২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:২৮:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


ইসির বক্তব্যে শঙ্কা দেখছে আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
ইসির বক্তব্যে শঙ্কা দেখছে আওয়ামী লীগ


আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ারের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যের পাশাপাশি তার কিছু ভূমিকাকে সন্দেহের চোখে দেখছে আওয়ামী লীগ। সিইসি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের মতো বিশাল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আচমকা বিভিন্ন কথা বার্তাকে বিরোধী দলের পক্ষেই যাচ্ছে বলে মনে করছে আওয়ামী লীগ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, সে বৈঠকে পিটার হাস সিইসি’র কাছে জানতে চেয়েছেন যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে এবং এর পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক করতে তারা কি কি করছেন বা পদক্ষেপ নিচ্ছেন? একিইসাথে জানতে চেয়েছেন, দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা অংশগ্রহণমূলক হতে পারে? যদিও বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয় যে, সিইসির সঙ্গে বৈঠক করতে নির্বাচন কমিশনে পিটার হাস বর্তমান সহিংসতা থেকে উত্তরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোকে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন। বলা হয় পিটার হাস আরো বলেছেন যে, নির্বাচনে রাজনৈতিক সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সংলাপ ডেকে বিব্রতকর পরিস্থিতি

পিটার হাসের সাথে সিইসি’র বৈঠকের পরপরই কাজী হাবিবুল আউয়াল আহবান জানান রাজনৈতিক দলগুলিতে তার সাথে সংলাপের। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে শেষবারের মতো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে সংলাপের আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।  ৪ নভেম্বর সকালে আওয়ামী লীগসহ ২২ দল আলোচনায় অংশ নিলেও ৯টি দল অনুপস্থিত ছিল। একইভাবে বিএনপিসহ ২২টি দলের অংশগ্রহণের কথা ছিল বিকেলে। সেখানে বিএনপিসহ সমমনা ৯টি দল অংশ নেয়নি। ফলে দুই ধাপে ৪৪টি দলের মধ্যে ১৮টি রাজনৈতিক দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। গত ৪ নভেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় প্রথম ধাপের আলোচনা। এতে অংশ নেয় ১৩টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। অংশ নেয়নি ৯টি দল। ওইদিন বিকেলে আলোচনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ ২২টি দলের অংশগ্রহণের কথা ছিল। তবে বিএনপি ও সমমনা ৯টি দল ইসির আলোচনায় অংশ নেয়নি। নির্বাচন কমিশনের আলোচনায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো না এলেও ১৩টি দলের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। যেসব দল নানা কারণে আলোচনায় বসতে পারেনি তারা চাইলে ফের বসতে পারে বলে জানায় নির্বাচন কমিশন।

সংলাপের চিঠি ছিল বিএনপি’র চেয়ারে

এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যে সংলাপের আহবান জানানোকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এই প্রতিনিধিকে বলেন, এটা তাদের দলের জন্য বিব্রতকর। কারণ প্রধান বিরোধী দলের মূল নেতাকর্মীরা যখন একের পর এক আত্মগোপনে তখন সংলাপের আহবান রহস্যজনক। এবং হয়েছেও তা। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যখন সিইসি’কে এমন পরামর্শ দেন তখন ঢাকায় সৃষ্টি হয়ে ২৮ অক্টোবরের পর জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। উল্লেখ্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তালাবদ্ধ বিএনপি কার্যালয়ের গেটের চেয়ারে সংলাপের চিঠি রেখে এসেছে। অথচ গত ২৮ অক্টোবর ক্রইম সিন চিহ্নিত করে বিএনপি অফিস বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে বলা হয়। ২৮ অক্টোবরে বিএনপি’র সমাবেশ থেকে সহিংসতা করা হয়েছে, পুলিশ হত্যা করা হয়েছে-এমন সব অভিযোগের চলছে মামলা মোকাদ্দমা ও ধড়পাকড়। এবং দেখা যায় রাজনৈতিক মাঠে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ও কঠোর পুলিশ পাহারা।  

সংলাপে আসা দলগুলির তীর্ষক মন্তব্য

সংলাপে আসা দলগুলি অধিকাংশই বক্তব্য দিয়েছে নেতিবাচকভাবে। এমনকি সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টরা বাকা বক্তব্য দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে অন্তত ১১টি দল নির্বাচনের বিদ্যমান পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার পরিবেশ সৃষ্টির আগে তফশিল ঘোষণা স্থগিত রাখারও পরামর্শ দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগ যা বললো

বৈঠক থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে হবে-সংবিধানের কোথাও এ কথা লেখা নেই। পৃথিবীর কোনো আইনেও লেখা নেই। বিভিন্ন দেশে আমরা দেখেছি, নির্বাচনের সময় অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয় না। সুতরাং যেসব রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা নেই, যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণের প্রতি যাদের আস্থা নেই, তারা তো নির্বাচনে আসবেই না। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, সরকার তাতে সহায়তা করছে। ইতোমধ্যে সরকার থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য ৮২টি সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। যেগুলো ইসি বাস্তবায়ন করছে। এসবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

জাতীয় পার্টি

বৈঠক থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে পাওয়ার-পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। এটির মধ্যে তারা নতুনত্ব কিছু খুঁজে পাননি। একই ধরনের প্রস্তুতি আগের দুই কমিশন নিয়েছিল, কিন্তু তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এবারের প্রস্তুতিতে এমন উল্লেখযোগ্য কিছু নেই, যাতে সব দলের আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে এবং সবাই নির্বাচনে অংশ নেবে। তিনি জানান, তাঁর দলের পক্ষ থেকে ইসিকে বলা হয়েছে, নির্বাহী বিভাগসহ ৯ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভোটের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাহী বিভাগের লোকজন একটি দলের হয়ে প্রকাশ্যে কাজ করেন। এ দায়িত্ব যারা পালন করেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেখা যাবে, ভোটের সময় নীরব ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।

অন্যদের কথা

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন তারা চান না। জনগণ আস্থা রাখতে পারে, জনগণ যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনস্বার্থ রক্ষা হয়, এমন একটি নির্বাচন তারা চান।

বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন তারা চেয়েছেন। এখানে কোনো দলের অংশগ্রহণ না হলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। নির্বাচন কমিশনের এটি দায়িত্ব, সব দল যেন অংশ নিতে পারে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আমিন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর যেভাবে দায়িত্ব চাপিয়েছেন, তাতে আকাশ থেকে হজরত জিব্রাইলের (আ.) নেতৃত্বে যদি ফেরেশতাদের বিশাল বাহিনী পাঠানো না হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীকে মোকাবিলা করে ভোটকেন্দ্রে টিকে থাকা সম্ভব নয়। 

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় এবং এ নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য ইসিকে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু রাজনৈতিক অস্থিরতা আছে, মানুষের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা আছে। জাতি এ শঙ্কা থেকে মুক্তি চায়।

ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের প্রহসনের নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচন জাতি দেখতে চায় না।

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) সভাপতি এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নির্বাচন করা। কমিশন সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করবে। ভোট হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, কোনো সরকারের অধীনে নয়। 

ইনসানিয়াত বিপ্লবের মহাসচিব শেখ রাহান আফজাল রাহবার জানান, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচন পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে।

এই কমিশনের আমলে নিবন্ধন পাওয়া দল বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী মহসীন চৌধুরী বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। নির্বাচনের আগে পোলিং এজেন্টদের নাম ধরে ধরে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিইসি। 

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো পরিবেশ দেশে নেই। 

অন্যদিকে গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, জাতীয় সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং আমরা নির্বাচনকালীন রাজনৈতিক সরকার চাই। তা না হলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। 

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভি আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি রয়েছে। 

মুক্তিজোটের সংগঠনপ্রধান আবু লায়েস মুন্না বলেন, নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় নির্বাচনকালে স্বরাষ্ট্র এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে দেওয়ার সুনির্দিষ্ট আইন পাসের দাবি জানিয়েছে।

কি বললেন সিইসি 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বৈঠক শেষে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘স্পেস ও টাইম’ সীমিত উল্লেখ করেছেন। সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সামর্থ্য ইসির নেই। সংকট নিরসনে ইসির কোনো ম্যান্ডেটও নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপির প্রতি সিইসি বলেন, ‘আপনারা আসুন। কীভাবে আসবেন, সে কোর্সটা আমরা চার্ট করে দিতে পারব না। আপনারা আসুন, আমাদের শুভকামনা থাকবে।’ নির্বাচনের পরিবেশ অনুকূল-প্রতিকূল হওয়াটা আপেক্ষিক মন্তব্য করে সিইসি বলেন,  রাজনৈতিক যে সংকটগুলো সম্পর্কে আমাদের প্রত্যাশা সব সময় ইতিবাচক। নির্বাচন বিষয়ে আমাদের রাজনীতিতে বিদেশিরা এসে অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন। অথচ আপনারা দিতে পারছেন না। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে এ দায়িত্বটা নিতে পারতেন। চেষ্টা করতে পারতেন নিজেদের মধ্যে সংলাপ করে একটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। তিনি আরো বলেন, ভোট সামনে রেখে সময়ও ফুরিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে ইসির বাধ্যবাধকতার কথাও স্মরণ করেন সিইসি। তিনি দলগুলোর উদ্দেশে বৈঠকে বলেছেন, সময়সীমা সংবিধানে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। সিইসি গুরুত্বপূর্ণ খোলামেলাভোবে একটি তথ্য দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের সামর্থ্য অত্যন্ত সীমিত। নির্বাচনের আয়োজন ইসি করলেও  পরিচালনার দায়িত্বটা আমাদের হস্তান্তর করে দিতে হয়। তাদের ওপর আমাদের নজরদারি থাকবে। পোলিং এজেন্ট যদি আপনাদের (প্রার্থী) প্রোটেক্ট করতে না পারে, আমরা ঢাকা থেকে প্রোটেক্ট করতে পারব না। আবার একথাও বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল যে পরিবেশ অনুকূল বা প্রতিকূল যা-ই হোক না কেন, নির্বাচন আয়োজনের বিকল্প তাদের সামনে নেই।

ইসির বক্তব্যে যে কারণে আশংকা 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের অভাব অভিযোগ শুনে ইসি’র দৃঢ়চেতা স্বাধীন বক্তব্য আশা করেছিল অংশ নেয়া খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই এই বৈঠকে বিব্রতবোধ করেছে আমন্ত্রণে আসা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্যে। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিকদেরও মুখে শুনেছে অন্যরকম কথা। যেমন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেছেন, নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হয় এবং এ নির্বাচনে যাতে জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সে জন্য ইসিকে অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে হবে। এদিকে ইসি’র ডাকা সংলাপে আসা জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) বক্তব্যেও আসা মারাত্মক চিত্র। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোমিনুল আমিন  যখন বলছিলেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর যেভাবে দায়িত্ব চাপিয়েছেন, তাতে আকাশ থেকে হজরত জিব্রাইলের (আ.) নেতৃত্বে যদি ফেরেশতাদের বিশাল বাহিনী পাঠানো না হয়, তাহলে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনীকে মোকাবিলা করে ভোটকেন্দ্রে টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাঁর এ বক্তব্যের সময় আওয়ামী লীগের দুই প্রতিনিধি ফারুক খান ও সেলিম মাহমুদ আপত্তি জানান। অন্যদিকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি আইভি আহমেদ যখন সংলাপের এক পর্যায়ে সিইসিকে জিজ্ঞেস করেছেন নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ আছে কিনা? জবাবে সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের এখন পর্যন্ত পুরোপুরি অনুকূল পরিবেশ তেমন নেই। তবে সব সময় সম্পূর্ণ অনুকূল পরিবেশে নির্বাচন করব, সেটাও না। ৯৯ ভাগ পরিবেশ অনুকূল হবে, সেটিও বলতে পারি না। অনুকূল পরিবেশ না থাকলেও এর মধ্য দিয়ে আমাদের নির্বাচন করে যেতে হবে।  রাজনৈতিক সংকট নিরসনের সামর্থ্য ও ম্যান্ডেট কোনোটাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকট সমাধানে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। এসব বক্তব্যেও আওয়ামী লীগকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

শেষ কথা

জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হতে যাচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে ইসি’র পক্ষ থেকে সংলাপের আয়োজন করা হয়। এমন সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল যা যা বললেন তা-তে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা নানান ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের কারো কারো মতে, দেশে বিদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল কি বোঝাতে চেয়েছেন তিনি আর তার ইসি কার্যত স্বাধীন না? তার হাতে আসলে অনেক কিছুই নেই, শুধু আছে কিছু অপশন..।  কারণ তিন স্পস্ট করেই বলেছেন, সংকট নিরসনে ইসির কোনো ম্যান্ডেটও নেই। দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংকটের সমাধান করে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। আবার অন্যদিকে ২৮ অক্টোবরের পরে অত্যন্ত জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি’কে সংলাপের আহবান জানানোকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা পছন্দই করেননি। তাদের কয়েকজন এই প্রতিনিধিকে বলেন, এটা তাদের দলের জন্য বিব্রতকর। কারণ প্রধান বিরোধী দলের মূল নেতাকর্মীরা যখন একের পর এক আত্মগোপনে তখন তাদেরকে সংলাপের আহবান জানানোও রহস্যজনক এবং হয়েছেও তাই। কেননা নির্বাচন কমিশন (ইসি) বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) তালাবদ্ধ বিএনপি কার্যালয়ের গেটের চেয়ারে সংলাপের চিঠি রেখে এসেছে যা দেশে বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে, দেখা দিয়েছে বিতর্ক। বলা হচ্ছে এতে করে ইসি কি তার পুরো পরিস্থিতিতে তার অসহায়ত্ব বোঝাতে এমন সংলাপের আয়োজন করেছে?  আর এসব কারণে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জন্য স্বাধীন নির্বাচন বলে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটি আসলে কতটা প্রস্তুত, যেখানে খোদ সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল এমন সব বক্তব্য দেন? তাহলে এই ইসি সামনে তাদের যদি আরো কোনো অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়ে যায় এবং তা তুলে ধরতে আচমকা আরো কিছ বলে বা বসেন কি-না-এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ক্ষমতাসীন শিবিরে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জনের যে বিপদজ্জনক চ্যালেঞ্জে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)’র আয়োজনে সংলাপে কি তা ফুলে উঠলো? আর এমন আয়োজনের জন্যে খোদ আওয়ামী লীগের তীর্ষক দৃষ্টি এখন ইসি এবং সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের প্রতি।

শেয়ার করুন