২৩ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৫২:১০ অপরাহ্ন


নতুন প্রজন্মের তিন বাংলাদেশির আত্মহত্যা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
নতুন প্রজন্মের তিন বাংলাদেশির আত্মহত্যা শোকে মুহ্যমান কমিউনিটি


শোকে মুহ্যমান বাংলাদেশি কমিউনিটি। গত কয়েকদিনে নিউইয়র্কে নতুন প্রজন্মের তিন বাংলাদেশি আমেরিকান আত্মহত্যা করেছে। তিনটি ঘটনার মধ্যে দুটো নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। অন্যটি ঘটনাটি ঘটে শিয়াটল ওয়াশিংটনে। গত ৯ মে ব্রুকলিনের উইলিয়ামবার্গ ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বাংলাদেশি আমেরিকান রাফসান জানি। ১১ মে ব্রুকলিনে ট্রেন লাইনে আত্মহত্যা করেছেন কলেজছাত্রী জেনাত হোসেন। একইদিনে (১১ মে) শিয়াটল ওয়াশিংটনে আত্মহত্যা করেছে বাংলাদেশি আমেরিকান মোহাম্মদ হোসেন। কিন্তু এমনটি হবার কথা ছিলো না। উন্নত জীবনের আশায় সবাই এসেছিলেন স্বপ্নের দেশ আমেরিকায়। সন্তানদের কথা চিন্তা করেই বাবা-মা কঠিন সংগ্রাম করছেন। সমস্যা দাঁড়িয়েছেন পারিবারীক অশান্তি। পারিবারীক অশান্তিতে পুরো কমিউনিটি ছারখার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই নিয়ে কারো কোন যেন চিন্তা নেই। সময় এসেছে এসব সমস্যা নিয়ে কমিউনিটিতে সেমিনার হওয়া প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের আমেরিকান-বাংলাদেশিরা সব কিছু মেনে নিতে পারেন, কিন্তু মেনে নিতে পারেন না পারিবারীক অশান্তি।

মোহাম্মদ হোসেন

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ হোসেন গত ৯ মে আত্মহত্যা করেছেন। জানা গেছে, জাহাঙ্গীর হোসেন নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের গ্র্যান্ড মোর এলাকায় বসবাস করতেন। তার সন্তান ২৫ বছর বয়সী মোহাম্মদ হোসেন থাকতেন শিয়াটল ওয়াশিংটনে। সেখানে তিনি আইনটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মোহাম্মদ হোসেন নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন। জানা গেছে, তিনি তার বাসায় একা থাকতেন। শিয়াটল ওয়াশিংটনে মোহাম্মদ হোসেনের আরো কয়েকজন বন্ধু ছিলেন। তারা কোনোভাবেই মোহাম্মদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলে না। তার ফোনে তারা কল দিতে থাকেন কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে তারা ল্যান্ডলর্ডকে ফোন করেন এবং পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। ল্যান্ডলর্ড এসে দরজায় ডাকেন, কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি সাথে সাথে পুলিশ ডাকেন। পুলিশ এসে দরজা খুলে দেখতে পান মোহাম্মদ হোসেনের শরীর নিথর। তার দুই হাত দিয়ে রক্ত ঝরছিলো। জানা গেছে, তিনি তার দুই হাতের রগ কেটে ফেলেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হতে পারে।

ইতিমধ্যেই মোহাম্মদ হোসেনের মা’সহ অন্যান্য আত্মীয় শিয়াটল ওয়াশিংটনে গিয়েছেন। তারা মোহাম্মদ হোসেনের লাশ গত ১৭ মে নিউইয়র্ক নিয়ে আসেন। মোহাম্মদ হোসেনের নামাজে জানাজা গত ১৭ মে বাদ মাগরিব ওজনপার্কের গ্র্যান্ডমোর জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার লাশ কোথায় দাফন করা হবে তা জানা যায়নি।

এদিকে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের ছোট ছেলে কিছু আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বর্তমানে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। তার ২ ছেলে এবং ১ মেয়ে রয়েছে। তার দেশের বাড়ি বাংলাদেশের নোয়াখালীতে।

