২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৪:২৯:২৩ অপরাহ্ন


ফিলাডেলফিয়া কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া
দুর্বৃত্তের পিটুনিতে বাংলাদেশি যুবকের করুণ মৃত্যু
দেশ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
দুর্বৃত্তের পিটুনিতে বাংলাদেশি যুবকের করুণ মৃত্যু আরিফুল হক জেমস


মাত্র ৩১ বছর বয়সী বাংলাদেশী আরিফুল হক জেমস। যে বয়সে তারা সুখের জীবন শুরু করার কথা, সেই বয়সেই তাকে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে হলো। স্বপ্নের দেশে স্বপ্নের সামাধি হলো। যে মৃত্যু কারো কাম্য ছিলো না। দুর্বৃত্তদের পিটুনীতে জীবন দিতে হলো আরিফুল হক জেমসকে। পেনসিলভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়া সিটির সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যাক্সি সোসাইটি অব ফিলাডেলফিয়ার প্রাক্তন সভাপতি তোজ্জামেল হক তোজার ছেলে আরিফুল হক জেমসের অকাল মৃত্যুতে পুরো ফিলাডেলফিয়া বাংলাদেশী কম্যুনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। জানা গেছে, গত ৫ মে শুক্রবার, ভোর ৫ টায় কে বা কারা আরিফুল হক জেমসকে প্রচন্ড মারধর এবং জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান। ধারণা করা হচ্ছে দুর্বৃত্তের বেধড়ক পিটুনিতে বাংলাদেশি আরিফুল হক জেমস (৩১) এর করুণ মৃত্যু হয়েছে। বিটিএসপির প্রাক্তন সভাপতি তোজাম্মেল হক তোজার জ্যেষ্ঠপুত্র জেমসকে প্রায় মৃত অবস্থায় ফিলাডেলফিয়ার নর্থ ফিলি এলাকা থেকে ফিলাডেলফিয়ার পুলিশ উদ্ধার করে ৫ মে শুক্রবার ভোর রাতে টেম্পল হাসপাতালে ভর্তি করে। পরদিন ৬ মে শনিবার জেমসের পরিবারকে ফোন করে জানানো হয়।

এই খবর শুনার সাথে সাথেই বৃহত্তর ফিলাডেলফিয়ার প্রায় সবগুলি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কম্যুনিটির অনেকেই হাসপাতালে যান। আরিফুল হক জেমসের নিথর দেহ হাসপাতালের বেডে দেখে কেউই নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এমনি অবস্থায় গত ৮ মে সোমবার অপরাহ্নে চিকিৎসকরা জেমসের স্বজনকে জানান, জেমস আর বেঁচে নেই। তার মাথায় ও বুকের পাজরে প্রচন্ড আঘাত এবং প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

ফিলাডেলফিয়া সিটি সংলগ্ন আপার ডারবির বাসিন্দা আরিফুল হক জেমস। তার বাবার বাড়ি বাংলাদেশের জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার ভাটকুরী তিলকপুর গ্রামে। পারিবারিকভাবে জেমসের ছোট ভাই হাইস্কুলে পড়ে এবং একমাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। বাবার সংসারে সহযোগিতার জন্য জেমস তার বাবার গ্যারেজে অনেক দিন যাবত সহযোগিতা করে আসছিলেন। লাশের ময়না তদন্ত শেষে গত ৯ মে মঙ্গলবার জেমসের বাবার কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। গত ৮ মে সোমবার রাত পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের পুলিশ শনাক্ত করতে পারেনি। এ নিয়ে কম্যুনিটিতে ক্ষোভের সঞ্চার ঘটেছে। 

কয়েক বছর পূর্বে আরো একজন বাংলাদেশী যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল ফিলাডেলফিয়া সিটিতে। পরবর্তিতে বাংলাদেশী অধিবাসীদের প্রতিবাদের মুখে দুর্বৃত্তদের আটলান্টা থেকে গ্রেপ্তার করে বিচারে কাঠগগড়ায় দাঁড় করানো হয়। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সিটি এবং স্টেট থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। আরিফুল হক জেমসের ঘটনার পর পুরো ফিলাডেলফিয়ায় বাংলাদেশিরা দ্রুত প্রতিবাদে জ্বলে উঠছেন।

জেমসের মৃত্যুর পর তার পরিবারকে সমবেদনা জানাতে প্রায় হাজারের অধিক লোক তাদের বাড়িতে সমবেত হন গত ৮ মে। নিহত আরিফুল হক জেমসের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। সবাই বাকরুদ্ধ। 

উল্লেখ্য, পেনসিলভেনিয়া স্টেটে কর্মরত বাংলাদেশি ট্যাক্সি ড্রাইভারদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ ট্যাক্সি সোসাইটি অব ফিলাডেলফিয়া’র (বিটিএসপি) সাবেক সভাপতি তোজাম্মেল হক তোজার পুত্রের হত্যাকান্ডের রহস্য এবং ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন বৃহওর ফিলাডেলফিয়ায় বাংলাদেশী সামাজিক, রাজনৈতিক এবং মসজিদগুলোসহ প্রায় ২৭টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সকল বাংলাদেশি।

শেয়ার করুন