২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:০৯:৫২ অপরাহ্ন


বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলি জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন করছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
বিশ্বের শীর্ষ ব্যাংকগুলি জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন করছে


জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় গ্লোবাল সাউথ এর দেশগুলো যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ পাচ্ছে তার ২০ গুণ বেশি অর্থায়ন জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বাণিজ্যিক কৃষিতে করছে বিশ্বের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক। ২০১৬ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি গৃহীত হওয়ার পর থেকে, ব্যাংকগুলো জীবাশ্ম জ্বালানির সম্প্রসারণের জন্য ৩ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার  ব্যয় করেছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে ব্যাংকগুলো ব্যয় করেছে ৩৭০ বিলিয়ন ডলার, এটিও জলবায়ু পরিবর্তনের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। জলবায়ু সংকট সৃষ্টির পেছনে অর্থায়ানকারী শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে রয়েছে এইচএসবিসি, সিটিগ্রুপ, জেপি মর্গান চেসসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ব্যাংক।

একশনএইড এর পরিচালিত এক সমীক্ষা অনুসারে এসব তথ্য উঠে আসে। সমীক্ষার ফলাফল গত ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার, ঢাকার একটি কনভেনশন সেন্টারে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত ’ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ ক্যাম্পেইনে উন্মোচন করা হয়। সমীক্ষায় দেখা যায়, বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলের শীর্ষ ব্যাংকগুলি জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বাণিজ্যিক কৃষিতে অর্থায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউরোপে এইচএসবিসি, বিএনপি পারিবাস, সোসাইটি জেনারেল, বার্কলেস; আমেরিকাতে সিটি ব্যাংক, জেপি মরগান চেজ, ব্যাংক অফ আমেরিকা; এশিয়ায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়না, চায়না সিআইটিআইসি ব্যাংক, ব্যাংক অফ চায়না এবং মিতসুবিশি ইউএফজে ফাইন্যান্সিয়াল। সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে গ্লোবাল সাউথের বাণিজ্যিক কৃষির অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান বায়ের ২০১৬ সাল থেকে ২০ দশমিক ৬ বিলিয়ন অর্থায়ন পেয়েছে। 

’ফান্ড আওয়ার ফিউচার’ ক্যাম্পেইন উদ্বোধনের সময় আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, “জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সমাধানের চেয়ে আমরা দ্রুত সমস্যা তৈরি করছি। সমস্যা সমাধান করতে এবং নীতি কার্যকর করতে আমাদের একটি সামগ্রিক কাঠামো তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশের কোন সুস্পষ্ট নেট শূন্য গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমণ লক্ষ্যমাত্রা নেই; যেটি স্থাপন করা প্রয়োজন এবং টেকসই সমাধানের জন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় প্রয়োজন। আমাদের সমাধানের জন্য অন্য দেশের উপর নির্ভশীল হলে চলবে না, আমাদেরকেই সঠিক পথ খুঁজে বের করতে হবে।” 

আইসিসিসিএডি এর পরিচালক ড. সালেমুল হক বলেন, “সরকারকে আমাদের বিশ্বের দূষণকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। বিশ্বে কিছু কিছু সরকার আছে যারা দূষণকারীদের পক্ষে কথা বলে। ধনী ব্যক্তিরা সমস্যা তৈরি করছে এবং দরিদ্র মানুষ তার পরিণাম ভোগ করছে। জলবায়ু অবিচারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের প্রত্যেককে সোচ্চার হতে হবে।”   

এ্যাকশন এইড বাংলাদেশে-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে যে কীভাবে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি আমাদের জলবায়ু সংকটের মূল চালক। আমাদের লক্ষ্য নির্ধারণ, জবাবদীহীতা এবং পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সুন্দর পৃথিবীর জন্য সিদ্ধান্ত  গ্রহণকারীদের দায়িত্বের সাথে অর্থায়ন করতে বলি। আমাদের অবশ্যই ন্যায়বিচার চাইতে হবে এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।”

 ডঃ খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি তার বক্তৃতায় বলেন, “জীবাশ্ম জ্বালানি ভর্তুকি থেকে সরে এসে বিকল্প টেকসই রুটের জন্য তা কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা ভালো যে সরকার নবায়ণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছে, কিন্তু আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য যদি হয় জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাস, তাহলে আমাদেরও একটি হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা প্রয়োজন।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের সাবেক পরিচালক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত তার বক্তব্যে বলেন, “আমাদের বাসযোগ্য ভবিষ্যতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংকগুলো টেকসই রেটিং পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। অর্থ যেমন জলবায়ু সংকটে ইন্ধন জোগাচ্ছে, তেমনি নিয়ন্ত্রকদের উচিত টেকসই এবং নবায়নণযোগ্য বিনিয়োগের দিকে ব্যাংকগুলোকে ধাবিত করা।

প্যানেল আলোচনায় আনোয়ার ফারুক, সাবেক সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার; শুভাশীষ বড়ুয়া হেড অব ইমপ্যাক্ট বিজনেস, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ; ড. আতিক রহমান, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ সেন্টার অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ; সামিয়া চৌধুরী, সিইও, এমটিবি ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য বিশিষ্ট আলচকরা বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন