২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৭:৩১:২১ অপরাহ্ন


এস্টোরিয়ায় অ্যারাবিক ইফতারি
তোফাজ্জল লিটন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৪-২০২২
এস্টোরিয়ায় অ্যারাবিক ইফতারি আরবিক রেস্টুরেন্টে বাংলাদেশিদের ইফতার


আরব অঞ্চলের মানুষ সকালে নাশতা হিসেবে যা খায় তা-ই তারা ইফতারি হিসেবে খেয়ে থাকে। খেজুর ও ঠান্ডা দুধ খেয়ে তারা ইফতারি শুরু করে। অ্যারাবিক ইফতারে সালাদ, ফল-ফলাদি, জুস, সুপ এবং মাছ-মাংসের প্রাধান্য। ভেড়া, মোরগ, গরুসহ অধিকাংশ খাবার তারা তৈরি করে গ্রিল ও বেকড করে। কয়েক প্রকারের ঐতিহ্যবাহী ভাতের আইটেম ও মিষ্টিজাতীয় খাবারও আছে। কোরআনে বর্ণিত খাবারও যুক্ত থাকে তাতে। নিউইয়র্ক শহরের এস্টোরিয়া এলাকার স্ট্যাইনওয়ে সড়কের বেশিরভাগ দোকান-হুক্কা লাউঞ্জ রেস্টুরেন্ট মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের। এ সড়কে প্রবেশ করলে মনে হয় নিউইয়র্কের বুকে এক টুকরো মধ্যপ্রাচ্য। ঐতিহ্যবাহী এরাবিক ইফতার খেতে খোঁজে বের করা হলো আদেল নামের একটি বুফে ইফতারির বিক্রয় করা রেস্টুরেন্ট। ইচ্ছামতো অন্তত বিশ প্রকারের খাবার খেতে জনপ্রতি তারা নিয়ে থাকে ৩৫ ডলার।

রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে কোনো খাবার চোখে পড়ে না। বুফে খাবারের পাত্র আছে তবে তা খালি। এক কোনায় দেখি অনেক ধরনের ফল দিয়ে একটি বড় থালা সাজানো। পাশে একটি জুসবার। কমলা, আপেল এবং বেরির জুসের সাথে আছে তাদের ঐতিহ্যবাহী গোলাপজল মিশ্রিত তেঁতুলের জুস। হুমাস-রুটি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার কাদিফ আছে জুস বারের পাশে। পাশে ভেজিটেবল ও চিকেনের গরম স্যুপ। ইফতারের সময় বাকি আছে ১৫ মিনিট। বাংলাদেশি রেস্টেুরেন্টের মতো কোনো ভিড় নেই। এই সমান্য কিছু খাবার আইটেম দিয়ে ৩৫ দলার নিয়ে নিবে নাকি! শঙ্কায় পড়ে রেস্টুরেন্টের কর্ণধার আহমেদ মোস্তফাকে জিজ্ঞস করলাম, খাবার কী এ পর্যন্তই? না। বললেন, সব গরম খাবার ইফতারের ৫ মিনিট আগে চুলা থেকে নামিয়ে এখানে আনা হবে।

১২ বছর ধরে ব্যবসা করা প্যালেস্টাইনি মালিক মোস্তফার কথা মতোই দেখি মানুষ ঠিক ৫ মিনিট আগে এসে রেস্টুরেন্ট পূর্ণ করে দিলো। জানা গেলো সবারই আগে টেবিল বুক দেয়া ছিলো। এ সময় এলো আমাদের দলের কান্তা তার স্বামী কাবির ও কিশোর পুত্র মুগ্ধ। এই অঞ্চলে গাড়ি পার্কিং পাওয়া কঠিন। তাই আমি, নুরুল আফসার সেন্টু ও তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা শাওন একটু আগে এসেছিলাম। টেবিল বুক করে রেখেছিলাম। বুফে খাবার দেখে আমরা বুছে গেছি এক জনের পে সব আইটেম খওয়া সম্ভব না। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই পৃথক ভাবে ৩-৪টি করে আইটেম দেখে দেখে নেবো এবং জানাবো কোন খাবারটি কেমন। 

মুগ্ধ জানালো সমুচার মতো দেখতে একটি খাবার এটি সে পছন্দ করেছে। নাম সাম্বুকা। এটি মাংস ও চিজ দিয়ে বেইকড করে তৈরি করা হয়েছে। কাবির হোসেন নিয়ে এলেন সসেজ এর মতো দেখতে লেম গাড। এটি ভেড়ার নাড়ি-ভুড়ির ভেতরে ভাত ঢুকিয়ে বেকড করা মচমচে একটি খবার। শাওন আপুর ভালো লেগেছে আরবীয় ঐতিহ্যবাহী স্টাফ্ড লেম ও গ্রেফ লিফ রাইজ। প্রকৃত খাবারের আকৃতি ঠিক রেখে রন্ধন প্রক্রিয়াকে স্টাফড বলে। বড় আকৃতির ভেড়ার সিনা, সঙ্গে বিরিয়ানির মতো ভাত। এতো বড় আকৃতির মাংসের থল কিন্তু খেতে খুব মোলায়েম। 

আঙুরের পাতার মধ্যে ভাত দিয়ে স্টাফ্ড প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় গ্রেফ লিফ রাইজ। পাতাকপিও একইভাবে তৈরি করা হয়। কান্তা কাবিরের ভালো লেগেছে তাদের ঐতিহ্যবাহি খবার লেম কাবছা। এটি বিরিয়ানির মতো দেখতে হলেও স্বাদ সম্পূর্ণ ভিন্ন মজার। হোয়াইট ফিশ ইন সসেজ ভালো লেগেছে আমার। এটি তাদের ঐতিহ্যবাহী সস, জলপাই, মাসরুম, পেপার ও পেঁয়াজ দিয়ে ওভেনে রান্না করা একটি খাবার। সেন্টু ভাই মতামত না জানিয়ে চলে গেলেন পাশে অবস্থিত বড় একটি মসজিদে নামাজ পড়তে। 

মোস্তফা জানালেন, এখনে হানিথ নামের একটি খাবার আছে যার কথা কোরআনের সুরা হুদের ৬৯ নম্বর আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। এটি মূলত গরুর বাছুরকে এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাটির নিচে চাপা দিয়ে রান্না করা হয়। শুধু মধ্য প্রচ্যের মানুষ নয় এশিয়ান এবং আমেরিকানরাও এখানে আসেন ভিন্ন স্বাদের খাবার খেতে। ছোটদের ইফতারি ১৫ ডলার হলেও বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে আমাদের সম্মান দেখিয়ে এর মূল্য রাখেননি আহমেদ মোস্তফা।

শেয়ার করুন