জ্যামাইকায় এক নার্সকে হত্যার অভিযোগে নতুন প্রজন্মের দুই জন বাংলাদেশি আমেরিকানকে সাত বছর করে জেল দেওয়া হয়েছে। এই দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত আমেরিকান হচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী আলআমিন আহমেদ এবং আরেকজন হচ্ছেন ২৫ বছর বয়সী মীর ফাহমিদ। আলবেনিতে বসবাসকারী আলআমিন আহমেদ ২০২৩ সালের মে মাসে দোষ স্বীকার করে এবং জ্যামাইকায় বসবাসকারী মীর ফাহমিদ দোষ স্বীকার করে। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত গত ২২ আগস্ট মীর ফাহমিদের মামলার রায় ঘোষণা করে। এবং গত ৬ জুলাই আলআমিনের মামলার রায় ঘোষণা করে।
ঘটনাটি ঘটে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের ২০ তারিখে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের মধ্যে একজনকে ঘটনাস্থল থেকেই গ্রেফতার করে। অন্যদিকে আরেকজনকে গ্রেফতার করে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে। আমেরিকার মত দেশে থেকে তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে এবং যে কারণে অন্যজনকে শনাক্ত করতে নিউইয়র্কের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১৬ মাস সময় লাগে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘসময় তদন্ত করে তাকেও শনাক্ত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত দুই বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚ত আমেরিকান হচ্ছেন আলআমিন আহমেদ এবং মীর ফাহমিদ। আলআমিন ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হলেও মীর ফাহমিদকে ১৬ মাস পরে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দুই জনেরই বয়স ২৫। তারা দুই জনই বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যামাইকায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। যদিও তারা নির্দোষ দাবি করে কোর্টে কাগজ জমা দিয়েছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই জনই দোষ স্কীকার করেন।
কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি মিলিন্ডা ক্যাটস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ২০২০ সালের ২০ নভেম্বর ছিল মীর ফাহমিদের জন্মদিন। সেই জন্ম দিনের পার্টির আয়োজন করা হয় ব্রæকলিনে। সেখানে তারা অংশগ্রহণ করেন। দুই জনই ছিলেন নেশাগ্রস্ত। পার্টি শেষে তারা ফেরার পথে তারা মেইন স্ট্রিট এবং ইউনিয়ন ট্রার্নপাইকের একটি স্টেশন থেকে তেল নেন। তেল নেয়ার পরই মাতাল অবস্থায় তারা বেশ কয়েকটি রেড লাইট অমান্য করেন এবং ৯০ মাইলের বেশি স্পিডে গাড়ি চালাতে থাকেন। এক পর্যায়ে কিউগার্ডেন হিলসে এসে ভোর রাত ৫টা ৩৩ মিনিটে অন্য একটি গাড়িকে প্রচন্ডভাবে ধাক্কা দেন। গাড়িতে ছিলেন কুইন্স জেনারেল হাসপাতালে নার্স ড্যানিয়ের ক্রাইফোর্ড। ওই সময় ৫২ বছর বয়সী ড্যানিয়েল ক্রাইফোর্ড পারসন ব্লুবার্ড ধরে কাজে যাচ্ছিলেন। তিনি যখন তার টয়োটা গাড়ি নিয়ে ইন্টারশেকনে প্রবেশ করেন ওই সময়ই আলআমিন আহমেদ তার সিলভার রঙের মার্সিডিজ গাড়ি দিয়ে এবং মীর ফাহমিদ তার লাল হোন্ডা একড গাড়ি দিয়ে প্রচন্ডভাবে আঘাত করেন। সঙ্গে সঙ্গেই ড্যানিয়ের গাড়িটি চুমার হয়ে যায়। মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটানোয় আলআমিনের গাড়িও ভেঙেচুরে বিকল হয়ে যায়। পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করে এবং গাড়ি জব্দ করে। অন্যদিকে মীর ফাহমিদ ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। পালানোর আগে মীর ফাহমিদ এবং আলআমিন রাস্তায় লাগানো বিভিন্ন সারভ্যালেন্স ভিডিও ক্যামেরাও ভেঙে ফেলে। যাতে করে কোন ডকুমেন্ট না থাকে। ওই অবস্থাতেই রাস্তায় পড়েছিলেন ড্যানিয়েল। তাকে যখন পুলিশ এসে তার কর্মস্থলে নিয়ে যায় সেখানে ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। এ দিকে পুুলিশ আরেকজনকে খুঁজতে থাকে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ অবশেষে মীর ফাহমিদকেও গ্রেফতার করে। দুই জনের বিরুদ্ধে নার্স ড্যানিয়েলকে হত্যা অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে মাদক গ্রহণ, বিপজ্জনক ড্রাইভিং-ট্রাফিক ভায়োলেন্সের অভিযোগ আনা হয়।