২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৩৩:০০ অপরাহ্ন


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে সম্ভব্য রাজনৈতিক সমঝোতা
খালেদা জিয়ার ‘না’
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৫-২০২২
খালেদা জিয়ার ‘না’ বেগম খালেদা জিয়া/ ফাইল ছবি


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বললেন,সরকারের সাথে কোনো সমঝোতা হবে নাএবং যাবেনও না। কোনো ধরনের আপস করবেনও না। আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি, অনেক কিছু হারিয়েছি। তাই তাদের (সরকার) সাথে কোনো সমঝোতা হবে না। সমঝোতায় গেলে বিএনপি ধ্বংস হয়ে যাবে। দেশবাসী আমাদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিহিত করবে। 

দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের এভাবেই সাফ জানিয়ে দিলেন তিনি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় এক বছর পর ঈদের দিনে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। ২০২১ সালের কোরবানির ঈদের দিন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পেয়েছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। গত রোজার ঈদে খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত থাকায় দলের নেতাদের সঙ্গে দেখা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্র জানায়, এবার দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি সরকারের সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের সমঝোতা করে সিট ভাগাভাগির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়া আরো বলেন, আমি যা বলছি সব জেনে বুঝেই বলছি। এব্যাপারে অন্য কারো পরামর্শ বা নির্দেশ শোনার প্রয়োজন নেই। 

বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবনে তার সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান। এর আগে ঈদের দিন সকালে খালেদার বোন সেলিমা ইসলাম ও ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার তার বাসায় যান। তাদের নিয়ে তিনি দুপুরের খাবার খান।

দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধিকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য কঠোরভাবে নাম না প্রকাশ করার শর্তে  জানান, সাক্ষাৎকালে তারা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মনোবল এবং পরামর্শের ধরন দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাদেরকে দেশের এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে দলের স্থায়ী কমিটর সদস্যদের শক্ত অবস্থান নিতে বলেন। স্থায়ী কমিটির সাত সদস্যরা খালেদার জিয়ার কাছে দেশের এবং নিজ দলের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে এতো তথ্যবহুল বক্তব্য শুনেও অবাক হয়ে যান। 

সমঝোতার সব খবরই রাখেন খালেদা জিয়া

সাক্ষাৎ এ উপস্থিত স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য সদস্য আরো জানান,খালেদা জিয়া তাদের বলেছেন, তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দলের শীর্ষ বলে পরিচিত কয়েকজন যে সরকারের সাথে সিট ভাগাভাগির সমঝোতার চেষ্টা করছেন সে ব্যাপারটি জানেন। এব্যাপারে তিনি সব খোঁজখবর রাখেন বলে জানান তাদেরকে। তিনি বলেন, বিএনপি কোন দুঃখে, কীসের আশায় সরকারের সাথে সমঝোতায় যাবে। তিনি ২০১৮ সাথে নির্বাচনে এমন ধরনের গোপন সমঝোতা ব্যাপারে বলেন, কই সরকার কি বিএনপির সাথে কথা রেখেছে? তারা তো বলেছিলো নির্বাচন কোনো হস্তক্ষেপই করবে না। তিনি বলেন, পেয়েছে কি বিএনপির কাক্সিক্ষত আসন ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে? তাই তিনি কোনো ধরনের সমঝোতায় না গিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন। 

সমঝোতা ও আন্দোলন কাদের সাথে?

বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা খালেদা জিয়ার বাসা ‘ফিরোজা’য় একঘণ্টা অবস্থানকালে আন্দোলনে কাদের সাথে সমঝোতা ও আন্দোলন হবে, সেব্যাপাটিও চলে আসে। খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বলেন, মাঠে সরকারবিরোধী আন্দোলনরত যে কোনো দলের সাথে তিনি আলাপ-আলোচনা করার পরামর্শ দেন। একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে জামায়াত সাথে থাকলে তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না সম্ভবত সে বিষয়টির ব্যাপারে খেয়াল রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন যুগপৎ কর্মসূচিতে যেতে পরামর্শ দেন।

