২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:১৭:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মায়ানমার সংকটের পরিণতি কোথায়?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
মায়ানমার সংকটের পরিণতি কোথায়? আরাকান আর্মি


বাংলাদেশসংলগ্ন মায়ানমার সীমান্ত জুড়ে এখন চলছে মায়ানমার সেনাবাহিনী এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকানিজ বাহিনীর যুদ্ধ। দীর্ঘ এ যুদ্ধের আঁচ পড়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। মায়ানমারে বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে অনেক সীমান্ত চৌকির পতন ঘটেছে। সরকারি বাহিনীর অনেক সদস্য পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে প্রতিবেশী ভারত এবং বাংলাদেশে। এইতো সেদিন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জন মায়ানমার নাগরিককে নিবিড় নিরাপত্তার মাধ্যমে মায়ানমারের কাছে হস্তান্তর করা হলো। ভুলে গেলে চলবে না আরকান রাজ্যে নির্বিচার গণহত্যার কারণে ১০-১২ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। নানা ধরনের কূনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও রোহিঙ্গা সমস্যা অনেকটা বিষফোড়া হয়ে আছে।

এটা সবাই জানে মায়ানমারের অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের কারণে পরাশক্তি সেখানে প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী। দেশটিতে মানবাধিকার দারুণভাবে লঙ্ঘিত। নির্বাচিত বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে জবরদস্তি অপসারণ করে দেশ শাসন করছে অবৈধ সামরিক জান্তা। এতদাঞ্চলে প্রভাবশালী চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় জান্তা সরকার অনেক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও টিকে আছে। তবে বিশাল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা সশস্ত্র গোষ্ঠী সেনাবহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। কিছু গোষ্ঠীকে ইদানীং পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মায়ানমারের সম্পদের ওপর নজর আছে প্রতিবেশী ভারত এবং এমনকি রাশিয়ার। 

তবে এককভাবে চীন বিপুল বিনিয়োগ করেছে। মায়ানমার ভূমধ্যসাগর এবং ভারত সাগর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে চীনের স্বর্ণ দুয়ার। ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র চাইছে মায়নামারের কাছাকাছি পৌঁছে চীনের একাধিপত্য ক্ষুণ্ণ করতে। বাংলাদেশ মায়ানমারের নিকটতম প্রতিবেশী। মায়ানমার ঘিরে পরাশক্তিগুলোর প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ায় শ্যাম রাখি না কুল রাখি অবস্থায় পড়েছে বাংলাদেশ। বিদ্যমান সংঘাত, যুদ্ধ অচিরে অবসান না হলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী নিরাপত্তাহীনতা ও অরাজকতা সৃষ্টি হবে। পরাশক্তিদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে পিষ্ট হয়ে স্যান্ডউইচ হবে বাংলাদেশ। এমনকি সমাধান হিসেবে বাংলাদেশের কিছু পার্বত্য এলাকা হারানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। 

এখানে স্মরণীয় যে অনেকটা ভূরাজনৈতিক কারণে মার্কিন কোম্পানি এক্সন মোবিল গভীর সাগরে ১৫টি ব্লকে গ্যাস তেল অনুসন্ধানের অযাচিত প্রস্তাব দিয়েছে। নানা দেনদরবারের পরেও ভূরাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নিয়ে এখনো সম্মতি দেয়নি বাংলাদেশ। সিদ্ধান্ত হয়েছে উন্মুক্ত বিডিং হবে। দেখতে হবে কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। 

বাংলাদেশের মূল সমস্যা রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধান। রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ইতিমধ্যে নানা সংকটের সৃষ্টি করেছে। বনাঞ্চল ধ্বংস, পরিবেশদূষণ, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত সৃষ্টি, বাংলাদেশি পরিচয়ে দেশ-বিদেশে নানা অপরাধ সংঘটিত করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে। বাংলাদেশের জন্য মায়ানমারের বর্তমান সীমান্ত সংঘর্ষ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সবধরনের কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে আশু সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। চীন, ভারতের সক্রিয় সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক মহলের আন্তরিক সমর্থন ছাড়া এটি অসম্ভব। এই সূত্রে কারো কোনোভাবে নোবেল পুরস্কার জয়ের অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। অচিরেই মায়ানমার সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন না হলে বাংলাদেশ বিশাল অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এমনকি হারাতে পারে কিছু ভূখণ্ড।

শেয়ার করুন