২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১০:৪১ অপরাহ্ন


দেশকে সামিনা চৌধুরী
ব্যক্তিগত জীবনে আফসোস আছে সঙ্গীত জীবনে নেই
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
ব্যক্তিগত জীবনে আফসোস আছে সঙ্গীত জীবনে নেই সামিনা চৌধুরী


সামিনা চৌধুরী। অডিও, চলচ্চিত্র ও নাটকের গানে কণ্ঠ দিয়ে চার দশক পার করে দিয়েছেন তিনি। তাঁর গাওয়া গানের সংখ্যাও সহস্রাধিক। সম্প্রতি অনলাইনে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর নতুন একক গান ‘আমি ভালো নেই’। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউায়ির্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির। 

প্রশ্ন: সঙ্গীতে আপনার দীর্ঘ ক্যারিয়ার। এই পর্যায়ে এসে জীবন নিয়ে আপনার কোনো আফসোস হয়?

সামিনা চৌধুরী: ব্যক্তিগত জীবনে আফসোস আছে তবে সংগীতজীবনে আফসোস নেই। তবে কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। অনেকে স্বজনপ্রীতি করে আমাকে গান গাইতে দেয়নি। আমি বারবার ভিকটিম হয়েছি। সিনেমা, অডিও এবং স্টেজ শোতেও। সবার কাছে ছড়ানো হয়েছে- আমি মুডি, আমি এই, আমি সেই, আমি রাগী। সামহাউ আমাকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি ক্যারিয়ারিস্ট না, তাই সবার সঙ্গে লবিং মেইনটেইন করিনি। একটা আফসোস আছে, আমার গলাটা কেন যে আশা ভোসলে ও লতা মঙ্গেশকরের মতো হলো না। আব্বাকে খুব বেশি কাছে পাইনি। বাবার জন্য কিছুই করতে পারিনি বলেও আফসোস হয়।

প্রশ্ন: সংগীত জীবনের চলার পথে লবিং খুব কাজে দেয় কি?

সামিনা চৌধুরী: দেয় এবং পরিবেশ নষ্টও করে। আমার যোগ্যতা কিছু থাকলেও লবিংয়ের কারণে যতটা এগিয়ে যাওয়ার, ততটা পারিনি।

প্রশ্ন: নচিকেতা চক্রবর্তীর সুরে গান অনেক দিন সময় নিয়ে করলেন এর কারণ কী?

সামিনা চৌধুরী: সৃষ্টিশীল কাজ তো ঘড়ি ধরে শেষ করা যায় না। তাই কোন গান তৈরিতে কত দিন লেগেছে, সেই হিসাব-নিকাশেরও মানে নেই। নচিকেতার সুরে গাওয়া ‘আমি ভালো নেই’ গানটির বেলায় সেটাই হয়েছে। গানের কাজ শুরু হয়েছিল অনেক দিন আগে। কিন্তু তা প্রকাশযোগ্য করে তুলতে অনেকটা সময় লেগে গেছে। এর আসল কারণ রাসেল, নচিকেতা, পঞ্চম- কেউই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে কাজ করতে চায়নি। সৃষ্টিতে রাখতে চেয়েছেন নান্দনিকতার ছাপ। আমিও স্রোতে গা ভাসাতে চাইনি কখনও। তাই সবার সম্মিলিত ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি হয়েছে।

প্রশ্ন: এই গানে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

সামিনা চৌধুরী: পঞ্চম তো পরিবারের সদস্য, ছোট ভাই। তাই শুরু থেকেই জানা ছিল, সংগীতে ডুবে গেলে ও পৃথিবী ভুলে যায়। তাই সংগীতায়োজনের সময় ওর মতো করেই কাজ করতে দেওয়া হয়েছে। জুলফিকার রাসেলের সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। তার লেখা বেশ কিছু গান গেয়েছি, যেগুলো অনেকের প্রিয়। শুধু নচিকেতার সঙ্গেই কাজের তেমন কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। কাজ করতে গিয়ে এটুকু বুঝেছি, নিজের প্রতিটি কাজেই তিনি রাখতে চান নতুনত্বের ছোঁয়া। 

প্রশ্ন: ফাহমিদা নবী বলেছিলেন, আপনার সঙ্গে যৌথ অ্যালবাম করতে চান। কাজ কি শুরু করেছেন?

