২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৪৩:৩৬ পূর্বাহ্ন


সংসদে দীর্ঘ বক্তব্যে রাশেদ খান মেনন
সংকট এখন সর্বব্যাপী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
সংকট এখন সর্বব্যাপী রাশেদ খান মেনন


বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে দেশের অতীত, বর্তমান অনেক বিষয়ে কথা বলেছেন। দেশ পত্রিকার জন্য রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের আরো অনেক বিষয় তুলে ধরা হলো। 

বাংলাদেশের বর্তমান কার্যতঃ অনুপস্থিত

রাশেদ খান মেনন অডিও-ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট উপস্থাপন প্রসঙ্গে বলেছেন ,এটা সম্ভবত ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের ইঙ্গিতবাহী। তবে এই বাজেটে বাংলাদেশের বর্তমান কার্যতঃ অনুপস্থিত। বাজেটের ধারা বর্ণনায় অর্থমন্ত্রীর প্রধান বিষয় ছিল গত দেড় দশকের অতীতের অর্জন। আর ভবিষ্যত দশকের সুখ স্বপ্নের কথা। বাজেট শুনে দেখে মনে হয় নেই এটা সংকটকালের বাজেট। 

সংকট এখন সর্বব্যাপী

মেনন বলেন, সংকট এখন সর্বব্যাপী। মূল্যস্ফিতি, রিজার্ভ কমে যাওয়া, জ্বালানি সংকট, ডলার সংকট, নদীর পানির সংকট, সংকট কোথায় নেই। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই সংসদে দাঁড়িয়ে যখন বলছেন যে মূল্যস্ফিতি ও লোডশেডিংয়ে জনগণের জীবন কষ্ট নেমে এসেছে, সেখানে অর্থমন্ত্রী ঐ মূল্যস্ফীতি ৬ শতকে ধরে রাখার আশাবাদ শোনালেও কিভাবে সেখানে নামিয়ে আনবেন তার কোন কৌশল বা নির্দেশনা বাজেটে দেননি। তিনি কেবল আশা প্রকাশ করেছেন বিশ্বব্যাপী পণ্যমূল্য নিম্নগামী। বিশ্ববাজারে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও সারের মূল্য কমে আসা, দেশে জ্বালানি মূল্য সমন্বয় ও খাদ্য সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারি উদ্যোগের কারণে মূল্যস্ফিতি কমে আসবে। 

মূল্যস্ফিতি নামিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যর্থ

রাশেদ খান মেনন বললেন, বিশ্ব পণ্যমূল্যের উর্ধগতি দেশের বাজারে প্রভাব ফেললেও নিম্নগতি বাজারে প্রতিফলিত হয় না। এই সময়কালের অভিজ্ঞতা তা একেবারেই বলে না। বরং মূল্যস্ফিতি আরও বেড়ে ইতিমধ্যেই গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৯৪-এ পৌঁছে গেছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতেও ভারত-নেপাল যেখানে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনতে পেরেছে সেখানে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। বড় বড় অর্থনীতিগুলো যখন মূল্যস্ফিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে, অর্থমন্ত্রী সেখানে সেটা ধরে রেখেছেন। ডলার সংকট নিরসনে ডলারকে বাজার ব্যবস্থার উপর ছেড়ে না দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে। বাজেট বরাদ্দে মেগা প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়েছে। যেখানে সংকোচন করা হয়েছে তা নিতান্তই প্রান্তিক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজার নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী না

রাশেদ খান মেনন বললেন, বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম দুর্বলতার কারণে জিনিসপত্রের মূল্য একেবারেই লাগাম ছাড়া। পেয়াজের মূল্যের ঊর্ধ্বতি রোধের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপেই বোঝা যায় যে বাজার নিয়ন্ত্রণে তারা আগ্রহী নন। অথবা কাউকে সুবিধা দিতে চান। দশদিন ধরে পেয়াজের মূল্য বাড়তে দিয়ে সিন্ডিকেটের হাতে বাজার ছেড়ে রেখে যখন পেয়াজ আমদানি করার সিদ্ধান্ত হল ততদিনে ভোক্তা সাধারণ মানুষ কেবল নয়, কৃষকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

