২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৩:১৯:৪০ অপরাহ্ন


রাজনীতির মাঠে শীতল পরশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
রাজনীতির মাঠে শীতল পরশ


বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ কিছুটা স্তিমিত! কিছুদিন আগেও যে একটা গরম অবস্থা বিরাজ করছিল বিশেষ করে ১০ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে সে উত্তাপটা এর পরও ছিল। কিন্তু আপাতত ঐ রকম কোনো পরিস্থিতি নেই। বিএনপি হালকা কিছু প্রোগ্রাম দিয়ে এগোচ্ছে, কিন্তু সেগুলো শুধু কর্মীদের গা গরমের। এমন আন্দোলন কেন এ মাত্রার চারগুণেও সরকার পতনের আন্দোলন যোগ্য নয়, এটা সবারই জানা! বিশেষ করে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসের দিকে তাকালে এটাই স্পষ্ট। যেমনটা বিএনপির পতনের আন্দোলনটা শেষ পর্যন্ত হয়েছিল লগি-বৈঠার। এর পর অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে তোলপাড় করে। ঐ সরকার যে নির্বাচন দেয় সেটা ছিল নিরুত্তাপ। যে ভোটে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এর পর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন। যার পূর্বে তেমন বড় কোনো আন্দোলন জমাতেই পারেনি বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সবকিছুই ট্যাকল করে ঐ দুই বারও বিপুল জয় নিয়ে ক্ষমতায়।

২০২৩ সালের নির্বাচন নিয়ে কথা। এটা নিয়ে অবশ্য বিএনপি ও তাদের সমমনাদের পাশাপাশি বিদেশিদের একটা দৌড়ঝাঁপ ছিল বেশ কিছুদিন। কিন্তু আপাতত সে ঝামেলা আর সহ্য করতে হচ্ছে না ক্ষমতাসীনদের। বিএনপিও নেই কোনো বড় কর্মসূচিতে। বিএনপি মূলত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চোখ রেখেই এগোচ্ছে এখনো। 

এদিকে নির্বাচনের তেমন বেশি সময় নেই। ২০২২-এর শেষ মুহূর্তে বা ২০২৩-এর শুরুতেই নির্বাচন। কিন্তু এখনো ইসি চূড়ান্ত করতে পারেনি কত পার্সেন্ট আসনে ইভিএমে ভোট হবে। একবার সরকারের তরফ থেকেই বলা হয়েছিল, সব ভোটই হবে ইভিএমে। কিন্তু সেটা থেকে সরে এসেছে তারা অব্যাহত সমালোচনা ও সঙ্গে আর্থিক দৈন্যতার কারণে। 

তবে বিএনপি এগুলোর ধার ধারছে না। স্পষ্ট করে তারা বলে দিয়েছে এ সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশ নেবে না। নির্বাচন কমিশন থাকলেও সরকারে আওয়ামী লীগ। ফলে সরকার যা বলবে নির্বাচন কমিশনও সে কথাই শুনবে এটাই তাদের যুক্তি।

ক্ষমতাসীনরা অবশ্য এগুলো শুনতে নারাজ। বলছে সংবিধান অনুসারেই হবে নির্বাচন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলে আসছিল বাংলাদেশে হতে হবে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন, যা মিলে যায় বিএনপির দাবির সঙ্গে। এতে হালে বেশ পানি পেয়েছিল বিএনপি ও তাদের সমমনারা। কিন্তু বিদেশিদের অনেক দৌড়ঝাঁপের পর আপাতত কিছুটা নীরবে তারা। বিএনপিও মাঠে নিশ্চুপ। কিছু কর্মসূচি থাকলেও সেটাতে নেই কোনো দাবি আদায়ের কঠোরতা। তবে বাকযুদ্ধটা চলছে মোটামুটি। 

