০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৩৫:০৯ অপরাহ্ন


বীর প্রসবা চট্টলার সাগরিকা এখন ক্রিকেটের বিজয় অঙ্গন
প্রতিক্ষায় শেরেবাংলার শেষ দুই টি-২০
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৩-২০২৩
প্রতিক্ষায় শেরেবাংলার শেষ দুই টি-২০


ক্রিকেট জননী ইংল্যান্ডের বিশ্বসেরা ক্রিকেট দলকে কাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৬ উইকেটের বিশাল ব্যাবধানে হারিয়েছে তারুণ্যে তেজোদীপ্ত বাংলাদেশ। দুই দলের দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজ প্রথম মোকাবিলায় এই জয় অর্জনের এক নতুন মাইল ফলক। ক্রিকেট বিশ্ব বিস্ময়ে বিমূঢ়। সাদা বল ক্রিকেটের দুই ফরমেট অডিআই এবং টি ২০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন প্রতাপশালী ইংল্যান্ডকে পরাপর দুই ম্যাচে অনায়েসে হারিয়ে টীম টাইগার্স উত্তাল মার্চ মাসে নব গৌরবে গৌরবান্বিত করেছে বাংলাদেশকে। তিনটি ওডিআই আর তিনটি টি ২০ ম্যাচের দুটি সিরিজ খেলছে এখন ২০১৯ আইসিসি বিশ্বকাপ আর ২০২২ টি ২০ বিশ্বকাপ জয়ী ইংল্যান্ড।


ঘরের মাঠে ওডিআই ফরম্যাটে অজেয় বাংলাদেশ নিজেদের অভয় অরণ্য শেরে বাংলায় পর পর দুটি ম্যাচে হেরে ধবল ধোলাই হবার কোনঠাসা অবস্থনে। এমনি সময় চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দারুন ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বিশ্ব ক্রিকেটের সব ফরম্যাটে সেরা তুখোড় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান অনুপ্রাণিত বাংলাদেশ। সহজ লব্দ ৫০ রানের জয়ে ধবল ধোলাই এড়ানো থেকে শুরু ঘুরে দাঁড়ানোর মিশন। এর পর কিছু নবীন, কিছু প্রত্যাগত খেলোয়াড় নিয়ে নতুন বাংলাদেশ আবারো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি টি ২০ সিরিজ। আর প্রথম ম্যাচে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের দুর্দান্ত খেলে ৬ উইকেটে জয়। পরিস্থিতি আর প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অসাধ্য সাধন। মুকুট খোলা অভিনন্দন টীম বাংলাদেশকে। 

এমনিতেই টি ২০ ফরম্যাটে বাংলাদেশ হালে পানি পাচ্ছিলো না। কেন জানি ধাতস্থ হতে সংশয় সন্দেহ। এবারের বিপিএল আসরের কিছু প্রমাণিত সফল তরুণ আর কয়েকজন ভালো খেলা প্রাক্তনদের দিয়ে সাকিব নেতৃত্বে নতুন দল নির্বাচন করে তুলে দেয়া হলো প্রত্যাগত হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের তত্ত্বাবধানে। বলবো না এক ম্যাচেই সব কিছু পাল্টে গেছে। কিন্তু কট্টর পেশাদার তুখোড় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ওদের উড়ন্ত সূচনার পর যেভাবে বাংলাদেশ ম্যাচে ফিরে আসে আর যেভাবে ভয় ডরহীন ব্যাটিং করে সহজ জয় তুলে নেয়, তা থেকে আশা বাদী হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। হয়তো একটি জয় সব কিছু পাল্টে দিবে না। কিন্তু সূচনা হলো নব যাত্রার। 

এ ম্যাচে অভিষেক হলো তেজোদীপ্ত তরুণ তৌহিদ হৃদয়ের ,সঙ্গী বিরতির পর রনি তালুকদার। দুই জন বিপিএল ২০২৩ ভালো খেলে যোগ্যতা বলেই দলভুক্ত। শঙ্কা ছিল তামিম, মুশফিক ,রিয়াদের মতো প্রতিষ্ঠিত অভিজ্ঞদের অবর্তমানে অপেক্ষাকৃত নবীন দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে লড়াই করবে তো। টস জয়ী হয়ে সাকিব ওদের ব্যাটিং করতে দিলো। শুরুতেই নাসুমের একই ওভারে ও নিজে সল্টের এবং সাকিব বাটলারের ক্যাচ ফস্কালো। এর পর তুখোড় ব্যাটিং করে ওপেনার যুগল ১০ ওভারে ৮০ করে বড়ো সংগ্রহের ইঙ্গিত দিচ্ছিলো। মাথা ঠান্ডা রেখে নাসুম, সাকিব সল্ট, মালানকে ফেরালেও বাটলার বেন ডাকেটকে সঙ্গী করে ১৬ ওভারে ১৩৫/২ উইকেটে পৌঁছানোর পর মুস্তাফিজ আর হাসান মাসুদ মারলো  ছোবল। একে একে ডাকেট ,বাটলার ,কুরান ঝরে পড়লো। তাসকিন ফেরালো ওকসকে। উড়তে থাকা ইংল্যান্ড ১৫৬/৬ বোতলবন্দি হয়ে গেলো।

বিশ্বাসের পালে লাগলো হাওয়া।  বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই রনি তালুকদার বুঝিয়ে দিলো বাংলাদেশ পিছু হটছে না।  ইংল্যান্ড রনি আর লিটনকে ফেরানোর পর অভিষিক্ত তরুণ আর ইদানিং সেরা ফর্মে থাকা শান্ত রানের বন্যা বইয়ে দিলো। হৃদয়ের আত্মবিশ্বাস আর শান্তর অশান্ত ব্যাটিং ইংরেজ সিংহকে হকচকিয়ে দিয়েছিলো কাল। বিশেষ করে মার্ক উডের মতো বিশ্বসেরা বোলারের ওভারে শান্তর দৃষ্টিনন্দন চারটি বাউন্ডারি ছিল চোখ দেখার মতো। ওদের যোগাযোগে তৃতীয় উইকেটে দ্রুত সংগ্রহীত ৬৫ রান ম্যাচের রসায়ন পাল্টে দিয়েছিলো। অভিষেকে হৃদয়ের হৃদয়গ্রাহী ২৪ রান শান্তর ৩০ বলের ৫১ রান থেকে কম ছিল না। জয়ের সুবাতাস পেয়ে অধিনায়ক সাকিব ২৪ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করে ৬ উইকেটের বিজয় এনে দিলো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড দেখলো আর অভিনন্দিত করলো বিজয়ী দলকে। 

ম্যাচ জয়ের সুবাদে ১-০ এগিয়ে বাংলাদেশ। বাকি দুটি ম্যাচ টীম টাইগার্সদের অভয় অরণ্য শেরে বাংলায়। ইতিহাস দেখে সব সময় সব কিছু হয় না। তবু স্মরণ করছি এই মাঠেই কিন্তু টি ২০ সিরিজ জয়ী হয়েছে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ফলে অপেক্ষা এখন দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচের। বাংলাদেশের প্রত্যাশা ওই ম্যাচে জিতেই সিরিজ জয়ের উৎসবটা করবে বাংলাদেশ। ওই ম্যাচ না হলেও শেষটাতে জিতলেও চলবে। অপেক্ষা এখন ওই সাফল্যের। 


শেয়ার করুন