২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:৩৮:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


ব্লিজার্ড হিরো সম্মাননা নিয়ে চরম বিতর্ক
পেলেন ২ বাংলাদেশি ও ১ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বাফেলো
দেশ রিপোর্ট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০১-২০২৩
পেলেন ২ বাংলাদেশি ও ১ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বাফেলো মেয়রের সাথে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা তিন বাংলাদেশি


: বাফেলো ব্লিজার্ড হিরো সম্মাননা পেলো দুই বাংলাদেশি একটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। গত ২১ জানুয়ারি বাফেলো সিটিতে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের ক্যাম্পবেল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন হলে সম্মাননা তুলে দেন নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর ক্যাথি হোচুল।

বাফেলো সিটিতে গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভয়াবহ তুষারঝড়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছিলেন একদল বাংলাদেশি। তাদের মধ্য থেকে দুইজন এমডি তাজুল ইসলাম মানিক মোহাম্মদ ওসমান শিমুলকে তাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ব্লিজার্ড হিরো হিসেবেদ্য গভর্নরস মেডেল অব পাবলিক সার্ভিসসম্মাননা দেয়া হয়। একইসাথে, তুষারঝড় পরবর্তী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার জন্য প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেয়া হয় বাফেলো সিটিতে বাংলাদেশি মালিকানাধীন লাভবার্ডস রেস্টুরেন্টকে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলম। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাফেলো সিটির মেয়র বায়রন ব্রাউন উপস্থিত ছিলেন।

স্মরণকালের ভয়াবহ তুষার ঝড়ে বাফেলোতে বসাবাসকারী অন্য কমিউনিটির সাথে বাংলাদেশি কমিউনিটিও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। বিপর্যয় ঘটে মানবতার। অনেকেই বলেছেন, তারা জীবনেও এমন বিপর্যয় দেখেননি। প্রচণ্ড ঝড়ে পুরো বাফেলো যেন কারো কারো জন্য এক খণ্ড নরকে পরিণত হয়। সেই ঝড়ে অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছেন। অনেকের লাশ পড়েছিলো রাস্তায়। সবচেয়ে ভালো খবর ছিলো কোনো বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেননি। তবে অনেক বাংলাদেশির বাসায় বিদ্যুৎ ছিলো না, পানি ছিলো না। অতিরিক্ত বরফের কারণে সিটির উদ্ধারকর্মীরাও যেতে পারেননি। বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জানিয়েছেন, আল্লাহর রহমত যে আমরা বেঁচে আছি। যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হয়নি, আমরা বেঁচে থাকবো। বারবার শুধু আল্লাহকে ডেকেছি। বেশ কয়েকজন জানান, তাদের বাসায় বিদ্যুৎ নেই, পানি নেই। কোথাও যাওয়ার অবস্থা নেই। যেন এক দুর্বিষহ জীবন। তারা বলেন, জীবনরক্ষায় আমরা গ্যাসের চুলা চালিয়ে দিয়ে দুই দিনের মতো সেখানেই সবাই একসাথে অবস্থান করেছি।

