০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০১:১৬:০৮ অপরাহ্ন


৭ বাংলাদেশির মৃত্যু
সৈয়দ সালাউদ্দিনের ছেলের আকুতি : বাবাকে তো দেখিনি অন্তত লাশটা দেখি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১০-২০২৩
সৈয়দ সালাউদ্দিনের ছেলের আকুতি : বাবাকে তো দেখিনি অন্তত লাশটা দেখি (উপরে বাঁ থেকে) সৈয়দ সালাউদ্দিন, মমতাজ উদ্দিন ভূঁইয়া, লামা কাজী, (নিচে বাঁ থেকে) আজহারুল ইসলাম ফারুক, বুলবুল আহমেদ, মোহাম্মদ সুমন


বাবাকে জীবনে দেখিনি অন্তত লাশটা হলেও দেখি। এই কথা বলেছেন প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সদস্য সালাউদ্দিনের অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী একমাত্র সন্তান সৈয়দ শাফায়েত। চট্টগ্রাম সমিতির কর্মকর্তা আবুল কাশেম চট্টলা এবং মাকসুদুল হক জানান, সৈয়দ সালাউদ্দিনের মৃত্যুর পর আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তার একমাত্র ছেলে সৈয়দ শাফায়েত বলেছেন, জীবনে আমি বাবাকে দেখেনি, অন্তত বাবার লাশ হলেও দেখি। আপনারা বাবার লাশটা বাংলাদেশে পাঠান। আমি মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে আসছি। তারা জানান, সালাউদ্দিন যখন আমেরিকায় আসেন, তখন তার স্ত্রী চার মাসের গভবর্তী ছিলেন। সালাউদ্দিন আমেরিকায় এসে ট্যাক্সি চালাতেন। স্বপ্ন ছিল কাগজ হবে, দেশে যাবেন। কিন্তু গত ৩০ বছরে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এরই মধ্যে মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত হলেন। অবশেষে সেই ক্যানসারের কাছে পরাজিত হলেন। লাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন স্ত্রী এবং সন্তানের কাছে।

জানা গেছে, সৈয়দ সালাউদ্দিন দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে গত ১৩ অক্টোবর ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক সন্তানসহ আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তবে নিউইয়র্কে তার কোনো আত্মীয়স্বজন ছিল না। মরহুম সৈয়দ সালাউদ্দিনের জানাজা গত ১৪ অক্টোবর বাদ এশা ব্রুকলিনের বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তার লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেখানেই জানাজা শেষে পারিবারিব গোরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়। তার দেশের বাড়ি চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদের মোগলটুলিতে। তার জানাজায় চট্টগ্রাম সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সদস্যসহ কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

মমতাজ উদ্দিন ভূইয়ার লাশ উদ্ধার

নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রিটের পরিচিত মুখ বাংলাদেশি মমতাজ উদ্দিন ভূইয়া (৭৫) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। জানা গেছে, গত ১০ অক্টোবর সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্যে ৭৩ স্ট্রিটের সেইসমেন্টে অবস্থিত মসজিদে যান মমতাজ। বাথরুমে ঢুকেছিলেন তিনি। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ ডেকে দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

কুমিল্লার চান্দিনার সন্তান মমতাজ ১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। বাস করতেন জ্যাকসন হাইটসে। দেশে রয়েছে তিন কন্যা ও স্ত্রী। বছরখানেক আগে দেশে গিয়েছিলেন। ফিরে আসার পর দার মানসিক সমস্যায় পড়েন। বাসা বাড়িতে না গিয়ে রাস্তাঘাটে বসে থাকতেন, রাত কাটাতেন। তাকে অনেকেই বাম বলে সম্বোধন করতেন।

অনেকের ধারণা, মাগরিবের নামাজের প্রাক্কালে ওই মসজিদের বাথরুমে ঢুকেছিলেন। সেখানেই কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা নিশ্চিত হতে মেডিকেল এক্সামিনারের দফতরে লাশ নেওয়া হয় বলে জানান চান্দিনার সন্তান ওয়াসিমউদ্দিন ভূইয়া। ১১ অক্টোবর বুধবার অপরাহ্নে ওয়াসিমউদ্দিন ভূইয়া আরো জানান, দেশে তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। সে অনুযায়ী লাশ দাফন করা হয়েছে বাংলাদেশ সোসাইটির নিউজার্সির গোরস্থানে। দাফন-কাফনের সব ব্যয়ভার চান্দিনাবাসী বহন করবে বলে জানিয়েছে।

আজহারুল ইসলাম ফারুক

জর্জিয়া বাংলাদেশি কমিউনিটির অত্যন্ত পরিচিত মুখ এবং জর্জিয়া বাংলাাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজহারুল ইসলাম ফারুক ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ অক্টোবর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের সময় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। আটলান্টা থেকে বিশিষ্ট লেখক ও দেশ প্রতিনিধি লিয়াকত হোসেন আবু বলেন, তিনি বেশ কিছুদিন থেকেই ক্যানসারে ভুগছিলেন এবং চিকিৎসাও নিচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গত শুক্রবার তিনি ক্যানসারের কাছে পরাজিত হলেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। গত ১৪ অক্টোবর দুপুর ২টায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয় জর্জিয়া ইসলামিক সেন্টারে। তার জানাজায় কমিউনিটির সর্বস্তরের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। জানাজা শেষে তাকে মুসলিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।

ফারুক আহমেদ

প্রবাসের পরিচিত মুখ বড়লেখার সূড়কান্দি বাদেজঙ্গল নিবাসী ফারুক আহমেদ গত ১৪ অক্টোবর বিকেল ৩টা ৪৫ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। গত ১৫ অক্টোবর বাদ জোহর ওজনপার্ক আল আমান মসজিদে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়।

জ্যাকসন হাইটসের প্রিয় মুখ সুমনের মৃত্যু

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইট্স এলাকার প্রিয় মুখ, হাসিখুশি এবং ভালো মনের মানুষ সুমন ১৭ অক্টোবর বিকেলে ম্যানহাটনের মাউন সিনাই হসপিটালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৫৮ বছর। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ১ মেয়েসহ বন্ধু বান্ধব রেখে গেছেন। তিনি থাকতেন জ্যাকসন হাইটসের সাবেক রুমালি বাজারের উপরের অ্যাপর্টমেন্ট বিল্ডিং এ থাকতেন। তার বন্ধু শাখাওয়াত বিশ্বাস জানান, আজ ১৯ অক্টোবর মরহুমের জানাজার নামাজ জ্যাকসন হাইট্স ৭৩ স্ট্রিটের খামার বাড়ির নিচের মসজিদে বাদ জোহর  অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দকী জানিয়েছেন স্ট্যাটন আইল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশি ফাতেহ আলী মৃত্যুবরণ করেছেন। তার নামাজে জানাজা শেষে তাকে বাংলাদেশ সোসাইটির কবরস্থানে দাফন করা হয়।

আহমেদ কে চৌধুরী নামে আরো একজন বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। নামাজে জানাজা শেষে তাকে বাংলাদেশ সোসাইটির নিউজার্সির করব স্থানে দাফন করা হয়। তার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে।

লামা কাজী নামে আরেক বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার দেশের বাড়ি চাঁদপুরে। তাকেও এখানে দাফন করা হয়।

লুজিয়ানা ইউনিভার্সিটেতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্র বুলবুল আহমেদ হার্টঅ্যাটাকে ইন্তেকাল করেন। তিনি ওই ইউনিভার্সিতে পিএইচডি করছিলেন। তার দেশের বাড়ি মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায়।

শেয়ার করুন