২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৪১:৩৯ পূর্বাহ্ন


ভিসানীতির প্রশ্নে জয়ের নাম কেন বললেন প্রধানমন্ত্রী
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
ভিসানীতির প্রশ্নে জয়ের নাম কেন বললেন প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী


জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্ক আসে গত ১৭ সেপ্টেম্বর। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন অধিবেশনে যোগদান করেন এবং ২২ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেন, একই দিন তিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন এবং নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় ভাষণ দেন। পর দিন অর্থাৎ ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন। বর্তমানে তিনি ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর সেখানে তার জন্মদিন পালন করা হবে। একটি সূত্রে জানা গেছে, ২৩ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি ওয়াশিংটন থাকবেন। কিন্তু কোনো হাই লেভেল বৈঠক নেই। ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন। লন্ডন থেকে ৩ অক্টোবর ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর এবারের আমেরিকা সফর ছিল একেবারেই অন্তসার শূন্য। ছবি তোলা ছাড়া কোনো কাজই হয়নি। বলা যায়, শূন্য হাতে ফিরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী। চেষ্টা তদবির যে হয়নি তা কিন্তু নয়, সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নানা রহস্যের জন্ম দিলেন, যা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের জন্য মহাবিপজ্জনক।

২২ সেপ্টেম্বর বিকালে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে একজন সাংবাদিক মার্কিন ভিনানীতির প্রয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানাতে চাইলে তিনি বলেন, কে স্যাংশন দিলো, কাকে দিলো তাতে কিছু যায় আসে না। নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশের জনগণ এখন ভোটের অধিকার সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ভয় পাওয়া বা ঘাবড়ানোর কিছু নেই। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বহু নেতাকর্মীর রক্তের বিনিময়ে নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে নিয়ে এসেছেন। জনগণের ভোটেই আমরা নির্বাচিত, কেউ ক্ষমতা হাতে তুলে দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মীয়স্বজন থাকলেও কী করবে। ঠিক আছে, আমার ছেলে (তার উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়) তো এখানেই (আমেরিকা) আছে। সে-তো এখানে পড়াশোনাও করেছে, ব্যবসা-বাণিজ্যও করছে, বিয়ে করেছে, তার মেয়ে আছে, সবই আছে তার। সম্পত্তি, বাড়িঘর সবই তার আছে, যদি বাতিল করে করবে, তাতে কিছু আসে যায় না। আমাদের তো বাংলাদেশ আছে, খটকাটা এখানেই। ভিসানীতি প্রয়োগের সঙ্গে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পর্ক কী? কেই-বা হঠাৎ প্রধানমন্ত্রী তার ছেলের প্রসঙ্গ টানলেন? ছেলের প্রসঙ্গ তো এখানে উত্থাপনের কোনো প্রয়োজন ছিল না। তাহলে কেন? এ নিয়েই দেশে এবং প্রবাসে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে! দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। তাহলে কী..।

তিনি আরো বলেন, বাইরের দেশ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হলে বাংলাদেশের জনগণও তাদের স্যাংশন দেবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এটা বলছে, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও তো সমস্যা আছে। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি, তারা তাদের বিরোধী দলের সঙ্গে কী করছে। আমরা তো তা-ও করিনি।

আগামী নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে এমনকি বিদেশ থেকেও যদি কোনো প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না। তিনি আগামী সাধারণ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় গ-গোল করে কেউ অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতায় এলে তাদেরও বিচার করা হবে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বিদেশ থেকে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপ জনগণ মেনে নেবে না।

মো. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দল সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করে। যদি কোনো কারণে নির্বাচন বানচালের কোনো পদক্ষেপের ক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ নেবে, বাংলাদেশের জনগণ তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আশা করেন, বিরোধী দলসহ নির্বাচন বানচালের প্রচেষ্টাকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। শেখ হাসিনা বলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এটা ভালো হবে। কারণ বিএনপি জোট ২০১৩-১৪ সালের মতো নির্বাচন বানচালের লক্ষ্যে কোনো অগ্নিসংযোগ করতে পারবে না। যে দেশ ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তারা উভয় পক্ষ থেকে বা নিরপেক্ষভাবে বিষয়টি বিবেচনা করবে।

তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগকে টার্গেট করলে আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ কারো শক্তির ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় আসেনি। আমি জনগণের শক্তি এবং তাদের ভোটে ক্ষমতায় এসেছি। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তা সত্ত্বেও সরকার প্রধান হিসেবে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি খালেদা জিয়াকে কারাদন্ড স্থগিত করে বাড়িতে থাকার এবং হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার সরকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও)-এর আওতা থেকে বের করে এনে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রথম আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তাদের সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তারা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স এবং ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রবর্তনের প্রস্তাব করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ অসংখ্য নির্বাচন করেছে যেখানে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে কেউ ক্ষমতায় আসতে চাইলে তাদের সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। যারা বিশৃঙ্খলা বা দেশের সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাদের ব্যাপারে তিনি দেশবাসীকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের কোনো সুযোগ নেই। দুর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যাপক দুর্নীতি থাকলে বাংলাদেশ বিশাল উন্নয়নের রোল মডেল হতে পারতো না। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার শুধু মেগা প্রকল্পই তৈরি করেনি, উন্নয়নকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

