০৪ মে ২০১২, শনিবার, ০৭:৩৭:০২ পূর্বাহ্ন


ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে বাহাস হাস্যকর
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২৪
ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে বাহাস হাস্যকর ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান


মুসলিম বিশ্ব এবং বিশ্বের সংবেদনশীল মানুষ যখন গাজায় বর্বর ইসরাইল সামরিক বাহিনীর গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করছে বাংলাদেশে কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবেশী ভারতের পণ্য বর্জন করার আন্দোলন করছে। সরকারবিরোধী মহলের ধারণা ভারত এককভাবে বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিয়ে নাকি ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে। বাস্তব পরিস্থিতি হলো দেশে এখন কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। জনস্বার্থ সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নিয়ে প্রধান বিরোধী দল এককভাবে বা অন্যান্য প্রান্তিক দলগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কোনো আন্দোলন করার সক্ষম অবস্থায় নেই। তাই বর্তমান মুহূর্তে অবাস্তব ভারতীয় পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আসর গরম করার চেষ্টা নিয়েছে। বিশাল ভারত একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাংলাদেশ চাল, দল, লবণ, চিনি, সবজি, পেঁয়াজ, মরিচ থেকে সবধরনের মশলা ভারত থেকে আমদানি করে। 

ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ওইসব জিনিসের বাইরে ভারত থেকে অতীব জরুরি বিদ্যুৎ, ডিজেলের মত পণ্য আমদানি হয়। ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কৃষক সমাজ প্রায় অধিকাংশ পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদন করলেও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব এবং পণ্য চলাচলে দুর্বৃত্তায়নের কারণে একদিকে কৃষক অন্যদিকে গ্রাহক সঠিক মূল্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই সব কারণে ভারতীয় পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা অপরিহার্য। অদূর ভবিষ্যতেও এই নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ দেখি না। এই পরিস্থিতির জন্য সরকার, সরকার ঘনিষ্ঠ সিন্ডিকেট এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল সবার দায় রয়েছে। 

দেশে যথেষ্ট উঁচুমানের তৈরিপোশাক এবং শাড়ি উৎপাদিত হলেও মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তের কাছে ভারতীয় একই জাতের পণ্যের বিপুল চাহিদা। ভারতীয় শাড়ি আর লেহেঙ্গা ছাড়া মধ্যবিত্তের বিয়ে সাদী হয় না। ভারতীয় মশলা ছাড়া উপাদেয় খাবার রান্না হয় না। ভারতীয় টিভি সিরিয়েল না দেখলে বাংলাদেশি অনেক মহিলাদের রাতের ঘুম ভালো হয় না। যদিও এভাবে বলা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হয়তো যাথার্থ হয়নি, তাবু উনি সঠিক বলেছেন। বিরোধী দলের নেতা নেত্রী যারা ভারতের পণ্য বর্জনের আহবান জানাচ্ছেন তারা যেন তাদের স্ত্রীদের ভারতের শাড়ি পুড়িয়ে ফেলেন। হেঁসেল থেকে ভারতীয় মশলা ফেলে দেন। 

বাস্তব অবস্থা হলো যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পক্ষে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণবিহীন সুষ্ঠু সাপ্লাই চেইন গড়ে না উঠবে, যতদিন পর্যন্ত মৌসুমি ফসলগুলো সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে না উঠবে। ততদিন বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। 

বাংলাদেশে একসময় ভারতীয় গরু আমদানি না হলে কোরবানি হত না। এখন কিন্তু দেশে গরু পালন শিল্পে পরিণত হওয়ায় ভারতীয় গরুর প্রয়োজনীয়তা নেই বললেই চলে। একইভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সরকারের একার পক্ষে সবকিছু করা অসম্ভব। সর্বস্তরের জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা অত্যাবশ্যক। আর এই কাজটি সম্মিলিতভাবে করতে হবে সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও মিডিয়াকে। 

একজন স্বাধীনচেতা মানুষ হিসাবে আমি নিজে ভারতের ওপর নিরঙ্কুশ নির্ভরতার ঘোর বিরোধী। কিন্তু ভারত বিষয়ে ভারতীয়দের যত দেশপ্রেম দেখেছি, বাংলাদেশিদের বাংলাদেশ নিয়ে তত দেশপ্রেম দেখি না। আর তাই বাংলাদেশে ব্যবসায়ী মহল সকল পণ্যে ভেজাল দিতে কুন্ঠাবোধ করে না। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে নানা পণ্য অবৈধভাবে গুদামজাত করে মূল্য বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে মাছ-মাংস, সবজি, ফলমূল সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। চাহিদা সরবরাহ ভারসাম্যের কারণেই সব কিছুতে ভারত নির্ভরতার কারণ নেই। একই সঙ্গে বাস্তবতার কারণে ভারতের পণ্য বর্জনের ঘোষণা সময়ের অপচয় মাত্র। এগুলো নিয়ে সরকারি দল বা প্রধানমন্ত্রীর বিচলিত হবার কারণ নেই। বরং সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ এবং বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে অধিক মনোযোগ দিলে ভালো হবে। ফলে ভারতের পণ্য বর্জন নিয়ে রাজনৈতিক বাহাস রীতিমতো হাস্যকর।

শেয়ার করুন