২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন


খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মমিনুল হক ভুঁইয়া পেলেন মরণোত্তর সম্মাননা
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৪
খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মমিনুল হক ভুঁইয়া পেলেন মরণোত্তর সম্মাননা সম্মাননা প্রদান করা হচ্ছে


খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রধান শিক্ষক মমিনুল হক ভুঁইয়াকে মরনোত্তর সম্মাননা প্রদান করা হলো। এর পাশাপাশি প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম চৌধুরীকেও মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ৩০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা, মরণোত্তর সাংবাদিক ইউনুস আলিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার খোসবাস গ্রামে খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠে এই সম্মাননার আয়োজন করা হয়। এদিনই কুমিল্লার বরুড়ায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল খোসবাস বার্তার ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় সাবেক যুগ্ম সচিব মনীদ্র কিশোর মজুমদার। প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন বরুড়া উপজেলার বর্তমান সংসদ সদ্যস্য এ জেড এম শফিউদ্দীন শামীম। বিশেষ অতিথির আসন গ্রহণ করেন বরুড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, এ এন এম মইনুল ইসলাম। কবি ও ছড়াকার এবং কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক দুলাল। আরও ছিলেন বংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ক্রিয়া সংগঠক ও সাবেক ম্যানেজার বদরুল হুদা মনু। কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইয়িদ মাহমুদ পারভেজ ও বরুড়া পৌরসভার সাবেক মেয়র বাহাদুরুজ্জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খোশবাস বার্তার সম্পাদক মো. ইউনুস খান। অত্র অনুষ্ঠানে খোসবাস বার্তার ৮ম বর্ষপূর্তি সংখ্যার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কুউজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন রুবেল কুদ্দুছ ও শাকিলা জামান।

মমিনুল হক ভুঁইয়া অবদান

খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম প্রধান শিক্ষক মমিনুল হক ভুঁইয়া জন্ম ১৯০৩ সালে কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার খোসবাস গ্রামে। তিনি ১৯৮৮ সালের ১১ই জিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ওনার বাবার নাম আকামত আলী ভুঁইয়া ও মায়ের নাম আলতাফের নেসা। তিনি এলাকায় হক সাহেব নামে সবার কাছে সম্মানিত। হক সাহেবের সহধর্মিণী ছিলেন নুর জাহান বেগম। ব্যক্তিজীবনে সাত সন্তানের জনক এবং একজন সফল পিতা ছিলেন তিনি। ছাত্রজীবনের শুরুতেই সাফল্য পেয়েছিলেন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায়। ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম হন। শুধু তাই নয় ইংরেজিতে সর্বোচ্চ নম্বর পান। জেলা শিক্ষা অফিসার (ইংরেজ) তখন হক সাহেবকে ডেকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে পুরস্কৃত করেন। অত্যন্ত মেধাবী হওয়ার কারণে পরবর্তী সময়ে তাকে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয়। জিলা স্কুল থেকেই এন্ট্রাস পরীক্ষায় প্রথম হন। সেই সাফল্যের সাক্ষী হিসেবে জিলা স্কুলের অনার্ড বোর্গের প্রথম নামটা লেখা ছিল মমিনুল হক ভুঁইয়া। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ১৯২৩ সালে মেধা তালিকায় বিএ পাস করেন। হক সাহেব ছিলেন খোসবাস ভুঁইয়া বাড়িসহ অত্র অঞ্চলের প্রথম বিএ পাস। এখানে উল্লেখ্য যে, হক সাহেব পিতৃহারা হন তিন বছর বয়সে। সেরাজুল হক ভুঁইয়া ছিলেন হক সাহেবের বড় ভাই এবং তিনি ওনার লেখাপড়ার সব দায়িত্ব পালন করেন। এলাকায় ডাক ব্যবস্থা না থাকায় ১৯৫২ সালে নিজের উদ্যোগে খোসবাস গ্রামে ডাকব্যবস্থা স্থাপন করেন মমিনুল হক ভুঁইয়া। শুধু তাই নয় খোসবাস ইউনিয়ন পরিষদ গঠন করে ১৯৬০-১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে। তিনিই খোসবাস ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম চেয়ারম্যান। এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্টসহ বহু উন্নয়ন করেন। গভীর নলকূপ বসিয়ে নিরাপদ খাবার পানির ব্যবস্থা করেন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন-সবই ওনার অবদান। সফল ভাবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করায় ১৯৬৪ সালে তৎকালীন রেডিও পূর্ব পাকিস্তান থেকে সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয় হক সাহেবের। চেয়ারম্যান থাকাকালীন অবস্থা থেকেই উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য কাজ শুরু করেন। প্রথমে নিজের বাড়ির কাচারি ঘর, কখনো ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ছাত্র পড়ানো শুরু করেন। পরে মমিনুল হক ভুঁইয়ার দাদির ভাই, জয়নুল আবেদীন সাহেবের সঙ্গে স্কুলের জমি নিয়ে কথা হলে তিনি ওনার জমি স্কুলের জন্য দান করেন। তখন নিজের টাকায় ইট ও অনান্য সরঞ্জাম কিনে দালান করেন। তার পর ১৯৬৯ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খোসবাস উচ্চ বিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠারর দিন থেকেই তিনি প্রধান শিক্ষক ও নবম ও দশম শ্রেণীর নিয়মিত ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন। বহু বছর ঐ দায়িত্ব পালন করেন। বার্ধক্যের কারণে স্কুলকে একটা পর্যায়ে নিয়ে এসে সেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়কালীন হক সাহেবের বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। বরুড়া উপজেলার সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মিলন এই হক সাহেবের বাড়িতে বহু রাত কেটেছে যুদ্ধের সময়। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার ও আশ্রয় দিয়েছেন নিজের ভিটায়।

শেয়ার করুন