বিএনপি অবশ্য অভিযোগ করছে, ক্ষমতাসীনরা পুরোনো রূপে ফিরেছে বলে। তারা একের পর এক বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। মির্জা ফখরুল বলেছেন, কোনো ঘটনায় কখনো হাজারখানেক আসামিও করা হয়। ধরে এনে দেয়া হয় বিভিন্ন মামলাও। এর সঙ্গে চলে গ্রেফতার বাণিজ্য। বিএনপি নেতাকর্মীরা বাড়ি থাকতে পারছে না ইত্যাদি। এছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ, ড. মোশারর হোসেন, আমানউল্লাহ আমান প্রমুখরা বক্তব্য দিয়ে চলছেন। পাল্টা জবাব দেন ওবায়দুল কাদের, ড. হাছান মাহমুদ প্রমুখ। চলছে এভাবেই।  

এদিকে চলে এসেছে পবিত্র মাহে রমজান। পবিত্র এ মাসে আন্দোলন সংগ্রামের নজির নেই বললেই চলে। এর পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। এর পর সারা দেশে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। মাসখানেক ওটা চলার পর শুরু এইচএসসি পরীক্ষাও। এ দুই পরীক্ষার সময়ও আন্দোলন-সংগ্রাম তেমন একটা হয় না। পরীক্ষার্থীরা যেন নির্বিঘ্নে তাদের পরীক্ষা দিতে পারেন। এর পর কিছু সময় গ্যাপ দিয়ে আবার নভেম্বরে সারা দেশের স্কুলসমূহের পরীক্ষা। 

ফলে নির্বাচনের আগে বিএনপি বড় কোনো আন্দোলন করে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করাবে বা সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে, আপাতত সে লক্ষণ নেই। ইতিমধ্যে বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে একটা হতাশা ভাবও চলে এসেছে। বলছেন, তারা আবারও একটা একতরফা নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। আবারও ক্ষমতাসীন সরকারের পাঁচ বছর হজম করতে হবে! বিএনপির এমন কোনে ক্যারিশমা নেই যে এ ছক থেকে ক্ষমতাসীনদের সরাতে বাধ্য করতে পারে। 

তবে হ্যাঁ, এ মুহূর্তে সরকারের সামনে বিএনপি নয়, বড় চ্যালেঞ্জ উন্নয়ন প্রকল্পগুলো চালু রেখে এগিয়ে যাওয়া ও বিভিন্ন প্রকল্পে নেয়া ঋণ এর কিস্তি পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ। কারণ বিশ্ব মন্দায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্সটাও আগের মতো আসছে না। আর্থিক মন্দায় শিল্পকলকারখানাগুলোও বেশ চাপে। যাতে এক্সপোর্ট হিমিশিম খাচ্ছে। এতে অর্থনীতির ওপর একটা ভালো চাপ বিরাজ করছে। 

তবে এটাও ঠিক, দেশের রাজনীতিতে জ্বালাও-পোড়াও না থাকলে, উথাল-পাতাল না হলে অর্থনীতির ঐ সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও করা সম্ভব। অবশ্য সেটা পরের কথা। আপাতত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটাই মুখ্য। বিএনপি মাঠের আন্দোলনের পাশাপাশি বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। দেশে গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফেরানোর বক্তব্য নিয়ে ঐ যোগাযোগ। 

সব মিলিয়ে ঈদের পর দুই পরীক্ষা শেষের পর কী হবে সেটা দেখার অপেক্ষা এখন সবার। তবে এ পরিস্থিতি অবলোকন করতে রমজান মাসটার অপেক্ষাও তারা করছেন। কী হতে পারে রোজার পর, সেটা কেউ আগাম বলতেও পারছে না। তবে সরকারি দলের টিটকারীটা ঠিকই হজম করতে হবে বিএনপিকে। যে সব সময় তো রোজার পর বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচির কথা বলে আসছেন। কিছুই হয়নি। এবারও কী সেই পুরোনো রোজার পর বৃহত্তর আন্দোলন হবে এমন কিছু একটা বলবেন?

শেয়ার করুন