২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:৪৬:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


গাজায় হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে বাংলাদেশিরাও
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১১-২০২৩
গাজায় হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভে বাংলাদেশিরাও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ


গাজায় ইসরায়েলি হামলা ও বেসামরিক নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদ ও যুদ্ধবিরতি আহ্বানে গত ১৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি প্রবাসীরাও বিক্ষোভ র‌্যালি করেছেন। জুমার নামাজ শেষে প্রায় সব মসজিদ থেকে মুসল্লিরা র‌্যালিতে যোগ দেন।

নিউইয়র্কে প্রবাসীদের সবচেয়ে বড় মসজিদ ‘জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার’, জেবিবিএর উদ্যোগে জ্যাকসন হাইটস জামে মসজিদসহ বাংলাদেশিদের পরিচালিত বিভিন্ন মসজিদ থেকে র‌্যালি বের হয়। এতে নারীরাও অংশ নেন। একই সময়ে নিউইয়র্ক সিটির ইউনিয়ন স্কোয়ার, টাইমস স্কোয়ার, মেডিসন স্কোয়ার গার্ডেন, ব্রায়ান পার্ক এলাকায় শতসহস্র মানুষ ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানে জড়ো হন এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন, নিউইয়র্কের স্টেট গভর্নর ক্যাথি হোকুল এবং সিটি মেয়র এরিক অ্যাডামসের সমালোচনা করেন নিরীহ ফিলিস্তিনিদের হত্যায় ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য। গত কয়েক দিনের মতো এদিনও বেশকিছু বিক্ষোভকারী নিউইয়র্ক টাইমস অফিসের সামনে গিয়ে ফিলিস্তিনের প্রকৃত তথ্য উপস্থাপনের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউজার্সি, পেনসিলভানিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, টেক্সাস, মিশিগানেও হাজার হাজার মানুষ রাজপথে মিছিল করেন।

এছাড়া নিউইয়র্কে কংগ্রেসওম্যান গ্রেস মেং-এর অফিসের সামনে গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন বিপুলসংখ্যক প্রবাসীসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের লোকজন। এছাড়া ব্রুকলিনে কংগ্রেসে সংখ্যালঘিষ্ঠ দলের নেতা হাকিম জেফরিসের অফিসের সামনেও বিক্ষোভ করেছেন প্রবাসীরা।

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ ও ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ

যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) ওয়াশিংটন সদর দফতরের বাইরে পুলিশ ও ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ১৫ নভেম্বর বুধবার রাতে গাজার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো বিক্ষোভটি হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় এমন ঘটনা ঘটেছে। 

ইউএস ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল হিল এলাকায় প্রায় ১৫০ জন অবৈধভাবে এবং সহিংসভাবে প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার জন্য পুলিশকে দায়ী করে বলেছে, কর্মকর্তারা কোনো সতর্কতা ছাড়াই তাদের দলের কয়েকজনকে ধরে নিয়ে গেছে। বিক্ষোভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম বৃহত্তম শহর ফিলাডেলফিয়া থেকে আসা দানি নোবেল বলেছেন, পুলিশ কয়েকজনকে মাটিতে ফেলে টানতে শুরু করেছিল। এমন অহিংস প্রতিবাদকারী এবং আমাদের সম্প্রদায়ের সদস্যদের সহিংসতার মুখোমুখি হওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক। সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা একটি ভিডিওতে, পুলিশ ওই স্থানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি এবং হাতাহাতির ঘটনা দেখা গেছে। ক্যাপিটল পুলিশ সাংবাদিকদের একটি পৃথক নোটিশে বলেছে, তারা নিকটবর্তী হাউজ অফিস ভবনগুলোতে প্রবেশ এবং প্রস্থান নিষিদ্ধ করেছে।

