২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৩৯:১৯ পূর্বাহ্ন


ভালো নির্বাচন , ভোটের অধিকার দেয়ার দাবী পাশ কাটাতে এই আগুন- মির্জা ফখরুল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৪-২০২৩
ভালো নির্বাচন , ভোটের অধিকার দেয়ার দাবী পাশ কাটাতে এই আগুন- মির্জা ফখরুল


চলমান আন্দোলন থেকে জনদৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে ক্ষমতাসীনরা মার্কেটে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা(সরকার) ব্যর্থ হয়েছেন কোনো কিছু মনিটর করেন না। প্রতিদিন সবখানে আগুন লাগছে। এই আগুন লাগার পেছনে আপনারা আছেন। আপনারাই ডায়বার্ট করার জন্য এই যে, মানুষের দাবি উঠেছে সারের দাম কমাও, চালের দাম কমাতে হবে, আমাদের বাঁচতে দিতে হবে, আমাদেরকে একটা ভালো নির্বাচন করতে দিতে হবে, আমাদের ভোটের অধিকার দিতে হবে.. এই দাবিগুলো পাশ কাটানোর জন্য, মানুষের দৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে দেয়ার জন্য আপনারা(সরকার) এই আগুন লাগিয়ে বেড়াচ্ছেন।”


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এদেশের মানুষ সহ্যের একটা সীমা আছে। আজকে খুব পরিস্কার কথা, অবিলম্বে এই  সারের দাম কমাতে হবে, আবার আগের জায়গায় আনতে হবে। এই সরকার একটা গণবিরোধী সরকার, এই সরকার সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, এই সরকার আজকে আমার সমস্ত অর্জনগুলোকে ধবংস করে দিচ্ছে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ খেটে খাই, পরিশ্রম করে খাই তাদের জীবন দূর্বিসহ করে ফেলেছে। প্রতিবাদ করলে কি? প্রতিবাদ করলে গুলি, প্রতিবাদ করলে গ্রেফতার, প্রতিবাদ করলে মামলা, তা আবার গায়েবী মামলাৃ.আজ সব খানে সাধারণ মানুষের ওপরে নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন করছে।”


কেনো এই অত্যাচার, কেনো মানুষের প্রতি দয়া-মায়া তাদের নেই? এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘ তারা(আওয়ামী লীগ সরকার)জনগন দ্বারা নির্বাচিত হয় নাই। দুইটা নির্বাচন করেছে, সেই দুইটা কিভাবে করেছে আপনারা সবাই জানেন। ২০১৪ সালের নির্বাচন.. শফিউল আলম প্রধান সাহেব(জাগপার প্রয়াত সভাপতি) কুত্তা মার্কা নির্বাচন। ২০১৮ সালে মধ্য রাতের বেলা অশ্বারহী সেই মধ্য রাতে বেলা সব ঘটনা ঘটিয়ে বলে যে, আমরা জিতে গেছি। কিন্তু মানুষ আর সহ্য করবে না। খুব পরিস্কার করে আমরা বলে দিয়েছি.. মূল যে জায়গাটা সেই জায়গাটা হচ্ছে কি-- এই সরকারকে সরাতে হবে।এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন বাড়বে, মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলতেই থাকবে।”


জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে সারের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়।


কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।


‘নিউ সুপার মার্কেট: অগ্নিকান্ডের দায় ক্ষমতাসীনদের’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বিএনপি। কিছু হলে বিএনপি.. উদোর পিন্ডি বুঁদোর ঘাড়ে।আপনাদের ব্যবসায়ীরা নিজেরাই বলে দিলো প্রথমে যে, আমরা নিজেরা চোখে দেখেছি যে, সকাল বেলা সাড়ে ৫টার সময়ে সিটি করপোরেশনের পোষাক পড়ে কয়েকজন লোক এসেছে। মার্কেটের সামনের যে ফুট ব্রিজ ছিলো সেই ফুট ব্রিজে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তারা গ্রিল নিয়ে সেখানে সেই ব্লক কেটে দিয়ে সিড়িগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছিল। তারা যখন লাগাতে গেছে ওই গ্রিলের তার পয়েন্টে.. সেই পয়েন্টে শট র্সার্কিট হয়েছে। ব্যবসায়ীরা নিজেরা দেখেছেন। তারা আগুন নেভানোরও চেষ্টা করেছেন। আগুন নেভাতে যখন পারেনি তখন সিটি করপোরেশনের ওই লোকগুলো পালিয়ে গেলোৃ এটা আমার কথা নয়, এসব সেখানকার ব্যবসায়ীদের কথা। সিটি করপোরেশের দাযিত্বে আছেন এখন কে? সিটি করেপারেশনের দায়িত্বে আছেন আপনারা, আওয়ামী লীগ। তাই দায় সম্পূর্ণ ভাবে আওয়ামী লীগের এবং এই সরকারের।”


