০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৩০:০০ পূর্বাহ্ন


নির্বাচন কমিশনকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল
মেয়র প্রার্থী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম তাকেও নিরাপত্তা দিতে পারেন না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
মেয়র প্রার্থী সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম তাকেও নিরাপত্তা দিতে পারেন না বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর


‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ‘হাতপাখা’ প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা ফয়জুল করীমের ওপরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার প্রসঙ্গ টেনে মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকালে গোপীবাগে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশনের অনেকগুলো মেয়র নির্বাচন করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনি বলেন যে, আমি খুব সন্তুষ্ট এই নির্বাচন নিয়ে। কিভাবে সন্তুষ্ট? বরিশালে যিনি প্রার্থী ছিলেন চরমোনাই পীর সাহেবের ছেলে মাওলানা ফয়জুল করীম, আলেম মানুষ তাকে আওয়ামী সন্ত্রাসী পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে বন্ধ করতে পারেননি। এতো ব্যর্থ আপনারা যে, একজন মেয়র প্রার্থী সর্বজন শ্রদ্বেয় আলেম মানুষ তাকে পর্যন্ত নিরাপত্তা দিতে পারেন না। আর আপনারা বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন অবাধ ও সুষ্ঠু। সেটা কিভাবে? কি পারবে? পারবে না। আমরা অনেক দেখেছি। মাওলানা ফয়জুল করীমের ওপর হামলার ঘটনা এবং তার ওপর হামলার ঘটনার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মামলা দিয়ে তাকে সাজা দিয়ে কারাগারে রেখেছিলো তারপরে বাসায় নিয়ে গৃহবন্দি করেছিলো। আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন গত ১২ জুন রাতে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অত্যন্ত অসুস্থ। সেই অবস্থায় তাকে রাত তিনটার সময়ে আবার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। তিনি জীবন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান তাকে কিভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে সুদূরে নির্বাসিত করে রেখেছে। আমাদের এখানে এমন কোনো নেতা নেই তার বিরুদ্ধে ৪০/৫০টা মামলা নেই। ৪০ লক্ষ মানুষকে আসামী করেছে সরকার, কেনো? একটা মাত্র কারণে যে তারা জানে এই জাতীয় নেতা যদি বাইরে থাকে তাহলে কোনো নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে পেরে উঠবে না, তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা কখনোই ১০টারও বেশি আসন পাবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিনের উদ্যোগে গোপীবাগ সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারের সামনে ওয়াক্তিয়া মসজিদ মোড়ে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি, নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশে শেষে পদযাত্রা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব মোড়, টিকাটুলী, রাজধানী মার্কেট, স্বামীবাগ, দয়াগঞ্জ, ধৌলাইখাল মোড় হয়ে রায়সাহেব বাজার মোড়ে এসে শেষ হয়। হাজার হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেষ্টুন নিয়ে এই পদযাত্রায় অংশ নেয়। একই সময়ে ঢাকা উত্তরের উদ্যোগে মহাখালী থেকে আরেকটি পদযাত্রা হয়। এটি নাবিস্কো মোড়, সাত মোড়, এফডিসি সড়ক দিয়ে কাওরান বাজারে হোটেল সোনারগাঁওয়ের কাছে গিয়ে শেষ হয়। এই পদযাত্রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।

‘সরকার জনগণের পকেট কাটছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে আর বিদ্যুতে দাম বাড়তেই আছে, সাধারণ মান্ষু ভুক্তভোগী। আজকে এই সরকারের একটাই মাত্র কাজ জনগণের পকেট কাটা। বাজারে অথবা মিটিংয়ের মধ্যে দেখেন হৈ হৈ করে উঠে কি হলো পকেট কাটেছে। পকেটমারকে ধরে ফেলেন না। এখন তো সময় এসেছে আসল পকেটমারকে ধরার। সে প্রতিদিন আমাদের পেকেট কেটে নিয়ে যাচ্ছে। চালের দাম বাড়াচ্ছে পকেট কাটছে, তেলের দাম বাড়াচ্ছ পকেট কাটছে, লবনের দাম বাড়ায় পকেট কাটে, চিনির দাম বাড়ায় পকেট কাটে, ডালের দাম বাড়ায় পকেট কাটে, ডিমের দাম বাড়ায় পকেট কাটে, এমন একটা জিনিস নেই পকেট কাটে না। আপনাদের এই মোবাইলে টাকা ভরতে হবে না, চার্জ করতে হবে না, মোবাইল থেকে ৪০% অবলীলায় কেটে নিয়ে চলে যায়। এটাই বাস্তব চিত্র।

