১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৯:৩৭:৬ অপরাহ্ন


লাল হরফে লেখা দিন
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
লাল হরফে লেখা দিন সিরিজ জয়ী বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম


১২ মার্চ ২০২৩। ১৪ মার্চ ২০২৩। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসে লাল হরফে লেখা দিন হয়ে স্মরণীয় হয়ে গেলো। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড প্রথম বারের মত দ্বিপাক্ষিক টি ২০ সিরিজ খেলতে এসে পর পর ম্যাচ হেরে সিরিজ খুইয়েছে। এরপর বাংলাওয়াশও হয়েছে। ১২ মার্চ টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। আর ১৪ মার্চ দুর্দান্ত ক্রিকেট উপহার দিয়ে সেই ইংল্যান্ডকে আবারও হারিয়ে এবার বাংলাওয়াশ করে দেয় সাকিব, শান্ত, মিরাজ ও লিটনরা। 

ভাগ্যের অকৃপণ আনুগত্য পাচ্ছে টিম টাইগার্স। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন্স ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টানা তিন  ম্যাচ  জয়ে সিরিজ রঙ্গীন করে ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মত দলকে হোয়াইটওয়াশ এটা বড় প্রাপ্তি। আত্মতৃপ্তির।  শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়ে ওই গৌরব অর্জন করে তারা। 

সিরিজ বাংলাদেশ ৩ ইংল্যান্ড ০। কেউ কস্মিনকালেও ভাবেনি বাংলাদেশ তার দুর্বলতম টি ২০ ফরম্যাটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে এভাবে নাজেহাল করে ছেড়ে দিবে। নবীন- প্রবীণের সমাহার বাংলাদেশ দলকে অনুপ্রাণিত উজ্জীবিত। চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ৫০ রানে পরাজয়ের পর কাল ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলায় ইংল্যান্ডের জন্য ছিল বাঁচা মরার ম্যাচ। উইকেটে পেস, বাউন্স, টার্ন সবই চির বাড়ন্ত। ব্যাটিং করতে নামা সফরকারীরা জয়ের নেশায় মত্ত এক দূরন্ত বাংলাদেশ বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে কিছুই করতে পারলো না। তাসকিন, মুস্তাফিজ, মাহমুদ হাসান গতি আর মুভমেন্ট দিয়ে হকচকিয়ে দিলো। দ্বিতীয় ম্যাচে দলে ফেরা মেহেদী মিরাজের ঘূর্ণি বলে দিশেহারা ইংরেজ সিংহ। মাঠে বাংলাদেশ ফিল্ডাররা যেন ক্ষুধার্ত বাঘ। সল্ট, মালান, মঈন, বাটলার হালে পানি পেলো না। কিছুটা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছিল বেন ডাকেট। সর্বসাকুল্যে রান হলো ১১৭। এমনকি মিরপুর উইকেটে গড় রান থেকেও কম। মেহেদি চার ওভারে ১৩ রান দিয়ে একই উইকেট নিলেন চার চারটি। ইংল্যান্ডের ১১৭ রানের ইনিংসে উল্লেখ করার মতো বেন ডাকেট ২৫ আর ফিল সল্ট ২৫। বাংলাদেশের হয়ে উইকেট রক্ষক লিটন দাসের দুটি স্ট্যাম্পিং, শান্তর ক্যাচ ছিল দর্শনীয়। মাহমুদ হাসান লক্ষ্যভেদী ইয়র্কার ছুঁড়ে উড়িয়ে দিয়েছিলো ইংরেজ অধিনায়ক জস বাটলারের উইকেট। 