সামিনা চৌধুরী:  আমাদের তো অনেক কিছুই করার ইচ্ছা হয়। ফাহমিদারও এমন ইচ্ছা হতেই পারে। কিন্তু সত্যি এটাই, আমাদের দুই বোনের এখনও কোনো দ্বৈত বা যৌথ অ্যালবাম তৈরি করা হয়ে ওঠেনি। তবে হ্যাঁ, বাবার (বরেণ্য শিল্পী মাহমুদুন্নবী) কালজয়ী গানগুলো নতুন করে প্রকাশ করার জন্য আমরা অনেক দিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি। মাঝে ‘আমার গানের প্রান্তে’ নামে একটি অ্যালবামও প্রকাশ করেছি।

প্রশ্ন: ‘আমার গানের প্রান্তে’ অ্যালবামের নতুন কোনো খণ্ড প্রকাশ পাবে কি?

সামিনা চৌধুরী:  এটা এখনই বলা কঠিন। শুরুতে আমরা অ্যালবামটির কয়েকটি খ- তৈরি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ক্যাসেট, সিডি যুগ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনলাইনে নতুন সংগীতায়োজনে কালজয়ী গানগুলো একটি-দুটি করে প্রকাশ করা যেতে পারে। এখন কবে কী হবে, সেটা সময়ই বলে দেবে। 

প্রশ্ন: ‘সেই থেকে শুরু’ বেশ সাড়া ফেলেছিল। এর নতুন কোনো সিজন নিয়ে ভাবছেন?

সামিনা চৌধুরী:  ‘সেই থেকে শুরু’র নতুন পর্ব তৈরির ইচ্ছা তো আছেই। ভাবছি, এ বছর এর নতুন সিজন শুরু করব। কারণ, মাত্র কয়েক পর্বে ঘটনাবহুল জীবনের গল্প ফুরাবে না। খেয়াল করেছি, আমার শিল্পীজীবনের একেকটি অভিজ্ঞতা শোনার পর দর্শকের জানার আগ্রহে বেড়েছে। এই আয়োজন থেকে এটাই বুঝেছি, কিছু মানুষ এখনও শিল্পীদের সাধারণ মানুষের কাতারে ফেলতে চান না। তারা মনে করেন, শিল্পীদের জীবন অন্য আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো নয়। এই আয়োজন দিয়েই বোঝাতে চাই, আবেগ-অনুভূতির জায়গা থেকে শিল্পীরাও সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা নন।

প্রশ্ন: জীবনে কী কী দুঃখ পেয়েছেন?

সামিনা চৌধুরী: ২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি আমার ৩ নম্বর সন্তানের জন্ম। জন্মের পর পৃথিবীতে সাড়ে ১১ ঘণ্টা বেঁচে ছিল। ওকে আমি দেখতেই পারিনি। এটা জীবনের একটা বড় কষ্ট।

প্রশ্ন: এত কিছুর পর জীবনীশক্তি কী?

সামিনা চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়েছে, স্রষ্টাকে আঁকড়ে ধরে পড়ে আছি। গান আমি গাই, কিন্তু স্রষ্টা যেদিন আমাকে আর গাওয়ার শক্তি দেবেন না, সেদিন হয়তো গাইব না। কিন্তু তিনিই আমাকে শক্তি, সাহস ও অনুপ্রেরণা দেন। আমার তৃতীয় সন্তান মারা যাওয়ার কয়েক দিন পর কোরবানির ঈদ। আমি জানি যে এমন একটা উৎসব, মন খারাপ থাকলেও পালন করতে হবে। আমি ঠিকই বাসার সব কাজ করলাম। এরপর একটা গান শুনে সুস্থ হয়ে গেলাম। লতা মঙ্গেশকর ও জগজিৎ সিংয়ের জো ভি বুরা ভালা হ্যায় আল্লাহ জনতা হ্যায়-এই যে বার্তা আমাকে অনেক শক্তি দেয়। সেই থেকে গানের বাণী আমার সবচেয়ে বড় জীবনীশক্তি।

শেয়ার করুন