‘১০ জনের কাছে দেশের বিদ্যুতখাত জিম্মি’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা বিদ্যুতের টাকা দেই। আমি উত্তরায় ছিলাম আপনারা জানেন। উত্তরা এলাকায় আগে বিদ্যুত কিনতে হবে তারপর ব্যবহার করতে হবে, প্রিপেইড সিস্টেম। যেই ১০০০ টাকা ভরে বিদ্যুতের কার্ড ঢুকালাম ওমনিতেই ৩’শ টাকা নেই। কোথায় গেলো হাসিনা সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ? সেটা আজকে চলে গেছে বিদ্যুত সেক্টারে ১০ জন মানুষের কাছে, সাংবাদিক ভাইয়েরাই তাদের চিহ্নিত করেছে। এই ১০ জনের কাছে গোটা বিদ্যুখাত জিম্মি এবং বেশির ভাগ টাকা তারা বিদেশে পাচার করে পাঠিয়েছে। এক বছরে আমাদেরকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি ট্যাক্স দিতে হয়।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ভিসা নীতির কারণে পাচার করা টাকা বিদেশে টাকা রাখা নিরাপদ নয় বলে সেই টাকা দেশে ফেরত আনার জন্য বাজেটে আড়াই শতাংশ ইনেসেনটিভ দেয়ার সরকারের পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘সিরাজুল আলম খানের অবদানকে অস্বীকার করা হচ্ছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সিরাজুল আলম খান সাহেব একজন ঐতিহাসিক ক্ষনজন্মা সংগঠকপ্রিয় মানুষ, ইতিহাসে তার অবদানকে আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) অস্বীকার করছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে লড়াই স্মরণে করেছিলেন, নিউক্লিয়াস তৈরি করেছিলেন। তাকে আপনারা শেষ সময়ে একটা মর্যাদা দিয়ে তার একটা শোক বাণী পর্যন্ত দেননি। কারণ আপনাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীনতার পরে যখন তারা জনগণের সমস্ত অধিকারগুলো কেড়ে নিতে শুরু করলো, জনগণের সমস্ত আশা-আকাংখাগুলো ধ্বংস করতে শুরু করলো, চুরি আর দুর্নীতিতে সমস্ত দেশকে ভরে দিলো তখন এই মানুষটি আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজকে নিয়ে সমস্ত তরুণ এই আমাদের আবদুস সালাম সাহেবরা রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। ২০ হাজার তরুণ সেই সময়ে নিহত হয়েছিলেন।’

‘আপনারা মাঠে আসুন ক্ষমতা ছেড়ে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব গত ১২ জুন বলেছেন, আসেন না নির্বাচনে কার কত শক্তি দেখি। আরে আপনারা আসুন না মাঠে, গদিটা ছেড়ে আসেন, ওই যে পুলিশ-টুলিশ, প্রশাসন ছেড়ে আসেন। আজকে সত্যিকার অর্থে একটা নির্বাচন হোক, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন তারপর দেখেন কার কত শক্তি। জনগণের শক্তি যদি দেখতে হয় তাহলে অবশ্যই একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে- এছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

সকলকে ‘জেগে উঠার’ আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব

তিনি বলেন, এখনো সময় আছে মানে মানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। তা না হলে যতই চেষ্টা করেন পালাবার পথও পাবেন না। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির খায়রুল কবির খোকন, মীর সরাফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, কাজী আবুল বাশার, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহানগর দক্ষিণের নবী উল্লাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, তানভীর আহমেদ রবিন, মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সুমন ভুঁইয়া, যুব দলের এনামুল হক এনাম প্রমূখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন