২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:৩৩:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে কেন অব্যাহত সংকট?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২২
নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারে কেন অব্যাহত সংকট?


বাংলাদেশে বাজার মূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতি বা কৃত্রিম পণ্য সংকট- এগুলো  এক সমাজের একশ্রেণির লোকের কিছুই যায় আসে না। বিভিন্ন উপায়ে তাদের যে ইনকাম তাতে বাড়তি মূল্যে হোক আর না হোক ওগুলো থোড়াই কেয়ার। এদেরকে প্রায়শ জ্ঞান বিতরণেও দেখা যাবে সর্বাগ্রে। কিন্তু একজন দিনের পরিশ্রম দিয়ে সন্ধ্যায় ক্রয় করতে যাওয়া নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে গেলে কোনটা রেখে কোনটা নেবে, প্রয়োজনের তুলনায় কতটা কমালে দিন চলবে নানা হিসেবের জটিলতায় চুল টেনে ছিঁড়তে হয়। নিম্নবিত্ত কিংবা নিম্নমধ্যবিত্ত। তাদের সংসার চালানো দায়। বাচ্চার মুখে কিংবা বয়স্ক বাবা-মার মুখে খাবার তুলে দেয়ার যে চ্যালেঞ্জ তাতে তারা হিমশিম খান প্রতিনিয়ত। 

বাজারে চাল, তেল, পেঁয়াজ, মরিচ,লবণ, চিনি এমন কোনো ভোগ্যপণ্য বাংলাদেশে ইেন, যার মূল্য কোনো না কোনো সময়ে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়নি। যার চরম কষাঘাতে ক্লিষ্ট তারা। দেখা গেছে,  অনেক ক্ষেত্রে প্রতিটি পণ্যের ভরা মৌসুমে সরবরাহ সংকট না থাকা সত্ত্বেও একটি বিশেষ মহলের কারসাজিতে কৃত্রিম উপায়ে সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে। ক্রেতা সাধারণকে উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে বাধ্য করা হচ্ছে। চিহ্নিত মহল বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভ করছে। শেষ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই শেষ ভরসা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। আর তখনি সংশ্লিষ্ট সবার ম্যাচে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। 

সর্বশেষ উদাহরণ চালের ভরা মৌসুমে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। সবাই বলছে কৃষক বরাবরের মতো বাম্পার ফলন উপহার দিয়েছে। সরকারের ধান চাল সংগ্রহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে, মিল-মালিকরা সততার সঙ্গে ধান থেকে চাল তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিলে সংকট থাকার কথা নয়। এগুলো দেখার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট কর্তৃপক্ষ আছে। অথচ সংকট। কিন্তু কেন?

স্বীকার করবো অকাল বৃষ্টি, আকস্মিক বন্যায় হাওর অঞ্চলে কিছু ধান তলিয়ে গাছে, কিছু অঞ্চলে কৃষক ধান কাটার পর্যাপ্ত শ্রমিক পায়নি সময় মতো। কিন্তু এই পরিমাণ প্রকৃত উৎপাদনের তুলনায় অতি নগণ্য। যার ফলশ্রুতিতে বাজারে সংকট হবার কথা নয়। আর প্রায় প্রতিবার যখন বন্যায় হাওর অঞ্চল এবং উপকূল এলাকার ধান তলিয়ে যায় বলা হয় বাঁধ ভেঙে গেছে। কোটি কোটি টাকা প্রতি বছর বরাদ্দ দেয়া হয় বাঁধ সংরক্ষণে। এগুলো সঠিকভাবে খরচ হয় না। কর্তৃপক্ষ এবং সরকার ঘনিষ্ট মহল লুট পাট করে। তাই প্রতিবছর কিছু মানুষ নিঃস্ব হয়।  এদের দেখার কেউ নেই।  হাওর অঞ্চল এবং উপকূলে টেকসই বাঁধ দিয়ে ফসল রক্ষার ব্যবস্থা না করার ডে দায়িত্ব কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের ওপর বর্তায়।

