২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:৫৭:২০ অপরাহ্ন


শীর্ষ নেতৃত্ব আটক সত্ত্বেও মাঠে সরব বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
শীর্ষ নেতৃত্ব আটক সত্ত্বেও মাঠে সরব বিএনপি


বিএনপির সব আন্দোলন ও প্রেসব্রিফিং এখনো থেমে নেই। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী অজ্ঞাতস্থানে বসে জুমে বিভিন্ন নির্দেশনা দেন দেশের বিভিন্নপ্রান্তে থাকা নেতাকর্মীদের। ২৮ অক্টোবরের পণ্ড হয়ে যাওয়া মহাসমাবেশ থেকেই মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পরের দিন হরতালের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপরের দুই কর্মসূচি অর্থাৎ প্রথম টানা তিনদিনের (৭২ ঘণ্টা) অবরোধ ও এরপর সোম ও মঙ্গলবারের (৫ ও ৬ নভেম্বর) অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। 

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে যে, কেন্দ্রীয়ভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, দায়িত্বশীল কোনো নেতা যদি গ্রেফতার হন। তাহলে পরবর্তী জন তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। এতে করে এ পর্যন্ত যত দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ পুলিশ গ্রেফতার করেছে, কমিটির পরবর্তী সময়ে যিনি রয়েছেন, তিনি আটক হওয়া ব্যক্তির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তাছাড়া যেখানে একই পদে একাধিক নেতৃত্ব থাকলে কোথাও কোথাও প্রেস রিলিজ দিয়ে দায়িত্বশীলের নাম ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। এতে করে বিএনপির নেতৃত্বে সংকট কম হচ্ছে। থেমে থাকছে না কিছুই।

তবে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করে সেখান থেকে তিনিই ডিজিটাল মিডিয়ার বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে বিএনপির তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে দলটির বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।  এতে করে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিও টের পাচ্ছে না দলটি। দেশের সর্বত্রই কেন্দ্র থেকে আহ্বান করা কর্মসূচি ব্যাপক উদ্দীপনার সঙ্গে পালনে সোচ্চার তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। যদিও দণ্ডিত হওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রকাশ করার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যা আইনত দ-নীয় বলেও জানানো হয়েছে। 

বিএনপির ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন থেকে গত শনিবার ৪ নভেম্বর পর্যন্ত সাতদিনে সংঘর্ষ সহিংসতার কতটা মামলা ও কতজন গ্রেফতার হয়েছে তার একটা বিবরণ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনুল ইসলাম (ঢাকা উত্তরের সদস্য সচিব), জহির উদ্দিন স্বপন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইমরান সালেহ প্রিন্স, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর প্রমুখ। এর আগে অর্থাৎ ২৮ অক্টোবরের পূর্বেই গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেছেন আমান উল্লাহ আমান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। 

এদিকে ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দলটির ২ হাজার ১৭২ নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এতে ওই সময় পর্যন্ত ৮৯টি মামলা হয়েছে বলে এক তথ্যে তারা জানায়। আর এর বিপরীতে বিএনপির ওইসব নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের তথ্য রোববার (৫ নভেম্বর) ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা থেকে জানানো হয়। 

ডিএমপির উপকমিশনারকে এন রায় নিয়তি জানান, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও সহিংসতার ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২ হাজার ১৭২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য মামলায় রাজধানীর পল্টন থানায় সবচেয়ে বেশি ১৪টি মামলা হয়েছে। রমনা মডেল থানায় ছয়টি মামলা করা হয়েছে। শাহজাহানপুর থানায়ও ছয়টি মামলা হয়েছে। 

বিএনপি অফিসে তালা

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের দাবিতে আহূত ২৮ অক্টোবর বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখের সড়কে অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিনের সৃষ্ট ঘটনার পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ। তালাবদ্ধ। সামনে কড়া পুলিশি প্রহরা। সামনে দিয়েও কাউকে হেটে যেতে দেওয়া হচ্ছে না ভেতরে ঢোকার চিন্তা তো দূরে থাক। 

এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর অবধি) দেখা গেছে ওই চিত্র। কড়া পুলিশি প্রহরা ছাড়াও ব্যারিকেড বসানো হয়েছে। বাড়তি সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও বাড়ানো হচ্ছে ওই এলাকায় নিরাপত্তা। যদিও বিএনপির অফিস খোলার মতো কেউ যোগাযোগ করছে কি না এটা জানা যায়নি। কারণ ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যেখানে হাজার হাজার আসামী নামী-বেনামি। বেনামী বলতে অজ্ঞাতনামা। যে কাউকে ওই অজ্ঞাতনামার মধ্যে নাম দিয়ে দিতে পারে পুলিশ যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা সেটা মনে করেন। এ ভয়ে বিএনপি অফিসে যারা রেগুলার যেতেন, তারা গা ঢাকা দেওয়া। 

এদিকে বিএনপির অফিসে ঢোকার গেটে ভেতরে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে দৃশ্যমান হচ্ছে ইসি থেকে আসা বিএনপিকে সংলাপে আহ্বান করা একটি চিঠি। কেউ ওই চিঠি খুলছেন না। মহাসচিব বরাবর ওই চিঠি। কিন্তু মহাসচিব মহদয় বর্তমানে কারাগারে। এটা ইসিও ভাল জানেন। তবু তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। বিএনপি অফিসের সম্মুখ রাস্তায় যানবাহন ঠিকই চলছে। কিন্তু আশপাশের দোকানপাট ঠিকমতো খোলা হচ্ছে না। একটা থমথমে ভাব সেখানে। 

তবে বিএনপির এ কেন্দ্রীয় কারাগার ২৮ অক্টোবরের পর ‘ক্রাইম সিন’ দেখিয়ে পুলিশ এখানে ঢুকতে দেওয়া নিষিদ্ধ করেছিল। হলুদ কালারের ফিতা দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে ক্রাইম সিন দেখানো হয়। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার পর হলুদ ফিতা ব্যারিকেড তুলে নেওয়া হয়।

গত ৩১ অক্টোবর দুপুরে ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে দেওয়া বেষ্টনী সরিয়ে নেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান। হায়াতুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে ক্রাইম সিন বেষ্টনী সরিয়ে নিয়েছে সিআইডি।’ তিনি আরো বলেন, ‘কার্যালয়ের চাবি বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছেই রয়েছে।’

শেয়ার করুন