১৮ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১০:১৪:৩৯ অপরাহ্ন


বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় শঙ্কা
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৩
বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় শঙ্কা


জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, চারজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক, একজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি, এনার্জি পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অনেক প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। তবে অ্যাঙ্কর বুয়েট অনুজ নিজে কম কথা বলে অন্যদের বেশি সময় দিলে ভালো হতো। সবাই জানে আমলা নিয়ন্ত্রিত অদূরদর্শী পরিকল্পনা, বাস্তবায়নে অসঙ্গতি, মূল্যবান জ্বালানি সম্পদ মাটির নিচে রেখে আমদানিকৃত জ্বালানির মতো সোনার হরিণের পিছু ধাওয়া করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা বাংলাদেশের জ্বালানি সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে অ্যাংলো ডাচ কোম্পানি শেল থেকে ৫টি গ্যাসক্ষেত্র- তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, রশিদপুর এবং কৈলাশটিলা মাত্র সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যে অর্জন করার পর, গ্যাসের অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারিত হয়নি। অত্যন্ত সুলভমূল্যে গ্যাসপ্রাপ্তির কারণে দেশজুড়ে অপরিকল্পিত উপায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো জ্বালানি অদক্ষ শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি পৌনঃপুনিকভাবে বেড়েছে গ্যাস চাহিদা।

সেই তুলনায় জলে-স্থলে নানান গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং আবিষ্কারের বাস্তবধর্মী কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। মূল্যবান কয়লা সম্পদ উত্তোলনে সরকারসমূহ পুরোপুরি ব্যর্থ। স্থলভাগে একমাত্র বাপেক্সকে দায়িত্ব দেয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল গ্যাস চাহিদার সঙ্গে সরবরাহের ব্যাপক ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। আবিষ্কৃত ভোলা গ্যাসক্ষেত্রকে রিপ প্রকল্পের আওতায় জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত না করা এবং মায়ানমার থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারত পর্যন্ত ত্রিদেশীয় গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার ব্যর্থতা বাংলাদেশকে গভীর গ্যাস সংকটে ফেলেছে। 

২০০০-২০২২ মাত্র ৩ টিসিএফ নতুন গ্যাস যোগ হয়েছে। অথচ এই সময়ে ১৪ টিসিএফ গ্যাস সঞ্চয় থেকে খরচ হয়ে যাওয়ায় গ্যাস সিস্টেম এখন দেউলিয়া হবার পথে। স্থলে সমস্যা জর্জরিত বাপেক্স ন্যূনতম অনুসন্ধান করেছে। উপকূলভাগ অগভীর থাকায় এলএনজি আমদানি হয়েছে সীমিত। তদুপরি ভূ-রাজনীতির অশুভ প্রভাবে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে আগুন লেগে এলএনজি আমদানি বাংলাদেশের সাধ্যের সীমানা অতিক্রম করেছে। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কয়লা বা তরল পেট্রোলিয়াম আমদানি ক্ষেত্রেও উচ্চমূল্য চ্যালেঞ্জ। 

বলা যায় অদূরদর্শী পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়নে অদক্ষতা আর চুরি, অপচয়ের কারণে বাংলাদেশ জ্বালানি সংকটে। পিএসএমপি ২০১০, ২০১৬ কাগুজে দলীয় পরিণত ছিল। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ নামের ইনডেমনিটি অ্যাক্ট করে ব্যর্থ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এখন দ্রুত নিজস্ব জ্বালানি আহরণ আর উত্তোলন করতে হবে, জ্বালানি ব্যবহারের লাগসই পরিকল্পনা করতে হবে, অপচয়, চুরি নির্মূল করতে হবে। গৃহস্থালি, সিএনজি খাতে এলপিজি, অটোগ্যাস ব্যবহার, বিদ্যুৎ, কয়লা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার বাড়িয়ে মূল্যবান গ্যাসসম্পদ শিল্পে ব্যবহার করতে হবে। ক্যাপটিভ জেনারেশনে গ্যাস ব্যবহার সীমিত করতে হবে। সর্বোপরি জ্বালানি বিদ্যুতের মতো কারিগরিঘন সেক্টরসমূহে সঠিক পেশাদারদের সঠিক স্থানে পদায়ন করতে হবে। ২০২৩, ২০২৪ অনেক কঠিন পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশকে জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নত করতে হবে।

কাজগুলো করতে বাংলাদেশকে তীরহারা ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দিতে হবে।  

শেয়ার করুন