গ্রামে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে আসে

রাশেদ খান মেনন বললেন, আমি দেশে বিদ্যুতের অগ্রগতি সম্পর্কে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। দেশের শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে গৌরব অর্জন করেছিলেন, সাম্প্রতিককালেই কেবল নয়, বেশ কিছুদিন ধরে দেশের অধিকাংশ স্থানকে অধিকাংশ সময় অন্ধকারে ডুবিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে তাতে কালিমা লোপন করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ আসে, এটাই বাস্তবতা। এপ্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুৎ না উৎপাদন করে খাম্বা বসানো হয়েছিল, আর এখন, বিদ্যুতের সক্ষমতা আছে জ্বালানি নেই। এ যেন তেল ছাড়া পিদিম জ্বালানোর ব্যবস্থা। আমি আবার বলছি জ্বালানি নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ উপদেষ্টা, বিদ্যুৎমন্ত্রী আর প্রধান আমলারা এর দায় এড়াতে পারে না। তাদের তিরস্কার না করে বরং বড় বড় পদে পাঠিয়ে দিয়ে পুরস্কার দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ উপদেষ্টা যখন বলেন জনগণ চাইলে দিনের ভাগে লোডশেডিং করে রাতে বিদ্যুৎ দেয়া যেতে পারে- সেটা জনগণকে উপহাস করা ছাড়া কিছু নয়। 

অবাস্তবতা কর আহরণে

রাশেদ খান মেনন বলেন, অবাস্তবতা রয়েছে কর আহরণের ক্ষেত্রেও। বর্তমান বাজেটে যেখানে সর্বোচ্চ দিয়েও কর আহরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি, আগামী অর্থ বছরে কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বহুল্যাংশে বাড়ান হয়েছে। আর এর দায় রাখা হয়েছে সাধারণ মানুষের উপর। কিন্তু কিভাবে। তার একটা উদাহরণ পাই তার নতুন প্রস্তাবনায়। তিনি প্রস্তাব করেছেন করমুক্ত সীমার নিচে আয় রয়েছে, অথচ সরকার হতে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে এমন টিনধারীদের সেবা পেতে হলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হবে। এটা নাকি তাদের জন্য গর্বের হবে। আর বড়লোকদের গর্ব খর্ব করার জন্য সম্পদ করের সীমা ৩ কোটি থেকে ৪ কোটিতে বাড়ানো হয়েছে।  তিনি বলেন, সবদিক দিয়ে এটা অনৈতিক, অন্যায্য আর এতে বৈষম্য আরও বাড়বে। এ দু’টোই প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে কর আদায়ের জন্য যে আউটসোর্সিংয়ের কথা বলা হয়েছে তা এক্ষেত্রেও মধ্যস্বত্তভোগী সৃষ্টি করবে। জনগণের হয়রানি হবে। 

তিন কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচেই। রাশেদ খান মেনন বলেন, সংখ্যা হিসেবে এখনও তিন কোটির উপর মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচেই বাস করছে। খাদ্যমূল্যসহ মূল্যস্ফিতির কারণে মধ্যবিত্তরা নতুন দরিদ্রে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে প্রকৃতভাবে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে সার্বজনীন পেনশন স্কীমের কথা বলা প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন আগামী অর্থবছরে এটা চালু হবে। কিন্তু পেনশন স্কীমে যে চাঁদা দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে তাতে খেতমজুর-গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষের কাছে এ সুবিধা পৌঁছুবে না। তাদের জন্য চাঁদার বিধান বাদ দিয়ে সেখানে নন-কন্ট্রিবিউটরি করলে পরে সেটা সত্যিকার অর্থে সার্বজনিন পেনশন হবে।