এব্যাপারে স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, বিএনপির এবারের আন্দোলনে জামায়াতকে সাথে নিলে বা কোনো ধরনের সম্পৃক্তা থাকলে বাম দলগুলির পাশাপাশি উদার প্রগতিশীল দলমতের দল ও ব্যক্তিরা তাদের (বিএনপি) সাথে আসবে না-এটি জেনে বুঝেই খালেদা জিয়া যুগপৎ কর্মসূচিকেই এগিয়ে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে তার অভিমত। কারণ মাঠে আন্দোলনরত দলগুলি বিএনপির সাথে একমঞ্চে আসতে বড় বাধা জামায়াত। তাই একমঞ্চে আসতে না চাইলেও যেন যুগপৎ আন্দোলন করে জনগণের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে মাঠে দলগুলির সাথে কাজ করতে বলেন তিনি। 

স্থায়ী কমিটি ও সিনিয়র নেতারা চাঙ্গা

এদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বেশ চাঙ্গাবোধ লক্ষ করা গেছে। খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠকের পর থেকেই বিএনপির এসব সিনিয়র নেতারা বেশে উচ্চকণ্ঠেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। দলেও বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন এ সিনিয়র নেতারা।

এদিকে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাতের পর দলের শীর্ষনেতারা এখন বেশ দৃঢ়তার সাথেই বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিক খালেদার জিয়ার সাথে সাক্ষাতের সময় চেয়ারপারসনের দেয়া বক্তব্যও মাঠে লক্ষ করা যাচ্ছে নেতাদের চলন-বলনে। তারই প্রতিফল দেখা গেছে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে। এতে  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) একটা মুনাফেক দল এবং তারা এ কথাটা বলতেই থাকে।

তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে, দেখলে মনে হয় যে, এদের মতো ভালো মানুষ আর নেই। আর ভেতরে ভেতরে যা করার তা করে যাবে। তারা ভদ্রলোকের মতো কথা বলে, গণতন্ত্রের মতো কথা বলে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে কথা বলে কোনোদিন, কখনো তা তারা রাখে না- এটা হচ্ছে তাদের চরিত্র। জনগণের সঙ্গে তারা শুরু থেকেই প্রতারণা করছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে তারা প্রতারণা করছে। মির্জা ফখরুল এসময় বেশ দৃঢ়তার সাথেই বলেন, ‘বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমি মনে করি, কোনো কথাই হবে না যতক্ষণ না আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে।

পরবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের কথা পরিষ্কার, আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে, নির্বাচনের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না। নির্বাচনে তো আমরা যাবোই না শেখ হাসিনা যদি ক্ষমতায় থাকেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন ইভিএমে করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইভিএম তো পরে, ইলেকশনেই তো আমরা যাবো না যদি শেখ হাসিনা সরকারে থাকেন।’ অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমে বলেছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একটাই চাওয়া আর সেটা হলো সরকারের পদত্যাগ ও ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচন।

শেষ কথা

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপিকে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে শোনা যায়। এবারের সমঝোতার প্রস্তাবে বলা হয়েছিল যে বিএনপিকে সত্তরের অধিক আসন দেয়া এবং এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের আসনে বসানো। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন সমঝোতার উদ্যোগের খবরের ব্যাপারে আভাসও মিলেছে।

আবার এটাও শোনা গেছে যে, বিএনপি সরকারের এধরনের প্রস্তাবে একপ্রকার রাজি হয়েই আছে। তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সরকারের একটি অংশ থেকে এমন প্রস্তাবটি এখন কতটা কার্যকর হবে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।

তবে সরকারের সাথে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো ধরনের সমঝোতা করে সিট ভাগাভাগির বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার কঠোরভাবে হুঁশিয়ারিতে পর্দার নেপথ্যে থাকা সরকারের কুশীলবরা যে একটা বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন। আর সেজন্য বিএনপিকে সাথে নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ মহল তোড়জোড় শুরু করেছে।


শেয়ার করুন