২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৪৮:৬ পূর্বাহ্ন


রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অব্যাহত
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০২-২০২৩
রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অব্যাহত


দেশে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর পক্ষ থেকে মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন জানুয়ারি ২০২৩ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি, ২০২৩ মাসে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, কারা হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন ও হয়রানি বেড়েছে। বলা হয় যে প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতায় হত্যার মত ঘটনা আগের মতই উদ্বেগজনক হারে ঘটে চলেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাধারণ নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন চিন্তা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। 

এ মাসের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো: ২২ জানুয়ারি মগবাজার আদ-দ্বীন হাসপাতালের সামনে থেকে আইনজীবী এবং মানবাধিকারকর্মী আবুল হোসাইন রাজনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়, যা পুলিশ প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করে। পরবর্তী সময়ে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ২৩ জানুয়ারি, দীপ্ত টিভি ও একটি দৈনিক পত্রিকার সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি মানবাধিকারকর্মী রঘুনাথ খাঁ’কে তুলে নেওয়া হয়, যথারীতি তুলে নেয়ার ঘটনা অস্বীকার করা হয় এবং পরে গ্রেফতার দেখানো হয়। এদিকে সীমান্তে হতাহতের ঘটনাও বন্ধ হয়নি। 

আর ক্রমবর্ধমান মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ, ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানায় তারা। 

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু..

জানুয়ারি, ২০২৩ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে দুই জনের মৃত্যু হয়। পুলিশী হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্ক্ষিত ও জনমনে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করে। সাতক্ষীরা আদালত সম্প্রতি এজাহারভুক্ত ছয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে ১১ জানুয়ারি রাতে বৃদ্ধ সোলায়মান সরদার ও তার দুই ভাইকে পুলিশ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকালে পরিবারের পক্ষ থেকে অসুস্থ বৃদ্ধ সোলায়মান সরদারকে (৮০) আটক না করার জন্য বার বার অনুরোধ করা হলেও পুলিশ শোনেনি। আদালতের গারদখানায় সোলায়মান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

অন্যদিকে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা পুলিশ চারজনকে আটক করে। ১৫ জানুয়ারি,  তিনজনকে ছেড়ে দিলেও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে থানায় আটকে রাখে। স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী ১৭ জানুয়ারি, মঙ্গলবার রাতে বাসন থানার উপপরিদর্শক নুরুল ইসলাম ও মাহবুবসহ একদল পুলিশ ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নিয়ে আসে। পরে রাতে পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, রবিউল মারা গেছেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশ কর্তৃপক্ষের দাবি, ১৭ জানুয়ারি, রাতে অনলাইন জুয়া খেলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে বাসন থানা-পুলিশ একজনকে আটক করে। পরে রাতে তার দুই অভিভাবকের জিম্মায় ওই ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। থানা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে অজ্ঞাত একটি ট্রাক তাদের চাপা দেয়।  এ ঘটনা সম্পর্কে  থানা পুলিশের ব্যাখ্যা  পরিবার  ও স্থানীয়দের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রতীয়মান হয়নি।   

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ-নিখোঁজ

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন প্রতিবেদনে বলা হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণের নামে যে অপতৎপরতা চলছে তা অন্যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লংঘন ও বিচারহীনতার ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের চিত্র। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং নাগরিক জীবনে চরম উৎকন্ঠার সৃষ্টি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত আস্থাহীনতা সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার ৫টি ও ১টি নিখোঁজের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতায় হতাহত, মামলা ..

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে বিরোধী দলীয় সভা সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এমনসব কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়েছে- যাতে করে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সভাস্থলে যাওয়া ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হয়।

সংবাদমাধ্যমে পাওয়া এবং এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি, ২০২৩ মাসে বিভিন্ন জেলায় সভা সমাবেশে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী সহিংসতার ৩৭ টি ঘটনায় হতাহতের শিকার হয়েছেন ২২৪ জন। এদের মধ্যে ৩ জন নিহত, ২ জন নিখোঁজ ও ২২০ জন আহত হয়েছেন। নিহত ৩ জনই ক্ষমতাসিন দলের কর্মী, ২ জন অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ১ জনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার

জানুয়ারি, ২০২৩ মাসের অত্যন্ত উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা। দুই-একটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। যা অত্যন্ত ভয়ংকর, অনাকাঙ্খিত। রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কাজেই এসব ঘটনার জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। সরকারকেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ বিষয়ে দৃশ্যত সম্পূর্ণ নির্বিকার।

