২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৩৮:৩৮ পূর্বাহ্ন


৭০ হাজারের বেশি পিপিপি জালিয়াত শনাক্ত
মো. জামান তপন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১১-২০২২
৭০ হাজারের বেশি পিপিপি জালিয়াত শনাক্ত


মার্চ ২০২০ সালে করোনা মহামারীর শুরু থেকে নিউইয়র্ক স্টেটে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর বেকার ভাতা (আনএমপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স বেনিফিট) ও ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লক্ষাধিক নিউইয়র্কার চাকরিহীনকে জরুরি সহায়তা প্রদান করেছে ইউএস কংগ্রেসের পাসকৃত ও রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরিত কেয়ার অ্যাক্ট আইনের মাধ্যমে। কিছু অসাধু ব্যক্তি এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। করোনাকালীন পেন্ডামিকের সময় যেখানে প্রতিদিন অকাতরে মানুষ মারা যাচ্ছিল ঠিক তখনই স্টেট বা ফেডারেল সরকারের তথ্য যাচাই বাছাই করা ছিল এক রকম অসম্ভব। কিন্তু তৎকালীন স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন মানুষ বাঁচানো এখন আমাদের মূল লক্ষ্য, যাচাই করার সময় এটা নয়। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে প্রতিটি ফাইল তদন্ত করা হবে। গভর্নর বদল হলেও তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর গভর্নর ক্যাথি হোকুল এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আনএমপ্লয়মেন্ট প্রতারকদের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে জালিয়াত চক্রের বিরদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। গভর্নর হোকুল বলেন, সর্বোচ্চ মহামারীর সময় যখন আমাদের রাজ্য একটি অভূতপূর্ব বেকারত্ব সংকটের সম্মুখীন হয়েছিল, তখন এই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বেকার ভাতার অর্থ কেড়ে নেয়া হয়েছে। ওই সময় যাদের তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল। হোকুল আরো বলেছিলেন, আমার প্রশাসন বেকারত্ব বীমা জালিয়াতির তদন্তকে এগিয়ে নেয়ার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, যারা সিস্টেমের সুবিধা গ্রহণণ করে প্রতারণা করেছে তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে, আইনের আওতায় আনতে হবে এবং নিউইয়র্কবাসীর প্রয়োজনের এই গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাটি রক্ষা করতে হবে।

গভর্নর বলেন, নিউইয়র্কে বেকারত্ব বীমা কেলেঙ্কারি কমানোর একটি প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। গত আগস্ট মাসের তদন্তে দেখা যায়, এই মাসে জালিয়াতি করে ১১ মিলিয়ন ডলার নেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এ বছরের শেষ নাগাদ আরো ১১০ মিলিয়ন ডলারের প্রতারণামূলক বেকার ভাতা দেয়া বন্ধ করা যাবে।

নিউইয়র্কে বর্তমানে শ্রম বিভাগের গ্রাহক পরিষেবা এবং জালিয়াতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়নে একটি চার বছরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। লেবার কমিশনার রবার্ট বেয়ারডন বলেন, যখন কেউ একটি প্রতারণামূলক বেকার ভাতা বীমার দাবি ফাইল করে, তখন বুঝতে হবে তারা নিউইয়র্কবাসীর কাছ থেকে অর্থ চুরি করেছে। তিন আরো বলেন, এই প্রতারণা রোধে আমাদের দফতর সজাগ রয়েছে এবং এই অপরাধীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। এ ব্যাপারে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করছে। নিউইয়র্ক স্টেট লেবার ডিপার্টমেন্ট গত ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জানিয়েছিল যে তারা সে সময় পর্যন্ত ৪ লাখ ২৫ হাজার প্রতারণামূলক বেকার ভাতার ৫৫ লাখ আবেদন শনাক্ত করেছে লেবার ডিপার্টমেন্ট।