কঠিন উইকেটে ইতিহাস রচনার দাঁড়প্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ ভড়কে যায়নি তুখোড় ইংল্যান্ড বোলিং আক্রমণের মুখে। তবে পজিটিভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে শুরু করেও সহসা ফিরে যায় লিটন আর রনি। অপর প্রান্তে অটল অচল হিমাদ্রির মতো দাঁড়িয়ে শান্ত। সঙ্গী নবীন হৃদয়ের যোগাযোগে তৃতীয় উইকেটে যোগ হয় মূল্যবান ২৯ রান। স্বল্প স্কোরের ম্যাচে অপর্যাপ্ত নয়। হৃদয় ফিরে যাবার পর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তনে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয় সাকিব। নিজেকে আড়ালে রেখে বাম হাতি স্পিনার মঈন আলী আর লেগ স্পিনার আদিল রশিদের সামনে পাঠানো হলো মেহেদী মিরাজকে। শান্ত-মিরাজের উজ্জীবিত ৪৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিলো।  মিরাজ ব্যর্থ হলে হয়তো নানা কথা বলা হতো। কিন্তু ১৬ বলে দুই বিশাল ছক্কায় করা মেহেদির ২০ রান জানিয়ে দিলো জয় ছাড়া আর কোনো পরিণতি নেই ম্যাচটির। মেহেদি ফিরে যাবার পর সাকিব, আফিফের দ্রুত পতন কিছুটা আকর্ষণ এনেছিল ম্যাচে। মরিয়া হয়ে বিদ্যুৎ গতিতে বল ছুড়ছিলো জোফরা আর্চার।  কিন্তু অবিচল আস্থার প্রতীক হয়ে ওঠা নাজমুল হোসেন শান্তকে (৪৬*) টলানো যায়নি। তাসকিন এসে দুটি সাহসী স্ট্রোকস উপহার দিলে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গ্যালারিতে রুদ্র মাতম তুলে। তৃতীয় বা শেষ টি-২০ ম্যাচে বাংলাদেশের হারানোর ছিল না কিছুই। তবুও প্রেস্টিজিয়াস ওই ম্যাচেও দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে সংগ্রহ করেছিল ১৫৮ রান দুই উইকেটে। যার মধ্যে সেই শান্ত ও লিটন কুমারের অসাধারণ ব্যাটিং প্রশংসা কুড়িয়েছে। লিটন ৫৭ বলে করেন ৭৩ রান। যার মধ্যে একটি ছক্কা ও ১০টি রয়েছে চারের মার। এছাড়া শান্ত অপরাজিত ছিলেন এ ম্যাচেও। তিনি করেন ৩৬ বলে ৪৭ রান। 

এরপর ব্যাটিং করতে নামা ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানরা স্বভাবসুলভ খেলতে পারেনি। তবু দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করেন দুই টপ অর্ডার ডেভিড মালান ও জস বাটলার। মালান করেন ৫৩ বাটলার ৪০। কিন্তু এ রান যথেষ্ট ছিল না। ডাকেট ও মঈন আলীকে তাসকিন তার গতিতে পরাস্ত করলে ইংল্যান্ড বিপাকে পড়ে। অধিনায়ক সাকিব বিষয়টা বুঝতে পেরে বোলিংটা সেভাবেই সাজান। যার ফাঁক ফোকর কাটিয়ে আর বের হওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন পরে ২৭ রান। শেষ পর্যন্ত ইংলিশরা ৬ উইকেটে ১৪২ রানে যায় গুটিয়ে। আর বাংলাদেশ তুলে নেয় প্রেস্টিজিয়াস এক জয়। 

আসলে যেন এক জাদুমন্ত্রের ছোয়ায় পাল্টে গেছে বাংলাদেশ। যা কিছু ছুঁইছেন সাকিব - হাতুরাসিংহে সোনা হয়ে যাচ্ছে। এই দল যখন জিততে শিখেছে আকাশ এখন ওদের সীমানা। তরুণ দলটিকে নিবিড় যত্ন নেয়া হলে ওরা দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে। নাজমুল শান্ত এখন সব ফরম্যাটে আস্থার প্রতীক। মেহেদী মিরাজ আবির্ভুত হচ্ছে ম্যাচ জয়ী চৌকষ খেলোয়াড় হয়ে। তাসকিন, হাসান মাহমুদ এখন নতুন বলে বিরাট ভরসা। অভিজ্ঞ সাকিব সামনে থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার মর্ম বুঝতে শুরু করায় এখন পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ।

শেয়ার করুন