০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০১:৫৫:৫৭ পূর্বাহ্ন


দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)'র নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকার ‘আমি ও ডামি’র নির্বাচনের নামে তথাকথিত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে সরকার গঠন করলেও তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। দেশের পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। 

সম্প্রতি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সভায় এবক্তব্য দেন নেতারা। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সিপিবি সভাপতি মোঃ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহিন রহমান, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, অধ্যাপক এ এন. রাশেদা, মোতালেব মোল্লা ও পরেশ কর।

সভায় আরো বলা হয় এজন্য পুরো নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। জাতীয় সংসদে সংখানুপাতিক পদ্ধতি প্রবর্তনসহ নির্বাচনে দাঁড়ানো ও ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সম অধিকার, সম প্রচার নিশ্চিত করতে হবে। টাকার খেলা, প্রশাসনিক কারসাজি বন্ধ করতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের কাজ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে দক্ষ ও শক্তিশালী করে, স্বচ্ছতা, জবাবদীহীতা এবং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে এই সরকার ব্যবস্থাকে পরিচালনা করতে হবে। এজন্য আর দেরি না করে এখনই আলাপ-আলোচনা শুরু করার ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের কাজ শুরু করার আহ্বান জানানো হয় সভা থেকে।

সভায় বলা হয়, কথার মালা তৈরির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী ও ক্ষমতার বাইরের শাসকগোষ্ঠী প্রতিদিন পরস্পরের বিরুদ্ধে যে সব কথা বলে তাতে জনস্বার্থ নয় বরং পাল্টাপাল্টির কথারই বহিঃপ্রকাশ প্রকাশিত হয়। প্রচার যন্ত্রের মাধ্যমে এসব কথা সামনে আসায় পুরো রাজনীতির প্রতি মানুষের নেতিবাচক মনোভাব ও মূল সংকটকে এবং তার সমাধানের পথের আলোচনাকে অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সিপিবি ও নীতিনিষ্ঠ বামপন্থীদের কথা জনগণের সামনে আসছে না।

সভায় আরও বলা হয়, শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের বয়ান তার তার নিজের মতো করেই তৈরি করছে। এরা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে পরিত্যাগ করেই চলেছে। ক্ষমতাসীনরা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললেও এরা মুক্তিযুদ্ধের ধারার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বাতিল করে মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করেছে। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের শুধু তোষণ নয় তাদের অংশীদার সরকার। টাকা অবাধে পাচার হচ্ছে যার কোন নিয়ন্ত্রণ সেই। পাচারের টাকা ফেরত আনা হচ্ছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে। লুটপাটকারীরা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সারাদেশে দুর্নীতি, আধিপত্য বিস্তার, বাক স্বাধীনতা হরণ, ’লোভ আর ভয়ের আতংক তৈরি করা’ সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

সভায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি ও ধাপে ধাপে আগামী তিন বছর ধরে মূল্যবৃদ্ধির যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, সরকারের গণবিরোধী নীতির কারণেই আজ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। এটা জাতীয় অর্থনীতির বোঝা ও এই বোঝা জনগণের উপরে চাপিয়ে তাদের পকেট কাটার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আইএমএফ, দেশি-বিদেশি লুটেরাদের খুশি করতে এই দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

আমরা বরাবর এ ব্যাপারে বিকল্প নির্দেশনা তুলে ধরেছিলাম। রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নবায়ন ও সম্প্রসারণ, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ, যথার্থভাবে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন, নবায়ণযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করলে আজ এই সংকট হোত না। কতক লুটেরা ব্যবসায়ী আর কমিশনভোগীদের স্বার্থে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বাড়তি খরচ দেখান হয়েছে, তার দায় জনগণ বহন করবে কেন? ঐ সময় বলা হয়েছিল ২০১৪ থেকে উৎপাদন খরচ কমবে। অথচ আজ উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। উৎপাদন খরচ কমানোর বদলে যারা উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে। জনগণের পকেট কেটে এই ক্ষতিপূরণ নেয়া যাবে না।

এই সংকটের মধ্যেও দেশী-বিদেশি লুটেরা ও কমিশনভোগীরা বসে নেই। তারা নতুন নতুন প্রজেক্ট করে এগিয়ে আসছে। দেশের জমি, পানি, জলা, পরিবেশ, জনপদ ধ্বংস করে কয়লা উত্তোলনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনগণের লড়াই, শহীদের মৃত্যুদানের পর এটাকে পরিত্যাগ করা হয়েছিল। আজ সেই কয়লা সিন্ডিকেট আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, দেশবিরোধী এই তৎপরতা দেশবাসী গ্রহণ করবে না। রুখে দাঁড়াবে।

সভায় স্থল ও সমুদ্রভাগে গ্যাস ও তেল অনুসন্ধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, শতভাগ মালিকানা নিশ্চিত করেই গ্যাস তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করতে হবে। দেশীয় সংস্থাকে সাথে রেখে প্রয়োজনে বিদেশি কন্ট্রাকটার ভাড়া করে এ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। অন্তত ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ ছাড়া রপ্তানি করা যাবে না, এমন আইন করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সভায় বলা দেশের ঐতিহ্য ও অর্থনীতি সচলকারী পাটশিল্প বক্ষায় রাষ্ট্রীয় পাটকল লিজ নয়, আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে চালু করতে হবে।

সভায় চলমান দুঃশাসনের অবসান, ব্যবস্থা বদল ও বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে, বাম গণতান্ত্রিক জোটের আন্দোলন ও অপারাপর বাম প্রগতিশীল শক্তির সাথে কার্যক্রম অগ্রসর করা এবং দ্বি দলীয় লুটেরা রাজনীতির ধারার বাইরে নীতিনিষ্ঠ অবস্থানে থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সভায় সারা সারা দেশে চলমান পার্টির শাখা, উপজেলা, থানা সম্মেলন ও বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজের পর্যালোচনা এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

শেয়ার করুন