২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:৩০:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সুপ্রিম কোর্টে ফেডারেল সন্ত্রাসী তালিকার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার শুনানি
ওয়াচলিস্ট ব্যবহার করা হয় মুসলমানদের অপমান ও হয়রানির জন্য : কেয়ার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০১-২০২৪
ওয়াচলিস্ট ব্যবহার করা হয় মুসলমানদের অপমান ও হয়রানির জন্য : কেয়ার শুনানির পর ইউএস সুপ্রিম কোর্টের সামনে প্রেস কনফারেন্সে বক্তব্য কেয়ার অ্যাটর্নি গাদির আব্বাস


মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ফেডারেল সন্ত্রাসী তালিকার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। তবে এই মামলার রায়ের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) অ্যাটর্নি গাদির আব্বাস গত ৮ জানুয়ারি সোমবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে ঐতিহাসিক ওয়াচলিস্ট মামলা ‘ফিকরে’ বনাম ‘এফবিআই’ মামলার মৌখিক যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। চিফ জাস্টিস জন জি রবার্টসের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন বিচারপতির ফুল বেঞ্চ শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। এফবিআইয়ের গোপন নো ফ্লাই লিস্টে ইয়োনাস ফিকরের নামটি বেআইনিভাবে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশন (কেয়ার) এই মামলা মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করে।

নাইন ইলেভেনের হামলার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ প্রশাসন একটি ফেডারেল সন্ত্রাসী নজরদারি তালিকা তৈরি করে। আনুষ্ঠানিকভাবে এই লিস্টটি সন্ত্রাসবাদী স্ক্রিনিং, ডাটাসেট বা ‘টিএসডিএস’ নামে পরিচিত। যার মধ্যে বেশির ভাগই মুসলিম আমেরিকানদের নাম অন্তর্ভুক্ত। মূলত এই ওয়াচলিস্ট ব্যবহার করা হয় মুসলমালদের ‘অপমান ও হয়রানির’ করার জন্য। ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে আল-কায়েদা সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে এই ওয়াচলিস্টটি ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলে অহেতুক হয়রানির শিকার আমেরিকার অনেক মুসলমান। এই লিস্টের উপর ভিত্তি করে আমেরিকাসহ অনেক দেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিয়মিতভাবে মুসলমানদের নজরদারি করতো।

ওয়াচলিস্ট তৈরির পর থেকে মুসলিম হিউম্যান রাইটস সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার) বিভিন্ন ফেডারেল কোর্টে এই ওয়াচলিস্ট বাতিলের দাবিতে একাধিক মামলা দায়ের করে। গত বছর এই সন্ত্রাসবাদী স্ক্রিনিং ডাটাসেট বাতিলের দাবিতে কেয়ার ইউএস সুপ্রিম কোর্টে মার্কিন সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করে। কেয়ার-এর অ্যাটর্নিদের মতে, আনুষ্ঠানিকভাবে সন্ত্রাসবাদী স্ক্রিনিং ডাটাসেট বা ’টিএসডিএস’ নামে পরিচিত, ওয়াচলিস্টটে প্রায় দেড় মিলিয়নেরও বেশি লোক রয়েছে। যাদের বেশির ভাগই মুসলিম। যদিও এফবিআই বলেছে, কাউকে তাদের জাতি, গোষ্ঠী বা ধর্মের কারণে ওয়াচলিস্টে যুক্ত করা হয়নি। কেয়ারের আইনজীবীর দাবি এই তালিকায় থাকা প্রায় ৯৮ ভাগ লোক মুসলিম।

ইয়োনাস ফিকরে একজন মুসলিম যাকে এফবিআই জোর করে একজন ইনফরমার হওয়ার জন্য চাপ দিয়েছিল। মার্কিন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নির্যাতন এবং বন্দী করা হয়েছিল। তারপর নো ফ্লাই লিস্টে তার নাম থাকার কারণে তিনি সুইডেনে আটকা পড়েছিল। এফবিআই-এর গোপন নো ফ্লাই লিস্টে ইয়োনাস ফিকরে নামটি বেআইনিভাবে অন্তর্ভুক্ত করার কারণে এই মামলা। কেয়ার কো-কাউন্সিল ব্র্যান্ডন মেফিল্ড ২০১২ সালে ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে একটি মামলাটি করেন এবং চার বছর মামলা চলার পর এফবিআই কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই নো ফ্লাই তালিকা থেকে ফিকরে নামকে সরিয়ে দেয়। এফবিআই এখন সুপ্রিম কোর্টের কাছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার কারণে নো ফ্লাই লিস্টে যে কোনো ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার আইনগত আদেশ চায়। এফবিআই, ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট, সিক্রেট সার্ভিস এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ও স্থানীয় সংস্থাগুলিসহ অনেক সরকারি সংস্থা এই ওয়াচলিস্ট ব্যবহার করে। এফবিআই-এর মতে, আমেরিকান জনগণকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ওয়াচলিস্টটি সন্ত্রাসবাদ বা সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপে জড়িত থাকার কাজে সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিদের ট্র্যাক রাখার জন্য ব্যবহার করা হয়।

কেয়ার অ্যাটর্নি গাদির আব্বাস বলেন, আমাদের ক্লায়েন্টসহ অগডুত নিরপরাধ মুসলমানদের মতো একজন নাগরিক। ফেডারেল সরকার যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই তাকে টার্গেট করেছে এবং হয়রানি করছে। ওয়াচলিস্ট আমাদের (আমেরিকার) সংবিধান এবং ন্যায় বিচারের লঙ্ঘন। এই বৈষম্যমূলক কর্মসূচির অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়াই চালিয়ে যাব।

কেয়ারের জাতীয় নির্বাহী পরিচালক নিহাদ আওয়াদ বলেছেন, আজ এটি আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন এবং আমাদের দেশের সকল মুসলামানদের জন্য ন্যায় বিচার পাওয়ার দিন। ওয়াচলিস্ট এবং নো ফ্লাই লিস্ট অগডুত নিরপরাধ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করেছে। ফেডারেল সরকারের এই অসাংবিধানিক, অ-আমেরিকান কর্মসূচি স্থগিত করার সময় এসেছে। আমরা আশাবাদী যে আমাদের মামলা ওয়াচলিস্টের অবসান ঘটাতে এবং যারা এর শিকার হয়েছেন তাদের বিচার পেতে সহায়ক হবে। তিনি আরো বলেন, আমেরিকান মুসলমানরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে গণ্য হতে পারে না।

কেয়ারের মিশিগান চ্যাপ্টার নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমেরিকা জুড়ে এই অসাংবিধানিক, বৈষম্যমূলক ওয়াচলিস্টের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে মার্কিন মুসলিমরা। বাইডেন প্রশাসনের সময় এসেছে বিতর্কিত এই ওয়াচলিস্টের ব্যবহার বন্ধ করার। মার্কিন মুসলমানরা ২২ বছরের ধরে এই ওয়াচলিস্টের লার্গেটে রয়েছে। আমরা এখন মার্কিন সুপ্রীম কোর্টের কাছে ন্যায় বিচার প্রত্যাশি। 

শেয়ার করুন