১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ৬:৪১:১০ অপরাহ্ন


সরকারি হাসপাতালে
চিকিৎকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের সিদ্ধান্ত ‘জনগনের কোনো উপকারে আসবে না- খন্দকার মোশাররফ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৩-২০২৩
চিকিৎকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের সিদ্ধান্ত ‘জনগনের কোনো উপকারে আসবে না- খন্দকার মোশাররফ


সরকারি হাসপাতালে চিকিতসকদের প্রাইভেট প্রাকটিসের সিদ্ধান্ত ‘জনগনের কোনো উপকারে আসবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,            ‘‘ আপনারা দেখেছেন একটা সার্কুলার দিয়েছে আগামী ৩০ মার্চ থেকে নাকী সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা সেই হাসপাতালে বসে বিকাল তিনটার পর থেকে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করবেন। দেখেন..এখানেও দলীয়করণ, দলীয় ডাক্তারদের অতিরিক্ত সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য এই ধরনের একটি ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমি মনে করি, এটা রোগীদের জন্য কোনো উপকারে আসবে না, রোগীদের জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না।”


 এটা হচ্ছে এই সরকারের যারা সমর্থন করে, এদেশের একটি গোষ্ঠির চিকিতসকদের পকেট ভারী করার জন্য এই ধরনের একটি ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে সাধারণভাবে এই সরকারি হাসপাতালগুলোতে.. এমনিতেই সাধারণ মানুষ চিকিতসা পায় না, এখন কিন্তু তাও পাওয়া যাবে না।”

বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী বলেন, ‘‘ যেসকল হাসপাতালে এটা(প্রাইভেট প্রাকটিস) হবে দেখা যাবে যে চিকিতসার জন্য একজন রোগী ১০ টাকা টিকেট কেটে এসেছেন দেখবেন যে, ওই ডাক্তার উপস্থিত নাই। ওই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটারে ব্যস্ত আছে, ওই চিকিতসক ওয়ার্ডে ব্যস্ত আছেন। বলা হবে যে, বিকাল তিনটার পরে আসেন। তিনটা পরে গেলে প্রাইভেট ফি দিয়ে ওই ডাক্তারকে ওই রোগী দেখাতে পারবেন। অর্থাত আজকে সমাজে যে পচন সেই উপর থেকে নিচে পর্যন্ত তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।”


 


খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আজকে দেশ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এটা এখন দুষিত বাতাস হয়ে গেছে। এই দুর্নীতি কেনো? আওয়ামী লীগের সেই গোষ্ঠি তাদেরকে ধনী থেকে ধনী বানানোর জন্য দুর্নীতির বিস্তার হচ্ছে। এজন্য গবেষণায় দেখা যায়, ধনী-গরীবের যে বৈষম্যের যে হার তা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি। এই অবস্থাটা আজকে ব্যবসায়ী গোষ্ঠি সুযোগ নিয়েছে, প্রশাসনের লোকেরা সুযোগ নিয়েছে, পুলিশের লোকেরা সুযোগ নিয়েছে। এখন কে যেন বুদ্ধি দিয়েছে সরকারকে আমাদের ডাক্তাররা কেনো সুযোগ নেবে না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত ডাক্তারদের অতিরিক্ত সুযোগ করে দেয়ার জন্য এই প্রাইভেট প্রাকটিসের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এতে জনগনের কোনো উপকার হবে না।”


 


স্বাস্থ্য খাতে বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারের অদক্ষতা ও অযোগ্যতাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘‘ এই খাতের বিপর্যয়ের জন্য সরকারই দায়ী। এই ব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে ধবংস করে ফেলা হয়েছে। কেনো? অন্যতম দলীয়করণের কারণে। দলীয়করণ করেই ওরা ক্ষান্ত হয়নি। যোগ্য, দক্ষ চিকিতসকরা তাদের নিজের জায়গায় স্থান নেই। তাদেরকে এমন জায়গায় পোষ্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে যে, সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই। যাদের তেমন কোনো দক্ষতা নেই, শুধুমাত্র একটি পরিচয় কোনো কালে বহন করতো না, এখন করে। সেজন্য সেসব চিকিতসককে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একদম সেই সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে তৃণমূলে উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত আজকে শুধু মাত্র দলীয় করণের কারণে সব কিছু বিপর্যস্ত।”


 বিএনপির চিকিতসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার ৫২ বছর ও বিপর্যস্ত স্বাস্থ্য সেবা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।


খন্দকার মোশাররফ দেশের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘‘আজকে জনগনের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তারা মনে করে এই সরকার কোনো কিছুই ঠিক করতে পারবে না, মেরামত করতে পারবে না। গণতন্ত্র যারা হত্যা করেছে তারা গণতন্ত্র দিতে পারে না, পুনরুদ্ধার করতে পারে না।অর্থনীতি যারা হত্যা করেছে তারা অর্থনীতি মেরামত করতে পারবে না, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় যারা বিপর্য্য় সৃষ্টি করেছে তারা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সেইভাবে নতুন করে সাজাতে পারবে না। অতএব তাদের( বর্তমান সরকার) যত দ্রুত বিদায় করা যায় তত জাতি ও দেশের জন্য কল্যাণকর। তাই পেশাজীবীরা যারা এখানে আছে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে যত দ্রুত এই সরকারকে সরিয়ে দেয়া যায় সেজন্য আপনারা সক্রিয় হবে, ঐক্যবদ্ধ হবে, গণঅভ্যুত্থানে জন্য প্রস্তুতি নেবেন-এটাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে।”


 


ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের কাদের গনি চৌধুরী, শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশসের এম এ হানিফ, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী জাহানারা সিদ্দিকী, ফিজিও থেরাপিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাহতাব উদ্দিন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিপ্লব-উজ-জামান বিপ্লব, ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. আবদুস সেলিম, মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, জহিরুল ইসলাম শাকিল, শহিদ হাসান, সিরাজুল ইসলাম, পারভেজ রেজা কানন, শহিদুল হাসান, আদনান হাসান মাসুদ, সায়ীদ মেহবুব উল কাদির প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।


 


শেয়ার করুন