ভূ-রাজনৈতিক কবলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা

রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীর উপর কেবল কৃষি নয়, পরিবেশও নির্ভর করে। কিন্তু গত ৫০ বছরে আমরা গঙ্গাসহ দু’একটি নদী ছাড়া ভারত থেকে আসা নদীগুলোর পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান করতে পারি নেই। গঙ্গা চুক্তির সময় শেষ প্রায়। সংকোশ থেকে খাল কেটে গঙ্গার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি করার কাজটি গত ৩০ বছরে হয়নি। তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে। পশ্চিম বাংলা সরকারের তিস্তায় দু’টি খাল খনন করার জন্য যে উদ্যোগের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে তাতে তিস্তা, ধরলাসহ ১৮টি নদীতে শুকনো মৌসুমে পানি থাকবে না। শুকনো মৌসুমে পানি না পাওয়া, আর বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর ভাঙ্গন উত্তরবাংলার নদীগুলোর অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এই সমস্যা দূর করতে বর্তমান সরকারই চীনের কারিগরি সহায়তায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। কিন্তু কোন ভূ-রাজনৈতিক কারণে সেটা আলো বা বাস্তবতার মুখ দেখে নাই তা জানা নেই। 

ডিজিটাল আইন পরিপূর্ণ বাতিল হউক 

রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে ডিজিটাল আইন নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের। বিদেশীরাও এ নিয়ে কথা বলে। আইনমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এই আইনের অপপ্রয়োগ বা এবিউজ হচ্ছে। বিদেশীদের কথায় নয়, নিজদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রশ্নে এই আইন হয় পরিপূর্ণ বাতিল বা নির্দিষ্ট গণবিরোধী ধারাগুলো সংশোধন প্রয়োজন। দেশের শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রেও বিদেশীরা কথা বলেন এবং মন্ত্রীরা তার জবাব দেন। কিন্তু যে শ্রমিকের জন্য আইন তাদের সাথে কথা বলেন না। আর বললেও যা তারা করছেন তাই মেনে নিতে বলেন। এখন শ্রমিক অধিকার খর্ব করার ক্ষেত্রে গোদের উপর বিষফোড়া হিসেবে অত্যাবশকীয় পরিষেবা সংক্রান্ত আইনের বাংলা করার নামে শ্রমিকের কার্যতঃ সকল ক্ষেত্রে ধর্মঘটের অধিকার নিষিদ্ধ করে বিধান সংযোজন করা হয়েছে। এই বিধান সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। তা’ছাড়া শ্রম আইনেই ধর্মঘট করার অধিকার স্বীকৃত। আবার বেআইনী ধর্মঘটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও আছে। রাশেদ খান মেনন গার্মেন্টস শ্রমিকদের যে নিম্নতম মজুরি ২০,০০০ টাকা নির্ধারণে দাবি করেন। গৃহকর্মীদের জন্য প্রতিশ্রুত আইনও ঝুলে আছে। নির্বাচনের আগে সেটাও করা প্রয়োজন। 

কুকিচিন ফ্রন্টের স্রষ্টা কে?

রাশেদ খান মেনন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়ন নেই। পাহাড়ে আবার অশান্তি। পাহাড়ের এই অশান্তি সমতলেও বিস্তৃত হয়েছে। কুকিচিন ফ্রন্ট জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে যারা দেশের অভ্যন্তরে অশান্তি করতে চায়। এটা ঠিক যে সেনাবাহিনী ঐ কুকিচিন ফ্রন্টের ক্যাম্প গুড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এর স্রষ্টা কে, কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ফ্রন্টের তৈরি তা দেশবাসী জানতে চায়। 

মার্কিন পৃষ্টপোষকতায় ওহাবীবাদী-মওদুদীবাদী 

রাশেদ খান মেনন বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হাতে থাকলেও বাংলাদেশের সমাজ দ্রুতই বেদখল হয়ে যাচ্ছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ওহাবীবাদী-মওদুদীবাদী প্রচারণা বাংলাদেশ উদারনৈতিক ইসলামের ঐতিহ্য বিপন্ন। জন্ম নিচ্ছে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এদেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। সোশাল মিডিয়ায় এই উগ্রবাদী অসহিষ্ণুতা প্রচার লাগাম টানার কোন ব্যবস্থা নেই। আমি এই সংসদে আপনার কাছে সে সব বক্তব্যের পেনড্রাইভ দিয়েছিলাম। কিন্তু কোন ব্যবস্থা দেখিনি। লোকায়ত সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আউল-বাউল যাত্রাগান-গাজীর গান এই সব উগ্রবাদীদের আক্রমণের সম্মুখিন। 

