২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৩৬:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রাজনৈতিক সমঝোতা বা সংলাপের সম্ভাবনা কফিনে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
রাজনৈতিক সমঝোতা বা সংলাপের সম্ভাবনা কফিনে পুলিশের মারধরে আহত গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমান


বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষপটে একটি সংলাপের প্রত্যাশা দীর্ঘদিনের। সাধারণ মানুষ দেশে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হোক, আন্দোলন হোক, মানুষের জানমালের ক্ষতি হোক এসব চান না। বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা নগন্য। তাদের প্রত্যাশার বড় একটা অংশ রাজনৈতিক সমঝোতা। দেখা গেছে একই বাড়িতে চাচা আওয়ামী লীগ। ভাতিজা বিএনপি। বা ভাতিজা বিএনপি, বাবা আওয়ামী লীগ। বা অন্য কোনো দলের সাপোর্টার। দলীয় কার্যক্রমে তারা আলাদা আলাদা প্লার্টফর্মে যোগ দেন। দিন শেষে বাড়িতে ফেরে খাবার টেবিলে তারা এক। একই হাড়ির রান্না খাচ্ছেন তারা। আদর্শগতভাবে তারা একে অপরের জব্বর প্রতিপক্ষ। কিন্ত ফ্যামিলির নীতিতে এক। এমনটা শুধু ঘরের বা বাড়ির চিত্র নয়। গোটা সমাজেই। একে অপরের আত্মীয়। যদি মন্ত্রী, এমপিদের মধ্যে খুঁজতে যান, দেখা যাবে এমন আত্মীয়তা সেখানেও। আর না হোক রাজপথে কঠোর আন্দোলনে সরকারের বিপক্ষে থাকা শীর্ষ এক নেতার প্রাণের বন্ধু সরকারী দলের নেতা, নীতিনির্ধারক, মন্ত্রী। এটা শুধু রেফারেন্সই নয়। বাস্তবেও এমনটার উদহরণ দেয়া যাবে। ইতিহাসে বহু রেফারেন্স বেড়িয়ে আসবে। খুবই কাছের আত্মীয় স্বজনও একে অপরের। 

ফলে এদের একে অপরের প্রতি শুভ কামনা প্রতিনিয়ত। একজনের বিপদে আরেকজনের মন প্রাণ কেদে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। 

এ তো গেলে সাধারণ মানুষ, নেতা মন্ত্রীদের কথা। একবার একটু চোখ খুলে তাকালে দেখা যাবে, রাজপথের আন্দোলনে যে আইনশৃংখলা বাহিনী তুমুল লাঠিপেঠা, প্রয়োজনে রাবার বুলেট, টিয়ারসেল, জলকামান থেকে গরম পানি, ধরপাকড় করে থানা হাজতে নেয়া বা মামলা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া- এরা কারা? এ সকল আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যরা কোথা থেকে আসেন? এ সমাজেরই তো অংশ। বাংলাদেশের সাধারণ ফ্যামিলিরই সদস্য। নিছক চাকরির খাতিরে আজ সে ওই স্থানে। তিনিও তো কারো স্বামী, ভাই, ভাতিজা, মামা, চাচা বা নিকটাত্মীয়। তারাও যখন অ্যাকশনে যান তারাও চোখ মেলে দেখেন কাকে পিটাচ্ছি। কাকে আক্রমণ করছি সিনিয়র অফিসারের হুকুমে। যার বিরুদ্ধে অ্যাকশন সে কী আমার কাজের কেউ? 

ফলে সাধারণ দৃষ্টিতে দেখলে সবাই চান শান্তি। এ সোনার দেশে সবাই চান সহবাস্থান। নতুবা পাশের বাড়ির বা পাশের ফ্লাটের হিন্দু, বা খ্রীষ্টান ফ্যামিলির সদস্যটা বাঁচতে পারতেন না। টিকতে পারতেন না। এটাই হলো বাংলাদেশের মানুষের সহবস্থানের বড় রেফারেন্স। ঢাকায় যে মহাসমাবেশ করলো বিএনপি। এখানে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে আসা নেতা রাতে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় রাত কাটিয়েছেন। এমন ঘটনা বহু। বিপরীত চিত্রটাও এমন। এ পরস্পর সম্পর্কটুকু না থাকলে এতটা ছোট্ট দেশে ১৮ কোটি মানুষের থাকা সম্ভবপর হতো না।

যতদূর জানা গেছে এ সকল মানুষই চায় দেশে শান্তি ও সহবস্থান। তারা চান না, হানাহানি, রাজপথে একজন মায়ের কোল খালি হোক। এমনকি যে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য জনগণের জানমাল রক্ষার্থে গুলি ছুড়েছেন, তিনিও চাননা তার ওই গুলিতে কারো প্রাণ চলে যাক। 

কিন্তু বাস্তবতা এটাই। যে এসব সম্পর্ক বিভিন্ন স্বার্থে আর কাজে আসে না। এখানেই মানুষের প্রত্যাশায় রাজনৈতিক ঐক্য প্রত্যাশা হয়। সবাইকে নিয়েই এ বাংলাদেশ। সবাই ভাল থাকুক, এটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু সমাজে কিছু দুষ্টমানুষ যুগ যুগ ধরে থেকে আসছে, এখনও আছে। তাদের কূটকৌশলের কাছে শুরু হয় অরাজকতা, অশান্তি। যারা প্রতিনিয়ত ঘোলা জলে মাছ শিকারে অভ্যস্ত। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে নিয়ে যেয়ে অস্বাভাবিক এক ভাল থাকার চিন্তায় মেতে ওঠে। মানুষ এদের চিহ্নিত করতে শুরু করেছে। কিন্তু এরাও খুবই ধুর্ত। প্রতিনিয়ত এরা এমন কিছু করবেন যা শুধু তার নিজের স্বার্থের খাতিরে। কিন্তু সেটা যে সমাজ, রাষ্ট্রের বড় এক ক্ষতির কারণ সেটা তিনি বুঝেনও না। 

সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যে কিছুটা হলেও ইশারা ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছিল সমঝোতার। কেউ কেউ বলছিলেন, দেশে আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের মত ভীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে এমন সমঝোতা বা সংলাপ বড্ড প্রয়োজন। এর বেশ কিছু ইঙ্গিত রয়েছে। কদিন আগেও জুময়ার নামাজ শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর হাতে বিএনপির এক নেতা অনুমতি নিয়ে এক দফা আন্দোলনের লিফলেট তুলে দিতে চাইলে তিনি হাসিমুখে সেটা গ্রহণ করেন।  অনেক মন্ত্রীও তাদের ইশারা ইঙ্গিতে একটা সমঝোতা, সংলাপের কথা জানান দিয়েছেন। বলতে শুরু করেছিলেন, সংবিধান মেনে বিএনপি আসলে আমরা সংলাপ করবো। বিএনপিও নরম হয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেও তাদের প্রত্যাশিত ফরমেটে কিভাবে নির্বাচন করা যায় সে ফর্মুলা বলবেন বলে জানিয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ। 

একই সঙ্গে বিদেশীদের যে চাপ সমঝোতা মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সেটা তো মানতেই হবে। নতুবা বাংলাদেশের অনেক স্বার্থে তারা ব্যাঘাত ঘটাবেন এটা তারা মুখে না বললেও অনুমান করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ও বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ক্ষমতাসীনদের সমাবেশ দ্বিতীয়বারের মত দৃষ্টান্ত রেখেছে সহবাস্থানে। সেটা যেভাবেই হোক না কেন। 

কিন্তু অবস্থান কর্মসূচিটা শান্তিপূর্ণ করার ঘোষণার পরও পুলিশের কিছুটা বাড়াবাড়ি ছিল বলেই অনেকে মনে করেছেন। তারা কী করছে সেটা অবলোকন করেই অ্যাকশনে যাওয়া যেত। বিএনপির অভিযোগ অনুসারে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে টুকু পর্যন্ত দেয়া হবে না নিছক সন্দেহের বসবর্তি হয়ে সেটা তো হয় না। দেশে রাজনীতি, আন্দোলন সংগ্রাম, নিজের মত প্রকাশ, অধিকার আদায় এটা সাংবিধানিক অধিকার। 

