২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৭:১২:৩৭ পূর্বাহ্ন


বিরাজমান লোডশেডিংয়ে অ্যাডভান্টেজে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
বিরাজমান লোডশেডিংয়ে অ্যাডভান্টেজে বিএনপি


ওয়ান ইলেভেনের ঘটনাবহুল সময়াবলীর পর ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ এর জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ (২৩০ সিট) বিজয় লাভ করার পর থেকে ২০২২ সন। দীর্ঘ এ সময়ে আওয়ামী লীগকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো মাথা তুলেই দাঁড়াতে ব্যর্থ। বিএনপিসহ তাদের সমমনাদের একরকম পাত্তাই নেই। ২০১৪ সনের নির্বাচনেও এক তরফা বিজয়ী হন ক্ষমতাসীনরা। ২০১৮ সনের নির্বাচনেও একই চিত্র। বিএনপি বিগত দুই নির্বাচনে কার্যত অংশ নেয়নি। বলেছে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে অনেক কথা। ফলে ২০২৩ সনের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েই এখন যত তোড়জোড়। এ নির্বাচন প্রসঙ্গে দেশ ও বিদেশে তুমুল আলোচনা। বিষেশ করে উন্নয়ন সহযোগীরা একাট্টা। কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। গণতন্ত্র নির্বাসনে চলে গেছে। 

বিএনপিসহ অন্যান্য দল বলছে বিগত ওই দুই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যা চেয়েছে, রেজাল্টও তাই হয়েছে। তাই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য, জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিতকরণে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। আওয়ামী লীগ এ দাবিকে হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু দেশে যে গণতন্ত্র নেই সেটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গণতন্ত্রমনা দেশের সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে গণতন্ত্র বিহীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ফেলেছে। ফলে এ মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বাংলাদেশের দাতা দেশসমূহ একট্টা। তারা চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ। সেই সাথে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ যেন তাদের পছন্দসই প্রতিনিধি বেছে নিতে পারেন। এটা নিয়েই দীর্ঘদিন ধরেই কখনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, কখনও পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী,পররাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়নসহযোগী দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তবে গত ১০ ডিসেম্বর র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ক্ষমতাসীন শিবিরে কিছুটা দুশ্চিন্তার কালোমেঘ এসে ভর করে। এর সঙ্গে উন্নয়নসহযোগীদের তৎপরতা তো আছেই। এসবে যে অস্বস্তি সেটা টের পাওয়াও গেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার পরামর্শ দেন মার্কিনীদের যে তাদের দেশের মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যু প্রসঙ্গে। তবে এগুলো নিয়ে তেমন একটা উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায়নি। বরং বিএনপি ও সমমনাদের দাবি- দাওয়াকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই আসছেন তারা। হাসি তামসা করেছেন বিএনপি নেতাদের। পদ্মা সেতুর সাফল্য বিএনপিকে একরকম কোনঠাসাই করে ফেলে ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি ও খালেদা জিয়া,তারেক রহমানের অতীত কর্মকান্ড নিয়ে বহু কথা বলেছেন। সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

পদ্মার সাফল্যে যখন উদ্ভাসিত দেশ, উদ্ভাসিত আওয়ামী লীগ ঠিক তখনই নেমে আসে লোড শেডিংয়ের ভয়াবহ থাবা। বাধ্য হয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। সবাইকে হিসেব করে খরচ করতে বলেছেন বিদ্যুৎ। পাশাপাশি লোড শেডিং কোথায় কখন হবে তার একটা প্লানও দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। অনুমান করা যায় লোডশেডিং এবার ক্ষানিকটা নয়, বেশ ভোগাবে। ঘাটতি পূরনে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রয়োজন, সেটাতে নগদ অর্থে তৈল, তরল গ্যাস ক্রয় করে সেটা দিয়ে উৎপাদনে যেতে হবে। কিন্তু এ মুহূর্তে সে পরিমাণ বৈদেশিক অর্থ রিজার্ভ ও সেটা খরচ করা টাফ। এতেই পরিস্থিতি জটিলতার দিকে।

এমনিতেই এক জ্বালানী সঙ্কটে শ্রীলঙ্কান সরকারের নাজুকাবস্থা। সেটা বাংলাদেশেও যদি হয়, তাহলে কী হতে পারে, সেটা ভেবে ইতিমধ্যে অনেকেই দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম করে দিয়েছেন । 

