০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:৫৮:১১ পূর্বাহ্ন


এশিয়া ও বিশ্বকাপে কী সম্ভাবনা বাংলাদেশের
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
এশিয়া ও বিশ্বকাপে কী সম্ভাবনা বাংলাদেশের


সাদা বল ক্রিকেটে বিশেষত ওডিআই ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামর্থ্য, সাম্প্রতিক সাফল্য, দলের অভিজ্ঞতার এবং দুটি টুর্নামেন্ট দক্ষিণ এশিয়ার চেনা পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া বিবেচনা, স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশের ক্রিকেট পূজারী কোটি ভক্ত-সমর্থক। কাজটি অনায়াস লব্ধ না হলেও অর্জনযোগ্য বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হবে। ভারত পাকিস্তানের বৈরী রাজনীতির কারণে টুর্নামেন্টের কিছু খেলা পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হলেও অধিকাংশ খেলা হবে শ্রীলঙ্কায়। ভারতে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি বিশ্বকাপ। বাংলাদেশ ক্রিকেট নানা উত্থান-পতনের চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমানে একটি অবস্থানে উন্নীত  হয়েছে। বরাবরই বাংলাদেশ ৫০ ওভারের সাদা বলের ক্রিকেটে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী। 

এই ফরম্যাটে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং বৈষয়িক টুর্নামেন্টে বিভিন্ন সময়ে হারিয়েছে সব দলকে। ইদানীং টি২০ ক্রিকেটেও সাফল্য আসছে। লাল বলের টেস্ট ক্রিকেটেও উন্নয়নের ধারা সুস্পষ্ট। কিন্তু বৈষয়িক টুর্নামেন্টে অনুর্ধ ১৯ দলের বিশ্বকাপ জয় এবং মেয়েদের এশিয়া কাপ জয় ছাড়া কোনো টুর্নামেন্ট জয় করেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাফল্যে স্বর্ণযুগের প্রজন্মের পঞ্চ পাণ্ডব খ্যাত শাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের এখন গোধূলিলগ্ন। মাশরাফি এখন আর সক্রিয় নয়। জানি না, বর্তমানে ইংল্যান্ডে শুশ্রূষারত অধিনায়ক তামিম সময় মতো ম্যাচ ফিট হয়ে দলে ফিরবে কি না এবং বেশ কিছুদিন দলে উপেক্ষিত মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না। তবে বলা যায়, সবাই থাকলে এবারের এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপ হবে পূর্ণ শক্তির বাংলাদেশের কিছু অর্জনের অন্যতম সেরা সুযোগ।

বিশ্ব কাপ প্রসঙ্গে এখনো যাবো না বিষয়টা হয়ে যায় আগ বাড়িয়ে বলে ফেলা। তবু এশিয়া কাপের মাধ্যমেই বিশ্বকাপের একটা ছায়া দেখা যাবে বাংলাদেশের পারফরমেন্স এটা তো বাস্তব। ফলে দেখা যাক এশিয়া কাপে কি করে বাংলাদেশ-  

এশিয়া কাপ:

মূল প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী ভারত এবং পাকিস্তান। অবশ্য সাম্প্রতিক ফর্ম দেখে বলা যায়, শ্রীলঙ্কা সহজ দল নয়। আফগানিস্তানকে যতদূর পাঠ করা গেছে, বাংলাদেশ শেষ সিরিজের ভুলত্রুটি শুধরে নিলে জয়ী হতে অসুবিধা হবে না। ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় আইসিসি টি২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ কিন্তু লড়াই করেছে। বাংলাদেশের গ্রুপে থাকবে শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তান। গ্রুপ থেকে সুপার ফোরে যেতে অন্তত একটি ম্যাচ জিততে হবে। এবারের আফগানিস্তান বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে পূর্ণশক্তির আফগানিস্তান দলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ কিন্তু ওডিআই সিরিজে জয় পায়নি। আমি মনে করি, প্রথম দুটি ম্যাচে নানা কারণে বাংলাদেশ স্বাভাবিক খেলাটি খেলতে পারেনি। তবে এই সিরিজে কিছু কিছু দুর্বলতা ফুটে উঠেছে। বিশেষত লোয়ার মিডল অর্ডারে অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের অনুপস্থিতি দারুণভাবে অনুভূত হয়েছে। শ্লগ ওভারে দ্রুত রান তোলায় কিছু দুর্বলতা আছে। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার এবং লেগ স্পিনার ঘাটতি আছে। সেগুলো স্বল্প সময়ে মেটানো সম্ভব নয়। আমি নিশ্চিত বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ২০২৩ কোয়ালিফায়িং রাউন্ডে শ্রীলঙ্কা দলের দাপুটে পারফরমেন্স দেখেছে। 