কংগ্রেসের কর্মীরা একটি সতর্কতা পেয়েছিলেন, যেখানে বলা হয়েছিল, তাদের কাউকে কোনো হাউজ অফিস বিল্ডিংয়ে প্রবেশ বা প্রস্থান করার অনুমতি দেওয়া হবে না। তবে কর্তৃপক্ষ পরে প্রবেশদ্বারগুলো আবার খুলে দেয়। ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা শেরম্যান এক্সের একটি পোস্টে বিক্ষোভকারীদের ডেমোক্রেটিক সদর দফতরে প্রবেশের চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন। তবে, বিক্ষোভকারীরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ইফ নট নাউ এবং ইহুদি ভয়েস ফর পিস অ্যাকশনসহ ইহুদি দখলদারের বিরোধী গ্রুপগুলোর একটি জোটের মাধ্যমে এ প্রতিবাদটি সংগঠিত হয়েছিল। বিক্ষোভের সময় অনেক আইনপ্রণেতা ডিএনসি সদর দফতরে ছিলেন। ডিএনসি ইভেন্টে অংশ নেওয়া আইনপ্রণেতাদের গ্রুপের সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র অনুসারে, সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিস, হুইপ ক্যাথরিন ক্লার্ক এবং ককাস চেয়ার পিট আগুইলার অন্যান্য ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে একটি ডেমোক্রেটিক কংগ্রেশনাল ক্যাম্পেইন কমিটি (ডিসিসিসি) প্রার্থী সপ্তাহের নেতৃত্ব সংবর্ধনার জন্য ভবনে ছিলেন। তারা কতক্ষণ ভেতরে ছিলেন তা জানানো হয়নি। ক্যাপিটল পুলিশ জানিয়েছে, সব আইন প্রণেতার নিরাপত্তার জন্য এলাকা থেকে সরানো হয়েছে।

এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে মার্কিন কংগ্রেসের দুই ডজনেরও বেশি ডেমোক্রেটিক আইনজীবীর একটি দল একজোট হয়েছে। দলটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে। ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ডেমোক্র্যাট এখন ইসরায়েল-হামাস লড়াইয়ের সম্পূর্ণ বন্ধে সমর্থন করে। বুধবার প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক জরিপে আরো দেখা গেছে, আমেরিকান উত্তরদাতাদের প্রায় ৭০ শতাংশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানানোর পক্ষে। যখন কংগ্রেসের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ যুদ্ধবিরতি আহ্বানের বিরোধিতা করে চলেছে, তখন কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক কর্মী গাজায় ইসরায়েলের হামলা বন্ধ করার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। কংগ্রেসের চিঠিতে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে শিশু নিহতের উচ্চ সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগও তুলে ধরা হয়েছে।

ওয়াশিংটনে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে সমাবেশ

ফিলিস্তিনের গাজায় এক মাসের বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানি। দ্রুত যুদ্ধবিরতি কার্যকরে ইসরায়েলের ওপর বৈশ্বিক চাপও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সমাবেশ করেছেন হাজারো ইসরায়েলপন্থী। গাজায় যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান তাদের।

স্থানীয় সময় গত ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় গাজায় যুদ্ধবিরতির সমালোচনা করার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ইহুদি বিদ্বেষ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেন তারা। নীল ও সাদার মিশেলে ইসরায়েলি পতাকা ও যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল মলের সামনে প্রতিবাদে শামিল হন অনেকেই।

সমাবেশে জেরুজালেম থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজাক হেরজগ। তিনি বলেন, শুধু ইহুদি হওয়ার কারণে ইসরায়েলের ইহুদিরা হামলার শিকার হচ্ছেন। এটা সব সভ্য দেশ ও মানুষকে বিব্রত করেছে।

এছাড়া সমাবেশে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিন্নমতাবলম্বী নাতান শারনস্কি ও মার্কিন পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাকশুমারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ কংগ্রেস সদস্যদের একটি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর মার্কিন প্রশাসনের প্রভাবশালী অনেকে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়িয়েছেন ও সমর্থন জানিয়েছেন।

মার্কিন কংগ্রেসে সদ্য নিয়োগ পাওয়া স্পিকার মাইক জনসন বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ইসরায়েলের প্রতি যুদ্ধবিরতির আহ্বান আপত্তিজনক। এরপর বিক্ষোভকারী ব্যক্তিরা সমস্বরে স্লোগান দেন, যুদ্ধবিরতি নয়।

পল স্টুয়ার্টের বয়স হয়েছে ৬৭ বছর। সাবেক প্রকৌশলী ও অবসরপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি তিনি। থাকেন ভারমন্টে। সেখান থেকে ইসরায়েলের পক্ষে সমাবেশ করতে ওয়াশিংটনে এসেছেন পল। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের চলে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তাই আমার মতে, যুদ্ধবিরতির কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাদের (গাজাবাসী) ওপর হামাসের প্রভাব রয়েছে। তাই হামাস তাদের সেখানে রয়ে যেতে বলছে।’

শেয়ার করুন