যুদ্ধ ও সংঘাতের পথ পরিহার করে জনগণ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্থায়ী শান্তি, মানবজাতির কল্যাণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ সময় ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী বাংলায় ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক ঝুঁকি, খাদ্যনিরাপত্তা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব ইস্যুতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপও তুলে ধরেন। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক গঠনেরও প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। সন্ত্রাসবাদ কার্যক্রম সংঘটনে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার হতে দেওয়া হয় না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার বিষয়টি যাতে উন্নয়নশীল দেশের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে ব্যবহৃত না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। 

তিনি বলেন, এ বছর সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘আস্থার পুনর্নির্মাণ এবং বিশ্বব্যাপী সংহতির পুনরুজ্জীবন : আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা আরো জোরদার করে ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি এবং এর আওতাধীন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের মাধ্যমে সবার জন্য শান্তি, সমৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।’ আমি মনে করি, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা ও জটিলতার প্রেক্ষাপটে এবারের প্রতিপাদ্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। 

আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দক্ষতা ও বৈধতা নিয়ে মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। এর ফলে একটা শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে অর্জিত সাফল্য ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। তিনি বলেন, করোনা মহামারি ও জলবায়ু সংকটের প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী  খাদ্য, অর্থায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নয়ন-লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, এ প্রসঙ্গে, আগামী বছর ‘সামিট অব দ্য ফিউচার’ আহ্বান করার উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করছি, এই প্রক্রিয়াটি ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি অর্জনের জন্য আমাদের প্রচেষ্টার পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। 

সবার জন্য নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য অভিন্ন সংকট মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এজন্য, আমাদের অবশ্যই বিভাজন, সঙ্কীর্ণতা ও বিচ্ছিন্নতার বিপরীতে একতা, সহমর্মিতা ও বহুপাক্ষিকতা বেছে নিতে হবে। শান্তি ও টেকসই সমৃদ্ধি অর্জনের উদ্দেশ্যে আমাদের অবশ্যই সুবিচার, ন্যায় ও ন্যায্যতার নীতি অনুসরণ করতে হবে, যার ভিত্তি হবে জাতিসংঘ সনদ এবং ২০৩০ এজেন্ডা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাস্তব রূপ দিতে আমরা মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও আধুনিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছি। তার দেখানো পথে বাস্তবমুখী নীতিগ্রহণ, সুদূরপ্রসারি চিন্তা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে পেরেছি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ থেকে ২০২২ সালে ১৮.৭ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ৫.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে পেরেছি। 

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে আমরা এসডিজি অর্জনে অবিচলিত অগ্রগতি সাধন করেছি। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এক্ষেত্রে গুরুতর চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। করোনা ভাইরাস, বিভিন্ন মানবসৃষ্ট সংকট এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় চ্যালেঞ্জগুলোকে বহুগুণে জটিল করেছে।  সে কারণে এই বছর জাতিসংঘ এসডিজি সম্মেলনের সফল আয়োজন এবং এতে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বাস করি, এই রাজনৈতিক ঘোষণা ২০৩০ উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে অর্থায়ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় যে, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে যেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তেমনি এটি সংকটের সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ এমন একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক অবকাঠামো আমাদের জরুরিভাবে প্রয়োজন, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিশেষ ছাড়ে, কম খরচে, কম সুদে এবং ন্যূনতম শর্তে অর্থ সংগ্রহে সহায়তা করবে। তাছাড়া জরুরি অবস্থা এবং দুর্যোগের সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকার থাকতে হবে। সব ঋণব্যবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।  

৫০০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রণোদনা প্যাকেজ প্রস্তাবনার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই প্রস্তাবনার দ্রুত বাস্তবায়ন দাবি করছি। একসময় প্রধানমন্ত্রী করোনা-পরবর্তী সময়ে নেওয়া সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয় তুলে ধরেন। 

তিনি বলেন, বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের ০.৪৭ শতাংশেরও কম অবদান রাখলেও বাংলাদেশ জলবায়ুজনিত ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি। এর সমাধানের লক্ষ্যে জরুরি, সাহসী এবং উচ্চাভিলাষী সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরের আন্তঃসংযুক্ত সংকটগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি এবং পণ্যমূল্য বৃদ্ধি করেছে। জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে আমাদের আমদানি বিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা আমাদেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। 

এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, আমরা প্রতিটি মানুষের জন্য খাদ্য নিশ্চিত করেছি। আমরা নিম্ন আয়ের ১ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে চাল ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। আমি বিশ্বাস করি যে, বর্তমান বৈশ্বিক সংকটসমূহ আমাদের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। তবুও উন্নয়ন সহযোগী এবং উন্নত দেশসমূহকে আমাদের এ যাত্রায় তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি; যা স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলায় আমাদের জন্য সহায়ক হবে। স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রযোজ্য বিশেষ সুবিধাসমূহ আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যাপ্তিকাল মোতাবেক প্রদান করার জন্য আমি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অবদান বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি আমাদের অঙ্গীকারেরই বহিঃপ্রকাশ। অদ্যাবধি ১ লাখ ৮৮ হাজার বাংলাদেশি নারী ও পুরুষ ৪০টি দেশে ৫৫টি শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা তাদের পেশাগত দক্ষতা এবং কাজের জন্য সমাদৃত।

জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নির্বাচিত সদস্য হিসেবে আমরা সারা বিশ্বের আপামর জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণে অন্য সদস্যদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। আজ এই অধিবেশনে আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, বাংলাদেশ সংবিধানের আলোকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে যাবে। তিনি বলেন, এ বছর ফিলিস্তিনের ওপর বিপর্যয় নিয়ে আসা- ‘নাকবা’র ৭৫ বছর পূর্ণ হলো। ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকার অর্জনের পথ এখনো আশার মুখ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। গত মাসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার ছয় বছর পূর্ণ হয়েছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা অস্থায়ীভাবে তাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু, পরিস্থিতি এখন আমাদের জন্য সত্যিই অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘায়িত উপস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং সামাজিক-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায় এবং সেখানে তারা শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করতে আগ্রহী। আসুন আমরা এই নিঃস্ব মানুষের জন্য তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করি। 

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার বৈঠক

বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। গত ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের ফাঁকে তাদের এই সাক্ষাৎ হয়। বৈঠকে তারা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক সমস্যা নিয়েও আলোচনা করেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে উজরা জেয়া নিজেই এক্সে (সাবেক টুইটার) সচিত্র একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ, কানাডা, গাম্বিয়া, মালয়েশিয়া, তুরস্ক, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টের আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আবারও যুক্ত হতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি। আমরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, অংশীদারিত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছি এবং ৯ লাখ ৬০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদারতার সঙ্গে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছি। এর আগে ১১ জুলাই উজরা জেয়া বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সফরে সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করেন। জোর দেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর। এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উজরা জেয়ার সাক্ষাৎ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। তিনি জানান, উজরা জেয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অগ্রাধিকার হচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করা। এ সময় উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের জন্য ১১৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে এক নাগরিক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরীর পরিচালনায় ম্যানহাটনের মেরিয়ট মাঙ্কুস হোটেলের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় অন্যদের মধ্যে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আব্দুল সোবহান গোলাপ এমপি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান, স্টেট আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল।

প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিএনপি নির্বাচন চায় না বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়? তাদের নেতা কে?’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘পলাতক আসামি, অর্থ চোর, অস্ত্র চোরাচালানকারী, খুনি ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারী (তাদের নেতা)- এই যদি একটি দলের নেতা হয় তবে মানুষ কেন সেই দলকে এবং তাকে ভোট দেবে?’ তিনি বলেন, তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পায়নি এবং ২০১৪ সালে নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। নির্বাচন ঠেকানোর নামে অগ্নিসংযোগ করে মানুষ হত্যার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এখনো সেই পোড়া মানুষের মুখ দেখলেই বোঝা যাবে কী জঘন্য কাজ হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এটি করেছে, তাদের মতো আর কেউ ঘৃণ্য হতে পারে না।’ আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের অন্তত অনুধাবন করা উচিত যে, তারা নৌকায় (আ.লীগের নির্বাচনী প্রতীক) ভোট দিয়ে স্বাধীনতা লাভ করেছে এবং নৌকার পক্ষে ভোট দেওয়ায় আজ জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। সরকার প্রধান বলেন, ‘নৌকায় (দেশের জনগণ) ভোট দেওয়ার কারণে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, যারা বিদেশে থাকেন, তাদের বুঝতে হবে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে বিদেশে কারো সঙ্গে কথা বলা যেত না, এখন মানুষ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে।

প্রধানমন্ত্রী অপপ্রচারে কর্ণপাত না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেন সবসময় উজ্জ্বল হয়, তা আপনাদের সবাইকে সর্বদা মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আজ যখন বিশ্বনেতারা (বাংলাদেশের সাফল্য) স্বীকৃতি দিচ্ছেন, তখন আমাদের কিছু পাপাচারী যা বলছে তাতে মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্তরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং তাদের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ও অ্যাপসের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে।’

নিন্দুকদের মুখোশ উন্মোচন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা অপপ্রচার করলে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘মানুষের সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা দরকার।’ এই চোরচক্র থেকে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

জো বাইডেনের সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাইডেন ৭৮তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে আগত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে স্থানীয় সময় গত ১৯ সেপ্টেম্বর  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট-এ ভোজসভার আয়োজন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর সায়মা ওয়াজেদ এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। ভোজসভায় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

শেয়ার করুন