বাংলাদেশ সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে এশিয়া কাপ খেললে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জয় পাওয়া সহজ হবে না। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলার দুই দিন বিরতিতে বাংলাদেশকে কলম্বো থেকে পাকিস্তান উড়ে গিয়ে লাহোর খেলতে হবে আফগান দলের বিরুদ্ধে। চ্যালেঞ্জ থাকবে দ্রুত মানিয়ে নেওয়ার। এরপর গ্রুপ ফোর পর্যায়ে মোকাবিলা করতে হবে পাকিস্তান ভারতকে। বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা সমর্থকদের বাস্তবতার নিরিখে স্বপ্নের সীমানায় থাকতে হবে।

এবার আসি স্কোয়াড নির্বাচনে। অনেক দিন থেকেই মিনহাজুল আবেদীন এবং হাবিবুল বাশারের কাছে শুনছি স্কোয়াড নির্বাচনে ভাবনার কথা। হাতুরা সিংহের ব্যবস্থাপত্রে বেশ কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে। হেড কোচ দীর্ঘ দিন ধরেই সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব সৃষ্টি করে রেখেছেন। সবাই জানে মাশরাফি মোর্তুজা থেকে শুরু করে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ কারো সঙ্গেই তার স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। 

সবচেয়ে ভুল হয়েছে দলের অনেক জয়ের নায়ক অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে দীর্ঘ দিন বিশ্রামের নাম দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা। ওর স্থানে যাদের নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা হলো কোনোটি সফল হয়নি। বৈষয়িক টুর্নামেন্টে চাপের মুখে ভালো খেলার মতো মাহমুদুল্লার অভিজ্ঞ কেউ এখনো দেখি না। সর্বশেষ এশিয়া মেন্স এমেজিং টুর্নামেন্টে শক্তিশালী দল পাঠিয়েও সফল হলো না বাংলাদেশ। আমি শুরুতেই বলবো মাহমুদুল্লাহকে ফিরিয়ে আনা এখন বড় কর্তব্য। এরপর আসবে তামিম প্রসঙ্গ। আমি মনে করি, ১০০ ভাগ ম্যাচ ফিট না হলে তামিম নিজে থেকেই দলে ফেরা সমীচীন হবে না। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে দুটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্তত দুইজন ওপেনিং ব্যাটসম্যান এবং দলনায়ক। যদি তামিম না থাকে আমি সাকিব সম্মত হলে তাকে অধিনায়ক করার সুপারিশ করবো। তামিমের স্থানে সেই ক্ষেত্রে তামিম নম্বর ২ তানজিদ হাসান তামিম এবং মোহাম্মদ নাঈমের সম্ভাবনা থাকবে। দলের স্বার্থে নিজের ব্যাটিং আরো মনসংযোগের জন্য লিটনকে অধিনায়কত্বের চাপ মুক্ত রাখতে পরামর্শ দিচ্ছি। ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে নাজমুল হোসাইন শান্ত লিটনের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করতে পারবে। 

আমি সাকিবকে বৈষয়িক টুর্নামেন্টে ৩ নম্বর পজিশনে খেলানোর পক্ষপাতি। সেই ক্ষেত্রে ৪ এবং ৫ নম্বরে যথাক্রমে তৌহিদ হৃদয় এবং মুশফিকুর রহিম খেলবে। আমি বর্তমান দলে রিয়াদকে ফিরিয়ে এনে ৬ পজিশন দিতে চাই, সেই অবস্থায় শামীম পাটোয়ারী/আফিফ খেলতে পারে ৭ নম্বর, মেহেদী মিরাজ ৮।  ৯, ১০, ১১ তিন  পেসার তাসকিন, এবাদত, মুস্তাফিজ, শরিফুলকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো যাবে। আমি অতিরিক্ত খেলোয়াড় হিসেবে তাইজুল, হাসান মাহমুদ এবং তানজিদ তামিমকে দোলে রাখার যৌক্তিকতার কথা বলবো। বলছি না বাংলাদেশ এশিয়া কাপ আলোড়ন সৃষ্টি করে জিতে নিবে। 

কিন্তু সামর্থ্যরে সবকিছু নিবেদন করে এবং দলীয় সমঝোতা অটুট থাকলে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলে জয়ী হলেও বিস্মিত হবো না। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের পারফরমেন্স বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণ করার ভিত্তি গড়ে দেবে। ওখানে কিন্তু ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, নিউজিলান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তুখোড় দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে হবে। কোথায় কবে কার সঙ্গে খেলা সেই অনুযায়ী লাগসই পরিকল্পনা করতে হবে। তবে একটা কথা বাস্তব সত্য, সেটা মানতেই হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে কিন্তু বিশ্ব জয় করা যায় না। চাই মাঠে পারফেক্ট পারফরমেন্স।

শেয়ার করুন