এর পর আসুন খাদ্যপণ্য,কৃষিপণ্য সরবরাহ চেইন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়। কৃষকের কাছ থেকে ধান চাল কেনায় সরকারি ব্যাবস্থায় গাফলতি আছে, প্রতিটি জেলায় উপজেলায় নির্দষ্ট কর্তৃপক্ষ কেন কৃষকের দুয়ার থেকে নির্ধারিত মূল্যে নির্ধারিত সময়ে সংগ্রহ করতে পারে না? কেন কৃষক ন্যায্য মূল্য পায় না? হয়রানির মুখোপেক্ষী হয়? বাংলাদেশের বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন অঞ্চলে খাদ্যপণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে কি? 

কৃষক বাধ্য  হয় মিল-মালিকদের শরণাপন্ন হতে। অনেক ক্ষেত্রে কৃষক উৎপাদন খরচের থেকে কম মূল্যে শস্য বিশেষত ধান মিল-মালিকদের কাছে দিয়ে দেয়। আর অনেক ক্ষেত্রে মিল-মালিকরা অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় পণ্য বাজারে সঠিক সময়ে ছেড়ে না দিয়ে ধরে রেখে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে।মিল-মালিক থেকে পণ্য যায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে, সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবহারকারীদের কাছে বিপণন করে। এতো সব হাত ঘোরার প্রতিটি স্তরে চাঁদাবাজি দুর্নীতি মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। দুই প্রান্তের দুই স্টকে হোল্ডার কৃষক/ উৎপাদনকারী এবং ক্রেতা নায্যমূল্যে বঞ্চিত হয়। সরকাকরের বাজার ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, সরবরাহও চেইন ব্যবস্থাপনায় সকল ক্ষেত্রে সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের কারসাজি মূলত সংকটের জন্য দায়ী।

বিষয়গুলো কিন্তু সবার জানা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মিডিয়া নিয়মিত সতর্ক করছে সরকারসহ সবাইকে।  অথচ প্রধানমন্ত্রীর মুখ চেয়ে বসে থাকে সবাই। বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ী, সরকারের একজন উপদেষ্টা দেশের অন্যতম বৃহৎ কর্পোরেট হাউজের মালিক। ট্রেডবডিগুলোর নেতৃত্বেও রয়েছে সরকার ঘনিষ্ঠ মহল। সরকাকরের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট কর্মরতারা আছেন মাঠ পর্যায়ে। এমন অবস্থায়  অশুভ সিন্ডিকেট নিয়মিত বাজার অস্থির করে জনজীবন অতীষ্ঠ করে রাখবে এটি দীর্ঘদিন মেনে নেয়া যায় না। কিন্তু জনগণ অসহায়।  কি করবে কোথায় যাবে? দেশে রাজনীতিও পক্ষঘাতদুষ্ট। কারো কোনো দায়িত্ব নেই।

বিদ্যমান অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে সরবরাহও চেনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। উৎপাদনকারীদের সঙ্গে বাজরের শেষ প্রান্তে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করতে হবে। টেলিমার্কেটিং ব্যবস্থা উন্নত হলে মধ্যসত্বভোগীরা সংকট সৃষ্টি করতে পারবে না। সরকারকে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রদান করে সংগ্রহের পরিমাণ বাড়াতে হবে, খাদ্যশস্য মজুদ ব্যবস্থা আরো সুনিয়ন্ত্রিত করতে হবে। আশা করি অবিলম্বে পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হলে খাদ্যপণ্য সরবরাহও ব্যবস্থায় এটি বাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে। পথে পথে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি করতে হবে। আমি মনে করি না, এগুলো কিছুই সরকাকরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে যদি সংশ্লিষ্ট মহল আন্তরিক হয়।


শেয়ার করুন