আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিরন্তন ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে ব্যর্থ হলে জাতি আমাদের ক্ষমা করবে না এবং আগামী ১০০ বছরে আমরা দাঁড়াতে পারবো না। মনে রাখতে হবে ’৭১ সালের লড়াই আমাদের এখনো শেষ হয়নি। আমরা এখনো মুক্তির জন্য লড়াই করছি। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশ দিয়েছেন। আর তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তির জন্য লড়াই করছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সব আসনে জয় লাভ করলেও ২টি আসনে জয়লাভ করেননি। তা ছাড়া ২৮ শতাংশ লোক বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেয়নি। সেই ২৮ শতাংশ বাঙালি হচ্ছে অবয়বে বাঙালি। আর বাকিরা প্রকৃত বাঙালি। সেই অবয়বে বাঙালিরাই শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র করছে। এবারও নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এই ষড়যন্ত্র আমাদের রুখতে হবে। গত ১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের গুলশান টেরেসে এক সংবর্ধনা সভায় পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ এসব কথা বলেন। নাগরিক কমিটির নামে আয়োজিত এই সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্বে করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা হিন্দাল কাদির বাপ্পা। এ সময় মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম।
নাগরিক কমিটির নামে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হলেও মূলত এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের একটি অংশের আয়োজন। সংবর্ধনা সভায় ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, বাঙালির ইতিহাস হচ্ছে ৪ হাজার বছর আগের ইতিহাস। এই ৪ হাজার বছরে আমরা আমাদের শাসন করিনি। অন্যরা আমাদের শাসন করেছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রণ নিতে পারিনি। আমরা ছিলাম চিন্তাবিদ। আর লড়াই করেছি ক্ষুধা আর দারিদ্রের সাথে। বাঙালিরা চিন্তাবিদ ছিলেন বলেই ৩ বাঙালি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বার বার আমাদের লুন্ঠন করা হয়েছে। ব্রিটিশরা আমাদের লুন্ঠন করেছে। সর্বশেষ পাকিস্তানিরা আমাদের লুণ্ঠন করেছে। বাঙালির সমস্যা হচ্ছে আমরা স্মৃতি-বিস্তৃতি জাতি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হবার পর বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, আমরা টিকবো না। দেশ স্বাধীনের পরই যুদ্ধের কারণে আমাদের খাদ্য ঘাটতি ছিল, ক্ষুধা ছিল, দুর্ভিক্ষ ছিল, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল। আমাদের রফতানি ছিল না, শিল্পকারখানা ছিল না, রিসোর্স ছিল না। তাদের মুখে ছাই দিয়ে শেষ হাসিনার নেতৃত্বে আজকে বাংলাদেশ কোথায়? আমাদের মাত্র ৪ শতাংশ জিডিপি গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৫ শতাংশে। করোনা আর ইউক্রেইন যুদ্ধ না হলে আমাদের জিডিপি থাকতো ১০ শতাংশের ওপরে। এটাই আজকের বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪০ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৬তম অর্থনীতির দেশ, আগামীতে হবো ২৪তম। আমরা হলাম অসাধ্যকে সাধ্য করা জাতি- এটা সবার মনে রাখতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে দুই ধরনের বাঙালি রয়েছে। একটি হচ্ছে প্রকৃত বাঙালি, আরেকটি হচ্ছে অবয়বে বাঙালি। অবয়বে বাঙালি কারা? আপনারা জানেন এক শ্রেণির লোক ব্রিটিশের দালালি করেছে, মুঘলদের দালালি করেছে, পাকিস্তানিদের দালালি করেছে। এই পাকিস্তানের দালালরাই হচ্ছে অবয়বে বাঙালি। তিনি বলেন, ’৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু সব আসলে জয়লাভ করলেও ২টি আসনে জয়লাভ করেননি এবং ২৮ শতাংশ লোক বঙ্গবন্ধুকে ভোট দেননি। এই ২৮ শতাংশ লোকই হচ্ছে অবয়বে বাঙালি। যুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু কিছু যুদ্ধাপরাধী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু এরা শুরু থেকেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, তারা অভিযোগ করেছে যে, ২০০৯ সাল থেকে নাকি র্যাব কর্তৃক ৬০০ লোক গুম হয়েছেন। আমি তখন আমেরিকায় ছিলাম। অথচ আমি র্যাবে ঢুকেছিলাম ২০১৫ সালে। তাহলে আমাকে কেন ২০২১ সালের স্যাঙ্কশনে নেয়া হয়েছে? আমার পূর্বপুরুষ বা দাদারা যা করেছে তার জন্য আমাকে কেন শাস্তি ভোগ করতে হবে? তিনি বলেন, আমি মার্কিন প্রশাসন অথবা আমেরিকানদের দোষারোপ করতে চাই না। কারণ, এটা করেছে তারাই, যারা সত্তর সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নৌকায় ভোট দেয়নি, যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিল। যারা আসলে াবয়বে বাঙালি। ওই গোষ্ঠী বার্ষিক ২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। সেই ভাড়াটে ফার্মগুলো টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাঙ্কশনের (নিষেধাজ্ঞা)। তাদের সাথে রয়েছে অধিকার, ফদিকার জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা। এসব সংস্থা সৃষ্টি করা হয়েছিল রাজাকার মোজাহিদ যখন মন্ত্রী ছিলেন। তারাই পশ্চিমাদের উল্টা-পাল্টা বুঝাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছি। এখন চলছে মুক্তির লড়াই। এ লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এই লড়াইয়ে জিততেই হবে। দেশের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের বিরুদ্ধে এবং অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা রুখে দিতে হবে। এটা রুখতে না পারলে বা ব্যর্থ হলে জাতি আমাদের ক্ষমা কতরবে না এবং আগামী ১০০ বছরেও আমরা দাঁড়াতে পারবো না।
তিনি বলেন, এক সময় মনে করা হয়েছিল যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাংবাদিকতায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখছি আমরা? আশা করা হয়েছিল সমাজের তথ্যচিত্র সবিস্তারে উঠে আসবে। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে যতো ভুয়া, আজগুবি তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে।
পুলিশ প্রধান বলেন, ২২ জন তথ্য সন্ত্রাসী রয়েছে। এদের জবাব দিতে হবে। তথ্য সন্ত্রাসীরা দেশের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। নোংরা জিনিস ফেসবুকে দেখামাত্র ফ্লাশ করা দরকার। এর বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যকে উপস্থাপন করতে হবে, তাহলেই মিথ্যার পরাজয় ঘটবে।
বেনজীর আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় পরিণত করার চলমান লড়াইয়ে আমি সবার সঙ্গে রয়েছি। আমি আমার বিবেকের কাছে পরিষ্কার। তিনি বলেন, দেশকে সবার আগে রেখে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলার পথকে সুগম রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আইজিপি বলেন, ২০০৯ সালে আমি এই নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে চাকরিতে ছিলাম। প্রকৃত সত্য হলো, যে ৬০০ লোক গুমের অভিযোগ করা হয়েছে তাদের কোনো তালিকা কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।