সংখ্যালঘুরা আর নিরাপদ বোধ করেন না

রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের আর নিরাপদ বোধ করেন না। তাদের মধ্যে মানসিক বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হয়েছে। এই আওয়ামী লীগই তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও মাইনরিটি কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। গত দেড় দশকে তার কোন বাস্তবায়ন নেই। নির্বাচনের আগেই এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে অর্পিত সম্পতি সম্পর্কে যে আইন করা গেছে তার বাস্তবায়নের পথে নানা বাধা। দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা, মানসিক প্রশান্তি ও এদেশে তাদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি। 

এটা কিসের আলামত

রাশেদ খান মেনন বলেন, দেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। হঠাৎ করেই আমরা দেখলাম যে জামাতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য আইনমন্ত্রী মাঝে মাঝেই সরকারের উদ্যোগের কথা বলেন। সেই জামায়াতকে পুলিশ বেশ সমাদর করে অন্যের সভা সরিয়ে নিতে বাধ্য করে, জামায়াতকে ১০ বছর পর প্রকাশ্য সভা করার অনুমতি দিয়েছে। এটা কিসের আলামত আমরা জানি না। এটা স্পষ্ট করে বলা প্রয়োজন জাময়াত যুদ্ধাপরাধীর দল, ঘাতক দল। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাদের রায়ে একথা বলেছে। এর জন্য নতুন করে আদালতের রায়ের প্রয়োজন নেই। জাময়াত কিন্তু তার অবস্থান থেকে এক চুলও সরেনি। ঐ সমাবেশ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির দাবিরই পুনরাবৃত্তি করেছে। বিএনপির সাবেক নেতা নাজমুল হুদা জোক করে বলেছিলেন বিএনপি-জামায়াত একই বৃন্তের দু’টি ফুল। যে কথাটা আমি সব সময় বলি, এখনও বলছি সাপের মুখে চুমু খেলে সাপ ছোবলই মারে। জাময়াত-হেফাজতের সাথে তোষামোদ-সমঝোতা সেই ফলই দেবে। 

সেন্টমার্টিন চায় আমেরিকা..

রাশেদ খান মেনন আরো বলেন, ঐ একই কথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যারা বন্ধু, তাদের শত্রুর প্রয়োজন নেই। বেশ কিছু সময় আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তার বাগে রাখতে স্যাংশন দিয়েছে। এখন নির্বাচনকে উপলক্ষ করে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে। এটা কেবল, দূরভিসন্ধিমূলকই নয়, তাদের ‘রেজিম চেঞ্জে’র কৌশলের অংশ। তারা সেন্টমার্টিন চায়, কোয়াডে বাংলাদেশকে চায়। আর তার জন্য শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়া প্রয়োজন। এটা তাদের পুরান নীতির ধারাবাহিকতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে ছিনিয়ে নিতে তারা বঙ্গোপসাগরে সপ্তম নৌ-বহর পাঠিয়েছিল। তীব্র খাদ্য সংকটের সময় বঙ্গবন্ধুর সরকারকে বিব্রত করতে মধ্যসমুদ্র থেকে গমের জাহাজ ফিরিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পিছনে তাদের কালো হাত ছিল। এখন আবার বর্তমান সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে তারা সব কিছু করছে।

শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে

রাশেদ খান মেনন প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন করে তার ঐ বক্তব্যে আরো বলেন, বাইডেন সাহেব ট্রাম্পকে সামলান। আমাদের ঘর আমরা সামলাবো। নির্বাচন হবে। শেখ হাসিনার সরকারকে রেখেই হবে। বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেয়া। তারেক রহমান নির্বাচন না করে ২০২৯-এর জন্য অপেক্ষা করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এর মধ্যে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। তার সেই স্বপ্নও পূরণ হবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে যাবে।

শেয়ার করুন