যে সমস্যার মধ্যদিয়ে ওই কর্মসূচির ইতি ঘটলো সেটা গয়েশ্বর রায় ও আমানউল্লাহ আমানের গ্রেফতার গ্রেফতার নাটক ও তাদের নিয়ে পরবর্তি কিছু ঘটনা। যেমনটা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বর্ষিয়ান একজন বিএনপি নেতা। তাকে ডিবিতে প্রায় চার ঘন্টা রাখার পর সেখানে তাকে বেশ সমাদর করা হয়েছে। যা একেবারেই নতুন। ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়নি এমন বিএনপি নেতা খুব কমই রয়েছেন। মির্জা ফখরুলসহ। তাদের বেলায় যা করা হয়নি গয়েশ্বরের বেলায় সোনারগাও হোটেল থেকে খাবার এনে বিনয়ের সঙ্গে ডিবি প্রধান আপ্যায়ন করেন। এটা হতেই পারে। কিন্তু বিপত্তি গয়েশ্বরকে খাওয়ানো সেই চিত্র, ভিডিও ফুটেজ সংবাদ মাধ্যমে কে বা কাদের ছড়িয়ে দেয়া। 

এখানে অনেক কথা রয়েছে গয়েশ্বরের। কিন্তু একটা ভাল ব্যাবহারের নজির স্থাপন দেখে অনেকেই যখন আস্থা পাচ্ছিলেন তখন ওই ছবি ও ভিডিও যে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে ছিল সেটাই প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখানেও পলিটিক্স। এখানেও এক প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের জন্য ফাঁদ পাতা। এ বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিদ্যমান। 

আমানউল্লাহ আমানকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে পুলিশ চলে যায়। আমান সেখান থেকে অন্য হাসপাতালে যেয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করার সময় সেখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি দল উপস্থিত হয় ফল জুস নিয়ে। এটাও সমমর্মিতার অংশ বিশেষ মানুষ এটাকেও চমৎকার দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু পরক্ষণে শুরু হয় এটা নিয়ে রাজনীতি। এক দল বলছে, অসুস্থ্যতার ভান করে হাসপাতালে ফল, জুস খেয়ে আমান ভাল আছেন। অথচ শত শত কর্মীরা বেরধক পিটুনি খেয়ে মামলা খেয়ে জেলে। 

গয়েশ্বরের বেলায়ও তাকে আটকের সময় বর্ষিয়ান এ নেতাকে রাস্তায় ফেলে পেটানোর ভিডিও দেখা গেছে। কিন্তু গয়েশ্বর অভিযোগও করেন তাকে বেড়ধক পেটানো হয়েছে। কিন্তু এরপর তার সঙ্গে ওই আচরণের পর নিন্দুকেরা বলতে শুরু করলেন, এত মাইর খাইলে আরামে বসে কিভাবে খাবার খেলেন দাদা গয়েশ্বর?  

এ নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে চায়ের টেবিলে ঝড়, তোলপাড়।

সব শেষে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব একটা ইস্যুতে গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনে। কিন্তু সেখানে তাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হলে সেটা তিনি স্পর্শ করেননি। ভয়। যদি এটা নিয়েও কোনো রাজনীতি হয়? 

এখন কথা হলো, একটা রাজনৈতিক সমঝোতা ও সংলাপের প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ার প্রক্কালে এমন কিছু ঘটনায় বিএনপি কী ওইসব চায়ের দাওয়াত বা এক টেবিলে বসার চিন্তা করবে? 

অমন প্রস্তাব এলেও তারা চিন্তা করবেন। কারন বিএনপি প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। আর ক্ষমতার বাইরে থাকা মানে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মামলা, হামলার টার্গেটে পরিণত হওয়া। সে বিএনপিকে কাছে ডাকার যে দায়িত্ব সেটা সরকারেরই। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি আর কী অমন এক টেবিলে বসে আলাপের চিন্তা করবে? মনে করাই কী স্বাভাবিক হবে না যে এটাও কোনো ফাঁদ কি না? 

সাধারণ মানুষ, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলতে শুরু করেছেন, দ্রব্যমূল্যের ক্রমগত উর্দ্ধগতি, রিজার্ভ সঙ্কটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশের রাজনীতি দুষ্টু লোকের আধিক্য বেড়ে গেছে। নতুবা রাজনৈতিক সমঝোতা বা সংলাপের একটা সম্ভাবনার কফিনে, এভাবে পেড়েক মারে কেউ?

শেয়ার করুন