১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০৮:৫৬:২৬ অপরাহ্ন


গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি বাংলাদেশে কনস্যুলেটে গণহত্যা দিবসে দোয়া


দেশের ন্যায় প্রবাসেও যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালন করা হয়। এই উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গণহত্যা দিবসে ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘে নিযুক্ত স্থায়ী মিশন, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আলোচনা সভার আয়োজন করে। এসব আলোচনায় বক্তারা গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবি জানানো হয়। এদিন কীভাবে নৃশংসভাবে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায় তার বর্ণনা দেওয়া হয় এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাস 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত গণহত্যাকে স্মরণ করে গত ২৫ মার্চ শনিবার ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। 

ঐদিনে পাকিস্তান সামরিক জান্তার কুখ্যাত অভিযান ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এ নিহত সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে দূতাবাস এক কর্মসূচির আয়োজন করে। 

মুক্তিযুদ্ধে সব শহিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সকালে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এর পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর গণহত্যা ও নৃশংসতার ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনান মিনিস্টার (কমার্স) মো. সেলিম রেজা এবং মিনিস্টার (পলিটিক্যাল) মো. রাশেদুজ্জামান।

আলোচনায় অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদের মহান আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। 

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে।

তিনি ২৫ মার্চের গণহত্যাকে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করেন এবং উল্লেখ করেন যে, সেদিন নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি জান্তার পরিকল্পিত গণহত্যায় হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান এবং ব্যাপক ধ্বংসলীলা সংঘটিত হয়।

 রাষ্ট্রদূত ইমরান বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হামলার পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাডুত হয়ে সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের পাশাপাশি ২০৪১ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার যাত্রায় যোগ দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

মিনিস্টার (ইকোনমিক) মো. মেহেদী হাসানও আলোচনায় অংশ নেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ঐদিনে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নৃশংসতার বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের  সামনে তুলে ধরার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়। কর্মসূচি পরিচালনা করেন ফার্স্ট সেক্রেটারি (পাসপোর্ট ও ভিসা উইং) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিল্টন।

বাংলাদেশ কনস্যুলেট

নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গত ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করে।  দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এছাড়াও দিবসটির ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এ বিশেষ দিবসটির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য নিয়ে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শুরুতে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে নিহত সব শহিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ড. ইসলাম তার বক্তব্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রে ঢাকাসহ সারা দেশে ইতিহাসের যে নৃশংসতম ও বর্বরতম হত্যাকাণ্ড অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা বর্ণনা করেন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার যৌক্তিকতা তুলে ধরে কনসাল জেনারেল এ দিবসটির পক্ষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে সবকে যার যার অবস্থান থেকে আরো জোরালো ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানান। তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নতুন প্রজন্মের মধ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেন। আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে তিনি সবকে জাতির পিতার ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

২৫ মার্চ কালরাতসহ স্বাধীনতাযুদ্ধের সব শহিদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সব শহিদ সদস্যের  আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এবং দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

শেয়ার করুন