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরির শ্রমিকনেতা আব্দুল মজিদ, ঢাকার ডেমরা থানার লতিফ বাওয়ানী জুটমিলের শ্রমিকনেতা আবুল হাসেম ও মাদারীপুরের মোক্তার হোসেন ঘটনাস্থলেই এবং খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কমরেড বিপ্রদাস রায় আহত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ওই বছরেই ২ ফেব্রুয়ারি শহিদের মৃত্যু হয়। বোমা হামলায় শতাধিক সিপিবিকর্মী আহত হন। এদের মধ্যে অমর মণ্ডল, মো. জাহাঙ্গীর, আব্দুস সাত্তার, মিজানুর রহমান, এম. এ করিমসহ অনেকে পঙ্গু অবস্থায় বেঁচে আছেন। এছাড়া আজ ২০ জানুয়ারি সকাল ৯টায় এই শহিদদের স্মরণে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থাায়ী বেদিতে সিপিবি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠন পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

শেয়ার করুন