এই ভয়াবহ বিপর্যয়ে প্রথমেই এগিয়ে আসেন বাংলাদেশি মানিক মজুমদার। তার বাসার দরকার দিয়ে তিনি বের হতে পারেননি। কারণ তুষারে ঢাকা ছিলো তার দরজা। তিনি তার বাসার জানালা ভেঙে বের হয়। প্রথমেই উদ্ধার করে মোহাম্মদ ওসমান শিমুলকে। মানিক মজুমদারের সাথে আরো যোগ দেন ফজলুল করিম, তালাহা বখত। এক সময় তাদের দল - জন থেকে প্রায় ৪০ জনের মতো দাঁড়ায়। তারা সিটি আইনকে লঙ্ঘন করে যেখানে বিপদে ছিলেন বাংলাদেশিরা তাদের উদ্ধার করেন। যাদের খাবার প্রয়োজন তাদের বাসায় খাবার পৌঁছে দেন। এর জন্য তাদের জরিমানাও করা হয়। যদিও সেই জরিমানা থেকে তারা মুক্তি পেয়েছেন। শুধু মুক্তি পেয়েছেন বললে ভুল হবে তাদের নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাদের হাতে ব্লিজার্ড হিরোর স্টেট তুলে দিয়েছেন। তবে এই অ্যাওয়ার্ড নিয়েও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। এই নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি তারা বাফেলোতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাদের প্রশ্ন হলো আমরা এতোজন কাজ করলাম, কিন্তু অ্যাওয়ার্ড পেলো মাত্র তিনজন। তবে মানিক মজুমদারের অ্যাওয়ার্ড নিয়ে  বা মোহাম্মদ আলমের অ্যাওয়ার্ড নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। বিতর্ক শুরু হয়েছে মোহাম্মদ ওসমান শিমুলের অ্যাওয়ার্ড নিয়ে। তিনি কাজে অনেক পরে যোগ দিয়েছেন। অথচ তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। জানা গেছে, ওসমান শিমুলের সাথে বাফেলো মেয়রের সম্পর্ক রয়েছে। সেটি তিনি কাজে লাগিয়েছেন এবং নিজে অ্যাওয়ার্ডের মালিক বনে গেলেন। অথচ এটা পাওয়ার কথা ছিলো ফজলুল করিমের বা তালহা বখতের। মজার বিষয় হলো, স্টেট থেকে যে অ্যাওয়ার্ড দেয়া হচ্ছে সেই বিষয়টি ফজলুল করিমসহ অনেকের কাছে গোপন করা হয়েছে। ফজলুল করিমকে ঘুমে রেখেই ওসমান শিমুল অ্যাওয়ার্ড নিয়ে নিলেন? এটা নিয়ে বিতর্কের জন্ম হয়েছে। তারা ক্ষোভ হলে দিলে পুরো টিমকে দেয়া উচিত ছিলো। তাহলে কারো কোনো বক্তব্য থাকতো না। কিন্তু যে পরে যোগ দিয়েছে তাকে কেন দেয়া হলো। এর চেয়ে তো অন্যরা বেশি দায়িত্ব পালন করেছেন, অ্যাওয়ার্ড পেলে তাদের পাওয়া উচিত ছিলো। দুই নম্বরি কেন করলেন ওসমান শিমুল তা নিয়েই সকলের মধ্যে ক্ষোভ। তারা বলেন, রিস্ক নিলাম আমরা, আর অ্যাওয়ার্ড পেলো অন্যজন। কমিউনিটিকে বিভক্ত করার জন্য বা উদ্ধার টিমের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির জন্যই এটা করা হয়েছে।

তালহা বখত তার ফেসবুকে লিখেছেন, বাফেলোর সাম্প্রতিক মারাত্মক ব্লিজার্ডের সময় অনেকেই নিজ উদ্যোগে বিপদে পড়া লোকজনকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে। তার মধ্যে ৪০ জন স্বেচ্ছাসেবী একটা নিঃস্বার্থ রেসকিউ টিম ছিলো। তাদের অপ্রতিরোধ্য সাহায্য, সহযোগিতা ছিলো চোখে পড়ার মতো, কিন্তু এতো কাজ, সেবা সত্ত্বেও, গভর্নর ক্যাথি হোচুর কাছ থেকে শুধু তিনজন কীভাবে সম্মাননা পায়, বাফেলোবাসী জানতে চায়।

এদিকে মানিক মজুমদার প্রবাসী টিভিকে বলেছেন, এই অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তিতে আমি যে কী খুশি হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের সময় আমার চোখে পানি এসে গিয়েছিলো। আমি বলবো, এটা শুধু আমার অর্জন নয়, এটা আমাদের পুরো টিমের অর্জন, বাফেলোবাসীর অর্জন। একজন বাংলাদেশি হিসেবে গর্বিত। ব্লিজার্ড হিরো উপাধি পাওয়া আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া।

মোহাম্মদ আলম বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পরবো না। এই অর্জন সব বাংলাদেশির। আমরা যারা উদ্ধারকাজ করেছি তাদের সবার। কেউ আমাদের দড়ি দিয়েছেন, কেউ আমাদের খাবার দিয়েছেন। আমি এটি পুরো টিমকে উৎসর্গ করলাম। আমরা যে কাজ করেছি, নিউইয়র্ক আমাদের সেই কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা প্রায় ৪০ জনের মতো ছিলাম। কিন্তু কীভাবে জনবে বাছাই করা হলো। এর মধ্যে যাদের নাম না বললেই নয়, যার মধ্যে ফজলুল করিম, তালহা বখত, ইকবাল হোসেনসহ অনেকে।

 

শেয়ার করুন