২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন


ক্ষমতাসীনদের শরিকরাও চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
ক্ষমতাসীনদের শরিকরাও চায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শরিকরাও চায় দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একই সঙ্গে চান তারা স্বচ্ছ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন। যেনতেনভাবে একটি নির্বাচন করে দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে বির্তকিত করতে চায় না শরিকরাও। এসব তথ্য জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন শরিকদের সাথে একান্তে কথা বলে। এছাড়া সম্প্রতি তাদের বক্তৃতা বিবৃতিতেও এমন অভিপ্রায় ফুটে উঠেছে। 

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে একটি জাতীয় নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হোক সেটা শরিকরা মনে প্রাণেই চায়। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন শরিক প্রকাশ্যেই কথা বলা শুরু করে দিয়েছে। বেশ কয়েকজন শরিক দল মনে করে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো একটি নির্বাচন করতে গেলে তাদের নিজ দলের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের জন্য বিরাট ঝুঁকি ও বদনামের কারণ হতে পারে।  

কি বলছেন রাশেদ খান মেনন

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন শরিকদের অন্যতম বাম দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। বিপদ আপদে সব সময়ই দলটি আওয়ামী লীগের সাথেই আছে। ধারাবাহিকভাবে বলা চলে একযুগ ধরেই তারা ক্ষমতাসীনদের সাথে আছে। কখনো মন্ত্রীত্ব পেয়েছে কখনো বা খালি হাতেই ক্ষমতাসীনদের সাথেই রয়েছে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি নামে এই দলটিও আগামী নির্বাচন নিয়ে এখন প্রকাশেই কথা বলতে দেখা গেছে। সম্প্রতি রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় ১৪ দল নেতারা বলেছেন, ১৪ দল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। যদিও তারা একটু বাকা হয়ে বলেছে বিএনপি ওই নির্বাচনে আসুক না আসুক, সেটি তাদের বিষয়। তবে নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হলে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেও লাভ হবে না। কিন্তু দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বাদে সব্বাই একসুরে কথা বলেছে। ওই সভা থেকে একটু পরিস্কারভাবে বলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, আমরা একটি অংশগ্রহণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচন চাই। তিনি ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে বলতে গিয়েও বলেছেন সবাইকে নিয়ে নির্বাচনের স্বপ্ন নয়, স্বাধীনতাবিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে হবে। এর আগেও তিনি খোদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে রাশেদ খান মেনন বলেছেন নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উপজেলা নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মসজিদে মসজিদে ঘোষণা দিয়েও ভোটারদের আনা যায় না। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে এ-ও বলেন,এটা নির্বাচনের জন্য শুধু নয়, গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক।

অবশ্য তিনি এমন আরো বক্তব্য দেন এবং এর পরে রোসানলেও পড়েন।  বরিশাল নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এর বড় সাক্ষী আমি নিজেই। আজ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অথচ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি নিজেও আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। অথচ আজ সেই ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে না। এমনকি উপজেলা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোটের অধিকার হারাচ্ছে মানুষ।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে দেশে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে না, সে দেশের উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে। এর আরো আগে তিনি বলেছেন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে । দখলের মহাৎসব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই সময়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে আমরা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। এ কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা খুবই করুণ। দুই দফা নির্বাচন দেখে আমাদের মনে হয়েছে এতে দখলের মহোৎসব চলছে।

জি এম কাদের কি বলছেন?

এদিকে আগামী সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ব্যালটে নির্বাচন মানেই সুষ্ঠু ভোটের নিশ্চয়তা নয়। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা সরকারের ওপর নির্ভর করে। সাধারণ মানুষের ধারণা, কারা নির্বাচিত হবেন তাও সরকার নির্ধারণ করে।  এতদিন যারা নির্বাচন করেছেন তারাই জানিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু হবে কি না সরকারের ওপর নির্ভর করে। যদি সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, তাহলে তাদের পরাজিত করা অসম্ভব। 

শেষ কথা..

ক্ষমতার আশে পাশেই দীর্ঘদিন ধরেই আছেন আওয়ামী লীগের শরিকরা। ২০১৪ সালের নির্বাচন ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কমবেশি প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের দলেরই ভেতরে। এভাবে জয়লাভ করে ক্ষমতার শরিক হয়ে থাকাকে তারা এখন খুব একটা ভালো বলে মনে করে না। কারণ তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাতেই বলে এভাবে নির্বাচন করে জনগণের আস্থা বেশিদিন টেকসই হবে না। তাই আরো খারাপ পরিস্থিতির পড়ার আগে সর্তক হওয়া প্রয়োজন। আর তাছাড়া তারাও বুঝতে পেরেছে দেশি বিদেশী চাপে এবার একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। কেননা সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন ‘গত (জাতীয় সংসদ) নির্বাচনে আগের রাতেই পুলিশ ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছিল বলে আমি শুনেছি। অন্য কোনো দেশে এমন দৃষ্টান্ত নেই। আমি আশা করব, এবার তেমন সুযোগ থাকবে না বা এমন ঘটনা ঘটবে না। আবার অতি সম্প্রতি জানানো হয় যে দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি। আর একারণে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে আসছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায় বলে জানায় ২৭ দেশের এই জোট। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইইউ-এটাও বলেছে। এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও এ দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু সে শুভেচ্ছা বার্তাতেও তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং মানবাধিকারের প্রতি দুই দেশের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন। আর এজন্য কুটনৈতিক চাপ কাটিয়ে আগামীতে আবারো ২০১৮ মতো একটি নির্বাচনে নিয়ে দল, দেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে আশঙ্কা থেকেই এখন খোদ ক্ষমতাসীনদের শরিকরা সোচ্চার হচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। তবে শরিকদের মুখে দেশে একটি অংশগ্রহণ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে দাবি বা এনিয়ে বক্তব্যে আওয়ামী আরো বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। কেননা এসন সময় বক্তব্যগুলি আসছে শরিকদের পক্ষ থেকে যখন মাঠে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপিও একই দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের সুরেও যখন ক্ষমতাসীনদের শরিকরাও যখন কথা বলে তখন আওয়ামী শুধু বিব্রতবোধই করছে না, বিচলিত ও দিশেহারাও বলে অনেকে মনে করেন।

শেয়ার করুন