জিনাত হোসেন

নিউইয়র্কের হান্টার কলেজের বাংলাদেশি ছাত্রী জিনাত হোসেনের (২৩) জানাজা শেষে নিউজার্সিতে বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির কেনা কবরে তাকে দাফন করা হয়। গত ১৪ মে ব্রুকলিনে বায়তুল জান্নাহ মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। তখন কফিনের পাশে ছিলেন জিনাতের বাকরুদ্ধ বাবা আমির হোসেন। তিনি কেবলই কফিন ছুঁয়ে মেয়েকে অনুভব করছিলেন। জানাজা শেষে কফিন মসজিদের সামনে আনার পর জিনাতের মা জেসমীন হোসেন কান্নায় ভেঙে পড়েন। হুইল চেয়ারে ছিলেন জেসমীন।

জিনাত হোসেনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে সে আত্মহত্যা করেছে। এ সংক্রান্ত ভিডিও পুলিশ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠিয়েছেন। তবে নিউইয়র্ক পুলিশের বক্তব্য মানতে রাজি নন তার অভিভাবকরা। পরিবারের পে তার নানা মো. কবীর জিনাতের জানাজার সময় সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশে বলেন, জিনাত আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশি রিপোর্টে বলা হয়েছে। কিন্তু এটা আমরা মনে করি না। ওই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘ফল ফ্রম হাই’ অর্থাত ওপর থেকে পড়ে মৃত্যু। জিনাতের খালু ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গমাতা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডা. এনামুল হক জানান, তারা জিনাতের মৃত্যুর প্রকৃত তথ্য জানেন না। 

জানা গেছে, গত ১১ মে রাত ৯টার পর হান্টার কলেজের ছাত্রী জিনাত হোসেনের লাশ ব্রুকলিনগামী ‘ডি’ ট্রেনের ৫৫ স্ট্রিট সাবওয়েতে পায় পুলিশ। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার জগতপুর গ্রামের আমির হোসেন ও জেসমীন হোসেন দম্পতির একমাত্র কন্যা জিনাত তার মা-বাবার সঙ্গে বাস করতেন ব্রুকলিনে অষ্টম অ্যাভিনিউ ও ৪২ স্ট্রিটে তাদের বাসায়। বাসার কাছেই অবস্থিত পাতাল ট্রেনের লাইন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

জানা গেছে, জিনাতের একমাত্র বড় ভাই আবিদ হোসেন ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছেন। জিনাত তার মা-বাবার সঙ্গে ২০১৫ সালে ইমিগ্র্যান্ট হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। পারিবারীক সূত্রে জানা গেছে, কাস শেষে রাত ৯টায় বাসায় ফিরতেন জিনাত। কিন্তু সেদিন রাত ১০টা নাগাদ জিনাত না ফেরায় তার মা পুলিশকে বিষয়টি জানান। রাত দেড়টায় পুলিশ জিনাতের খালু ডা. এনামুলকে মেয়ের লাশ উদ্ধারের খবর জানান। 

উল্লেখ্য, জিনাতের এই মৃত্যু নিয়ে কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে কমিউনিটি বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। বিভ্রান্ত সৃষ্টিকারীরা ২০১৯ সালের একটি ঘটনার ভিডিও ফুটেজকে জিনাতের মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেন অনেকেই। এরপরই তা কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করা হয় যে, পাতাল ট্রেনের স্টেশনে অপোর সময় ছিনতাইকারী তার ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে জিনাতকে ধাক্কা দিয়ে ট্রেনের সামনে ফেলে দেন।

রাফসান জানি

ব্রুকলিনের ইস্ট নিউইয়র্কের বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসেরর সন্তান রাফসান জানি গত ৯ মে উইলিয়ামবার্গ ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। জানা গেছে, ৩০ বছর বয়সী রাফসান ঘটনার দিন ভোর ৪টার দিকে আত্মহত্যা করেন। জানা গেছে, রাফসানের মানসিক সমস্যা রয়েছে। তার নামজে জানাজায় গত ১১ মে বাদ জোহর ব্রুকলিনের বেলাল মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ নিউজার্সির এলিজাবেথ মুসলিম গোরস্তানে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ নাসেরের দেশের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে।


শেয়ার করুন