১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:২১:৫৮ অপরাহ্ন


বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হটকারী সিদ্ধান্ত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হটকারী সিদ্ধান্ত


শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তাসাপেক্ষ ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আর শিল্পমালিকদের সংগঠনগুলো শিল্প সহনীয় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সম্মতি দিয়েছিলো। গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহের মহামারি সময়ে দিশেহারা হয়ে মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি নির্ধারণের দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করেই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে প্রথমে গ্রাহক পর্যায়ে, বিদ্যুৎ মূল্য আর তার পরেই গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা দিলো। চাহিদা-সরবরাহের ব্যাপক ব্যবধানের কারণে কোনো গ্রাহকের যখন মানসম্মত গ্যাস-বিদ্যুৎপ্রাপ্তির সম্ভাবনা নেই তখন ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎশিল্প, বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিকে অনেকে হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে আখ্যায়িত করছেন।

গ্যাসের বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা জানাচ্ছেন, শিল্পগ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পেতে হলে আমদানির সমান মূল্য দিতে হবে। কিন্তু সেই প্রকৃত মূল্য কত? শিল্পগ্রাহকরা মূল্য দিলেই কি মানসম্মত গ্যাস নিরবচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যাবে কি-না এ নিয়েও আছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব? তবে এটাও ঠিক, দুনিয়ার কোনো দেশে মূল্যবান কয়লাসম্পদ মাটির নিচে রেখে দেয়া হয় না। কেন জলে-স্থলে থাকা পেট্রোলিয়াম সম্পদ আহরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয় না? এ কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারলে এখন এ সেক্টর নিয়ে এতোটা দুশ্চিন্তা হতো বলে মনে হয় না। নির্বাচনের বছর। এ সময় এমন সিদ্ধান্তগুলো প্রকারান্তে সাধারণ মানুষের অস্বস্তির কারণ হবে কি-না এ খোঁজও রাখা প্রয়োজন বৈকি!  

শুনেছি, শিল্পমালিকদের সংগঠনসমূহের সঙ্গে আলোচনায় জ্বালানি সচিব ৪০ টাকা ইউনিট মূল্যে গ্যাস সরবরাহের প্রস্তাব দিলে নিরবচ্ছিন্ন, মানসম্মত সেক্টরের সঙ্গতি না থাকায় স্পট মার্কেট থেকে (২২-২৬ মার্কিন ডলার/এমএমবিটিইউ) মূল্যে গ্যাস কেনা নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্বে। 

গ্যাস সংকটে কোনোরকম টিকে আছে রফতানিমুখী শিল্পগুলো। ক্ষুদ্র-মাঝারিশিল্প মৃত্যুপ্রায়। এই মুহূর্তে সরকারি আদেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি মারাত্মক সংকটের সৃষ্টি করতে পারে বলেই মনে হচ্ছে। তবু সরকার ভেবেচিন্তেই যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির পর সব সমস্যার সুরাহা হবে কি-না, সে প্রশ্ন ও সংশয় কিন্তু থেকেই যায়। 

মার্চ থেকে গ্যাস বিদ্যুৎ চাহিদা পৌনঃপুনিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন বাড়ার চেয়ে কমার শঙ্কাই বেশি। ৩০০ মিলিয়ন এলএনজি আমদানি করা হলেও সেটিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হবে। সরকার ডলার সংকটে কয়লা আমদানি করতেও হিমশিম খাচ্ছে। আইপিপিগুলোর কাছেও বিপিডিবির দেনা বাড়ছে। 

বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নাকি উৎপাদনে প্রভাব ফেলবে না। কি ভেবে, কি জেনে, উনি এই কথা বলেছেন বোঝা গেলো না। অর্থনীতির এই মহামারির সময়ে অর্থমন্ত্রী কিছু বলছেন না কেন এটাও শঙ্কা জাগছে। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সাধারণ মানুষ তার মুখের কথা শুনে আশ্বস্ত হবেন। অথচ তিনি যেন একেবারেই চুপ। সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তার বক্তব্যটা মানুষ যে শুনতে চায়। মানুষ তার কথার ওপর ভরসা করতে চায়। 

পরিশেষে বলি, বিগত সকল সরকারের ব্যর্থতা আছে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টরের বর্তমান কূল রাখি, না শ্যাম রাখি অবস্থার জন্য। সবচেয়ে বড় দায় আমলানির্ভর বর্তমান সরকারের। গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থায় চুরি, অবৈধ, অদক্ষ ব্যবহার আর লিকেজ নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দাম বাড়িয়ে এলএনজি আমদানি করলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা যাবে না বলেই আমার মনে হচ্ছে। আপাতত দৃষ্টিতে এ সিস্টেম লস ক্ষুদ্র মনে হলেও এটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে বড় একটা সাশ্রয় হতে পারে, যা আপদকালীন সময়ে ভীষণ উপকার দিতে পারে।

শেয়ার করুন