ফলে এ লোডশেডিং বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডকে অনেকটাই ম্লান করে দিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণ না ঘটানো গেলে মানুষের মধ্যে অবিশ্বাসটা বেড়ে যাবে প্রতিনিয়ত। এটাই এখন বিরোধী দলের প্লাস পয়েন্ট। এবং ক্ষমতাসীনদের বড় দুর্বলতা। তাছাড়া মার্কিন স্যাংশন প্রত্যাহার না করতে পারা। উন্নয়নসহযোগীদের আস্থা অর্জন করতে পারাসহ বেশ কিছু ইস্যুতে ক্ষমতাসীনরা কিছুটা কোনঠাসা হয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু বিএনপি এ সুযোগটা লুফে নেয়ায় ব্যস্ত। বিশেষ করে পদ্মা সেতু উদ্ধোধনের ঢামাঢোলের মধ্যে সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে যে ভয়াবহ বন্যা, সে সময় বিএনপি সারাদেশের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে বন্যার্তদের সাহায্য করতে গেছেন ডোর-টু ডোর। এটাতে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা আরো বেড়েছে। 

বিএনপি এখন প্লান করছে চলতি বছরের মধ্যে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে নামবে। তাদের আন্দোলনে নামার পূর্বে যে সকল কাজকর্ম রয়েছে- যেমনটা তৃণমূলে সংগঠন গুছানো। সমমনা রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে বৈঠক করে এক যোগে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য সংগঠিত করা। এসব কাজ প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া ২০১৩ সনে যেমনটা মানুষকে সেভাবে সম্পৃক্ত করা যায়নি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। এখন সেগুলো মাথায় রেখেই তারা এগুচ্ছেন।

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ ক্রাইসিস, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, দেশের মানবাধিকার প্রসঙ্গে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের উৎকন্ঠা বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সরকার কিছুটা বেকায়দায়। ফলে আন্দোলনের মাঠে সেভাবে আর বিরোধী মতের দমন পীড়ন হওয়ার চান্স কমে গেছে। যেমনটা এর আগে মামলা-গায়েবী মামলা, ধরপাকড় করা হতো। কারণ উন্নয়নসহযোগীদের সজাগ দৃষ্টি এখন এসকল দিকে। তাছাড়া র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে কতিপয় অতি উৎসাহী আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও এখন এসকল কাজে নিয়ন্ত্রিত হবেন। সব মিলিয়ে বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলোর সামনে একটা অ্যাডভান্টেজ। এ পরিস্থিতি ক্যাশ করে শীঘ্রই আন্দোলনে মাঠে নামার শলাপরামর্শ করছেন তারা। 

সদ্য শেষ হওয়া ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দেখা করেছেন। সেখানে কী আলাপ হয়েছে সেটা না জানা গেলেও শীর্ষ নেতাদের মধ্যে কিছুটা চাঙ্গাভাব। ইতিমধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ব্যালট,সিলেই হবে নির্বাচন। বিএনপির শীর্ষ নেতা আমীর খসরু যেমনটা বলছেন, দেশে গত দুই নির্বাচন ছাড়াও এ পর্যন্ত প্রায় ২/৩ কোটি নতুন ভোটার হয়েছেন। এ সব তরুণ এখনও ভোট দিতে পারেনি। কারণ দেশে ভোটই হয়নি। ফলে এসব তরুণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির আন্দোলনে সারা দিয়ে মাঠে নামবেন, যুক্ত হবেন।

তারা চাইবে তাদের নেতৃত্ব বেছে নিতে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। শীর্ষ আরেক নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, ২০২৩ সনের আগেই আমাদেরকে মাঠে নামতে হবে আন্দোলন গড়ে তুলতে। তাছাড়া  এ সরকারের অধীনে তো আমরা নির্বাচনেই যাব না সেটা বলেই দিয়েছি। ফলে দাবি আদায়ে মাঠে নামতে হবে। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, স্বৈরাচার,ফ্যাসিবাদের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত হলে মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসহীনতা ঢুকে যায়। ফলে দেশের গণতন্ত্র ফেরাতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে হবে। 

বেশ কিছুদিন থেকেই একটা আলাপ চলে আসছে- মাঠে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা। কিন্তু সেটা কবে? সিলেট ও উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মানুষ দিশেহারা। সে অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠলে একটা আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। এ জন্য বারবার তারা তাদের  ও সকল গণতন্ত্রমনা মানুষদের প্রস্তুত থাকতে বলে আসছেন। ফলে মানুষও সে সময়ের অপেক্ষাতে। বিএনপি চাইছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক সরকার। সারাবিশ্বেই এখন একটা ক্রাইসিস পিরিয়ড। বাংলাদেশেও সেটা চলছে। এখানে সরকারকে দোষ দেয়ার মত কিছু হয়নি। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে পরিস্থিতি উন্নতির।


শেয়ার করুন