কারা হেফাজতে মৃত্যু 

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি ২০২৩ মাসে কারা হেফাজতে মোট ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১ জন। কারা হেফাজতে মৃতদের মধ্যে ৭ জন কয়েদি ও ১৩ জন হাজতি রয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৭ জন বৃদ্ধ ও বাকি ১৩ জন মধ্যবয়সী ও যুবক, যাদের বেশিরভাগই হাজতী। কারাগারে অপর্যাপ্ত চিকিৎসার কারণে অসুস্থ অধিকাংশ বন্দিকে কারাগারের বাইরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এমএসএফ মনে করে, কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দীরা মানসিক ও শারীরিক সমস্যা নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা গুরুত্বপূর্ণ।

নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে ২৭৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে যা গত মাসের তুলনায় ৪১টি কম। এ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ৩৯টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৩টি, ধর্ষণ ও হত্যা ৫টি। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩জন প্রতিবন্ধী শিশু ও কিশোরী।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার সামিল। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকেরা নানাভাবে হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যা ছিল উদ্বেগজনক। এসব ঘটনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় ২৯ জন সাংবাদিক নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জন সাংবাদিক সংবাদ সংগ্রহকালে বাধাগ্রস্থ হয়ে আহত হন, প্রকাশিত সংবাদের জেরে  ৪ জনকে হত্যা ও নানাবিধ হুমকি প্রদান করা হয়েছে, ৭ জনকে হয়রানি ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে, ২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা এবং ১ জন সাংবাদিককে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী, সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ কর্মীর ছুরিকাঘাতে সাংবাদিক আশিকুর রহমান আশিক নিহত হন এবং ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সগ্রেসের বার্তা পরামর্শক বিপ্লব জামান ৭ দিন নিখোঁজ থাকার পর মিরপুরে নিজের বাসায় মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার/অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। কর্তৃপক্ষ বারবার এ আইনের সংশোধনের কথা বললেও  সম্প্রতি আইন মন্ত্রী জানিয়েছে, বর্তমান বাস্তবতায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি , ২০২৩ মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৭টি মামলায় ১৯ জনকে আসামি করা হয়, যার মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৪ জন ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা যাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে মামলা করেছেন এস আলম গ্রুপের উপব্যবস্থাপক মো. আবদুল কুদ্দুছ এবং ৩ জন যুবক গ্রেফতার হয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার অভিযোগে। অপরদিকে ২ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি, বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনালে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার রায়হান ফেরদৌসসহ অপর একজন স্থানীয় সাংবাদিক ও ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার কাউন্সিলর মো. শহিদুল ইসলাম টিটু ও আরো একজন মোট ৪ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়াও তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের অভিযোগে এক প্রবাসীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিকের মানহানির অভিযোগে চট্টগ্রামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এতে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নামে গঠিত ট্রাস্টের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদ, সাবেক সদস্য শামসু জামান, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও কাজী রোবায়েত হাসানকে আসামি করা হয়েছে।

এমএসএফ মনে করে, বাংলাদেশ দন্ডবিধি আইনে মামলা না করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করার মধ্য দিয়ে এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের চিত্রটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে যা হয়রানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য। এ আইনের যথেচ্ছ অপব্যাবহারের মাধ্যমে মানুষকে তাঁর মতামত প্রকাশে বাধাগ্রস্ত করা ও ভয় দেখানো এবং সকলের মুখ বন্ধ করে রাখার একটি ভয়ংকর তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

সীমান্তে হত্যা ও পরিস্থিতি

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সীমান্তে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না বরং ঘটেই চলেছে। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী এ মাসে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ২ জন নিহত, ২ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত ও ১ জন নির্যাতনে গুরুতর আহত হন। অপর ১ জন খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হন। 

সংখ্যালঘু নির্যাতন

গণমাধ্যমসূত্রে পাওয়া ও এমএসএফ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ মাসে  বিভিন্ন পর্যায়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ৮টি ঘটনা ঘটেছে। জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় বান্দরবানের লামা উপজেলার ম্রোপাড়ায় রাবার ইন্ডাস্ট্রির লোকজন হামলা চালিয়ে লুটপাট, ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন লোক আহত হন। এছাড়া ঝিনাইদহের ৬টি বাঁওড় রক্ষায় হালদার সম্প্রদায়ের মৎস্যজীবীরা “হয় বিষ দ্যান, না হলে বাঁওড়ের মালিকানা দ্যান”- এই শ্লোগানকে পুঁজি করে প্রতিদিন তারা বাঁওড় পাড়ে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন বলুহর বাঁওড়ের মালিকানা হারালে তাঁরা স্বেচ্ছায় আত্মাহুতির মতো কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় গোপালগঞ্জের ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়কে অন্তত ৪টি বাড়ি ও ৮টি দোকান ভাংচুর করেছে ধর্মান্ধরা এবং ৫টি পরিবার ভয়ের মধ্যে রয়েছে। এছাড়া শরীয়তপুরে মন্দিরের দানবাক্স ভেঙে টাকা চুরি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ও নেত্রকোনায় সরস্বতী প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

শেয়ার করুন