২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:৪৭:২৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


পিটার হাসের কলাম : বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
দেশ ডেস্ক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
পিটার হাসের কলাম : বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ পিটার হাস


আমার দেশের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন একবার বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হলো, এটা একদিন একদিন করে আসে।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে তৃতীয় বছর শুরুর সময়ে এ কথাকে আমার সত্যি বলে মনে হয়। প্রতিদিন এই দেশের সম্ভাবনা, জনগণের শক্তি ও সহনশীলতা এবং এর প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজ আমাকে মুগ্ধ করে। যেমনটা আমি গত বছর বলেছিলাম, বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকে অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। 

ভবিষ্যতের দিকে তাকালে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একদিন একদিন করে এগিয়ে আসে-এমন এক ভবিষ্যৎ আমি দেখতে পাই, আমি এই দেশের সামনে সম্ভাবনা দেখতে পাই। তবে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জও চোখে পড়ে। 

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে কথা বলেছিল, যা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষাকে প্রতিফলিত করবে, কিন্তু তা ঘটেনি।

যুক্তরাষ্ট্র এখনো বাংলাদেশ ও বিশ্বের সর্বত্র গণতন্ত্রের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে। সহজ করে বলতে গেলে, আমরা বিশ্বাস করি, দেশের মানুষের কল্যাণে গণতন্ত্র হলো স্থায়ী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের সর্বোত্তম উপায়।

আমরা সাহসী নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকারকর্মীদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখব। যেসব গণমাধ্যমকর্মী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিয়মতান্ত্রিক দমন ও হয়রানির শিকার হন, তা অবসানের আহ্বান আমরা অব্যাহত রাখবো। বাক্ ও সমাবেশের স্বাধীনতা যাতে বজায় থাকে, সে ব্যাপারে আমরা চাপ অব্যাহত রাখব। আমরা আরো উন্মুক্ত, শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজের পথকে সুগম করতে অর্থপূর্ণ রাজনৈতিক সংলাপের আহ্বান জানানো অব্যাহত রাখবো।

একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন লক্ষ্য রয়েছে-এমন ক্ষেত্রগুলো খুঁজে বের করব। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ যে দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক একই গতিতে এগিয়ে যেতে চায়। আমি এর মধ্যে নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা শুরু করেছি, যেখানে আমরা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে পারি। 

উদাহরণ হিসেবে সামাজিক ও পরিবেশগত আন্তঃসংযুক্ত বিষয়গুলোর কথা বলা যায়, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার টিম এবং আমি জলবায়ু পরিবর্তন, বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি রূপান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করা অব্যাহত রাখতে চাই।

জলবায়ু পরিবর্তন সবাইকে প্রভাবিত করে আমেরিকান ও বাংলাদেশি সবাইকেই। আমি আশা করি, আমাদের যে চমৎকার সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জনগণ ১০ কোটির বেশি কোভিড টিকা পেয়েছে, তা আরো বৃদ্ধি পাবে। 

আমাদের দুই দেশ এবং এই অঞ্চলের মধ্যে নিরাপত্তার সম্পর্কও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা নিরাপত্তা হুমকি মোকাবিলা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কমাতে একসঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা বাড়ানোর আরো উপায় খুঁজে বের করছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রেও আমরা ভূমিকা রাখতে পারব বলে আশা করছি।

শ্রমের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাশা করে, বাংলাদেশের আইন, নীতি ও অনুশীলনকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন একটি বৈশ্বিক শ্রমকৌশল নির্ধারণ করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়। 

এ কৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এমন আইন ও নীতি গ্রহণে বাংলাদেশকে আমরা উৎসাহিত করতে চাই, যাতে শ্রমিকরা নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক সংগঠন তৈরি ও তাতে যোগ দিতে পারেন। সুনির্দিষ্ট উন্নয়ন সহায়তা প্রদানসহ শ্রম অধিকারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগকারী; পাশাপাশি বাংলাদেশের পণ্য ও পরিষেবা রফতানির একক বৃহত্তম বাজার। পারস্পরিক সুবিধার জন্য আমরা আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে কার্যকর করতে পারি এবং তা করা উচিত।

পরিশেষে গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য টেকসই মানবিক সহায়তা প্রদান এবং মিয়ানমারের নিরাপদ পরিস্থিতি সাপেক্ষে সবার নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চালিয়ে যাবো। 

ভবিষ্যৎ একদিন একদিন করে আসে এবং প্রতিটি দিনই নতুন সুযোগ নিয়ে আসে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের পাশে রয়েছে এবং আপনারা সেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আপনাদের এই যাত্রায় আমরা সব সময় আপনাদের সমর্থন করবো। 


পিটার হাস বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত

শেয়ার করুন