তিনি বলেন, ‘‘ আজকে দেখুন, এতো আগুন লাগছে কেনো? েিব্শষজ্ঞরা বলছেন, এটা পরিবেশের কারণে লাগছে। পরিবেশের বিপর্য্য় কে করেছে? এই সরকার যেখানে জায়গা পায় বিল্ডিং তুলে দেয়, বিল্ডিং তুলে বাজার চালু করে। আবার আওয়ামী লীগের সমস্ত গুন্ডা-পান্ডা আছেৃ তারা চাঁদা আদায় করে অতিরিক্ত দোকান দিয়ে অবৈধ্ দোকান দিয়ে বাজারের মানুষের চলাচলে অনুপযুক্ত করে দেয়্। সব দেখেন.. বঙ্গবাজার যেখানে ২০টা দোকান হওয়ার কথা ছিলো সেখানে ৪০টা দোকান। এভাবে করে করে সব জায়গায় তার করেছে। নিউ মার্কেটে যেখানে তিন তলায় হাজার হাজার দোকান বসেছে। কিভাবে বসলো? তোমাকে তো অনুমতি দেয়া হয়নি। আমরা পয়সা দিয়ে বসেছি। কারে পয়সা দেয়া হয়? আওয়ামী লীগের সমস্ত ওখানকার যারা নেতা তাদেরকে পয়সা দিয়ে, তাদেরকে ঘুষ দিয়ে এভাবে দোকান বসিয়েছে। কোনো অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নাই।”


এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তনের চলমান আন্দোলন আরো জোরদার করা হবে ঘোষণা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ জনগনকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমরা এই আন্দোলন শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ আমরা এই আন্দোলনের জয়ী হবো। ইতিমধ্যে আমাদের ১৭ জন ভাই প্রাণ দিয়েছে। আরো শুরু হয়েছে অত্যাচার-নির্যাতন গ্রেফতার। কোনো গ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতন আমাদেরকে আটকিয়ে রাখতে পারবে না। দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এই কৃষক ভাইদের একজায়গায় এনে, সমস্ত শ্রমিক ভাইদের একখানে করে, জনগনকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই বিজয় আমরা ছিনিয়ে আনবো।”


‘সারের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে’


মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ কৃষকদের শুধু চরম অবহেলা নয়, তাদের চরম কষ্টের মধ্যে ফেলে দিয়েছে সরকার। তারা মাথায় হাত দিয়েছে। হঠাত করেই কেজি প্রতি সারের দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। কেনো? তাদেরকে(কৃষকদের) বলা হয়েছে যে, ওই আইএমএফ তাদেরকে শর্ত দিয়েছে যে, ভতুর্কি দেয়া যাবে না। সারা পৃথিবীতে কৃষিদের ভতুর্কি দেয়া হয়। এজন্য দেয়া হয় যে, তারা ফসল ফলায়, আমাদের পেটে ভাত যোগায়। সেই ভাত যারা যোগায় সেই কৃষক তারা উতপাদন করে তাদের যদি ভতুর্কি দেয়া না হয় তাহলে তারা ফসল ফলাতে পারবে না।সব দেশে কৃষিতে ভুতর্কি দেয়া হয়। কিন্তু এখন আমাদের দেশে কৃষকদের গলা টিপে ধরার জন্য এই সরকার কী করেছে? প্রতি কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছেৃ ইউরিয়া সার, অন্যান্য সার তো আছেই।”


তিনি বলেন, ‘‘ আবার কৃষক যখন ধান বিক্রি করতে যাবে তখন তারাই(সরকার) বলছে ২৯ টাকা প্রতি কিলোতে খরচ হয়। দাম দিতে চায় ৩০ টাকা। ৫ টাকা সারের দাম বাড়ালেন আর আমাকে দিচ্ছেন ৩০ টাকা। আমি বেঁচে থাকবো কি করে, টিকবো কি করে?শুধু ফসল ফলানোর ক্ষেত্রেই নয়, আমাদের কৃষিখাতে পল্ট্রি, ডেইরী.. গরুর ফার্ম এরাও পথে বসে গেছে। শুধু বড়রা বড় হচ্ছে আর মাঝারী বা ছোট তারা ধবংস হয়ে যাচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় দেখে থাকবেন যে, কয়েক হাজার পল্ট্রি খামারী তারা বলছে যে, তারা টিকে থাকতে পারছে না। কেনো? এমনভাবে বড় বড় ফার্মগুলো দাম ঠিক করে ফলে তাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। অথচ মরগীর দাম কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে কমছে না, বাড়ছে, ডিমের দাম বাড়ছেই। অর্থাত যে উতপাদন করে , যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় তাকে বাতিল করে দিয়ে শুধু বড় লোকদের জন্য যাদের সাথে সরকারের সম্পর্ক তাদেরকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই সরকার কাজ করছে।”


বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতির কথা তুলে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।


অবিলম্বে সারের মূল্য হ্রাস এবং ধানের দাম বৃদ্ধির দাবি জানান ফখরুল।


শেয়ার করুন