সর্বশেষ এক তথ্যে জানা যায়, নিউইয়র্ক স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ পর্যন্ত তদন্ত করে শনাক্ত করতে পেরেছে যে ১.৪ মিলিয়ন বা ১৪ লাখ বেকার ভাতা আবেদন (ভাতা প্রাপ্ত) ছিল প্রতারণামূলক। প্রতারকরা নিউইয়র্কারদের পরিচয় ব্যাংক বীমা কোম্পানির ডাটাবেস থেকে বা অন্যভাবে চুরি করে বেকার ভাতা উত্তোলন করেছে অথচ তারা তখনো নিজে চাকরিতে বহাল ছিলেন। এসব প্রতারণার শিকার বেশির ভাগ লোক হেলথ কেয়ার, শিক্ষা, সরকারি চাকরি এবং নন-প্রফিট অফিসে কর্মরত ছিলেন। ইতিমধ্যে বহু বাংলাদেশি আমেরিকানসহ হাজার হাজার অযোগ্য বেকার ভাতা গ্রহণকারীর জরিমানাসহ অর্থ ফেরত নিচ্ছে বলে জানা গেছে এবং প্রতারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব লেবার অফিসের বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে অপরের পরিচয় চুরি করে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন ধরনের ফেডারেল রিলিফ থেকে অর্থ প্রতারণার চিত্র তুলে ধরা হয়। ইউএস ডিওএল অফিসের ইন্সপেক্টর জেনারেল জানান, শুধু মাত্র সারা আমেরিকায় প্রতারণামূলকভাবে বেকার ভাতার জন্য আবেদন করে অপরাধীরা মার্চ ২০২০ সাল থেকে এপ্রিল ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪৫.৬ বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। যেখানে দেখা যায় একই ব্যাক্তি একই সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার দিয়ে বিভিন্ন স্টেট থেকে বেকার ভাতা গ্রহণ করেছেন। সে সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বারের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি এবং গৃহীত অর্থ প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার। প্রায় ২ লাখ ৬ হাজার মৃত ব্যক্তির সোশ্যাল সিকিউরটি নাম্বার ব্যবহার করে প্রতারকরা ১৩৯ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারণামূলকভাবে ১৬.২ বিলিয়ন ডলারের বেকার ভাতা গ্রহণ করতে ১.৭ মিলিয়ন বা ১৭ লাখ সোস্যাল সিকিউরিটি নাম্বার সন্দেহজনক ই-মেইল আইডির সাথে ব্যবহারের ঘটনা শনাক্ত করা গেছে। এর আগে ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিস জানিয়েছে, তারা দেখতে পেয়েছে যে অযোগ্য ফেডারেল কয়েদিদের সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার দিয়ে ২৬৭ মিলিয়ন ডলার জালিয়াতি করা হয়েছে। অপর তথ্যে জানা যায়, ভুল তথ্য দিয়ে কিংবা যারা কখনো কাজ করেননি কিন্তু বেকার ভাতা নিয়েছেন তার পরিমাণ প্রায় ৪০ বিলিয়নের ওপরে। ফেডারেল গভর্নমেন্ট ৮৭২ বিলিয়ন ডলার বেকার ভাতা প্রদানের জন্য বরাদ্দ দেয়। ইতিমধ্যে ১০ শতাংশ ভাগ প্রতারণা ও অযোগ্য ব্যাক্তির ৮৭ বিলিয়ন ভাতা আত্মসাতের ঘটনা সনাক্ত করা হয়েছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল অফিস সূত্রের প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, বিচার বিভাগ প্রায় ৫ শতাধিক ব্যক্তিকে বেকার ভাতা প্রতারণার অপরাধে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ২ হাজারের বেশি ব্যক্তির বিরদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে এবং ১ লাখ ৯০ হাজারের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলকভাবে বেকার ভাতা গ্রহণের দায়ে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন চলছে। এই সংখ্যা আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে জানানো হয়েছে।

এছাড়াও রিলিফ ফান্ডের বেকার ভাতাই শুধু প্রতারণা করা হয়নি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্যের জন্য ক্ষমাযোগ্য ঋণ দেয়া ৮১৩.৭ বিলিয়ন ডলার যা এসবিএ-পে রোল প্রটেকশন প্ল্যান বা পিপিপি নামে পরিচিত, সেখানেও প্রচুর জাল জালিয়াতি হয়েছে। ধারণা করা হয় ৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি জালিয়াতি হয়েছে। মে ২০২২-এর এক রিপোর্ট মোতাবেক প্রতারণা করে পিপিপি লোন গ্রহীতা ৭০ হাজারের বেশি শনাক্ত করা হয়েছে এবং ওআইজি প্রত্যেকটি পিপিপি লোনের আবেদনপত্র একটি একটি করে পরীক্ষা করছে। গত আগস্ট মাসে বাইডেন প্রশাসন ফেডারেল সরকারের রিলিফ ফান্ড (বেকার ভাতা, পিপিপি লোন ও এসবিএ লোনসহ অন্যান্য সহায়তা) তসরূপকারীদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, প্রতারকদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।

শেয়ার করুন