০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:০৭:৩১ পূর্বাহ্ন


রাজধানীতে বসেই তৃণমূলের কোন্দল নিরসনে আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৪-২০২৪
রাজধানীতে বসেই তৃণমূলের কোন্দল নিরসনে আ.লীগ


ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে তৃণমূলে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। তৃণমূলের পরিস্থিতিকে কেউ কেউ অগ্নিগর্ভ বলেও অভিহিত করছেন। তবে এতো বড়ো একটি দলের তৃণমূলে ক্ষোভ কোন্দল নিরসন করতে রাজধানীতে ড্রয়িং রুমে বসে সমাধান করার চেষ্টা করছে দলটি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

যে কারণে কোন্দল মেটানোর উদ্যোগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করেছে। আওয়ামী লীগের পর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। তারা জয় পেয়েছে ৬১টি আসনে। এবারের সংসদ নির্বাচনকে পশ্চিমাদের কো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী দাড় করানোর ব্যবস্থা নেয়। যদিও নির্বাচনে এমন ব্যবস্থায় ’আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যায় প্রভাবশালী প্রার্থীরা। কিন্তু এতো কিছুর পরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওযার ব্যপারে বড়ো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে দলটি। কিন্তু একদিকে সমাধানের পথ দেখলেও অন্যদিকে দল নিয়ে বড়ো ধরনের বিপদের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতার খবর এখনো মিলছে এবং তা চলমান। কোথাও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর, আবার কোথাও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা চলছেই। এছাড়া আছে বিভিন্ন জায়গায় পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর, আবার কোথাও বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি ধামকি মহড়াতো লেগেই আছে। অনেক জায়গায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও এখনো চলমান বা ওইসব এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। এখনো কোনো জায়গায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘর, দোকানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে। 

বিচলিত আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের ৪১ জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সহিংস এসব ঘটনায় ৭ জন নিহত ও অন্তত ৬৯৬ জন আহত হন। এ ছাড়া চার শতাধিক বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে এমন ঘটনার যখন চলমান তখন দ্বারে এসে নক করেছে উপজেলা নির্বাচন। এই উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। জানা গেছে বর্তমানে আওয়ামী লীড়ের ৩৩টি সাংগঠনিক জেলার আওতাধীন ৮৫টি উপজেলায় প্রকট গৃহদাহ সৃষ্টি হয়েছে বলেও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়। এনিয়ে এখন হাইকমান্ড বিচলিত। 

প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত গড়াল

দলের ভেতরে এমন অবস্থা শেষ পর্যন্ত সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিভিন্ন স্থানে খুনাখুনির মতো নির্মম ঘটনার পাশাপাশি পরস্পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, হামলা-মামলা, পাল্টা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় এবং স্বতন্ত্র এমপিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে একটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলের সদস্যদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ পরিহার করে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছিলোন। বলেছিলেন, “এলাকায় কোনো গ্রুপিং ও আন্তঃদলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে না। সবাইকে কাজ করতে হবে। আমি মনোনয়ন দেব। যারা এলাকায় কাজ করতে চান তাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে”। এরপরে নির্বাচন হয়ে গেলে দেখা দেয় মারাত্মক অবস্থা। বাধ্য হয়ে বর্তমানে দলের কঠিন অবস্থায় মুখে দ্বাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিভেদ ভুলে দলের নেতাকর্মীদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানালেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে তিনি আরও বলেন, একটা কথা আমি বলবো, কোনো রকম সংঘাত আমি চাই না। আর যারা এর সঙ্গে জড়িত থাকবেন, সে যেই হোক, তার বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু বিধি বাম। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। গৃহদাহ ভুলে একসঙ্গে মিলেমিশে সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার যে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী তা নিয়ে যেনো নেতাকর্মীদের মধ্যে মাধা ব্যথা নেই। বরং বিভিন্ন এলাকায় যে যার মতো করে হুংকার ছাড়ছে। আর এমনই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তৃণমূল নেতাকর্মীর সঙ্গে বৈঠকের তাগিদ দিয়েছিলেন তিনি, সেটিই এখন চলছে। 

তবে সেটা চলছে ড্রয়িং রুমে

তবে দলের মধ্যে এমন সংঘাত সহিংস অবস্থা নিরসনে চলছে অভিনব অবস্থা। রাজধানীতে আরাম আয়েসে কঠোর নিরাপত্তা নিয়ে হাইকমান্ডের সদস্যরা দলের বিশেষ করে তৃনমূলে বিভিন্ন স্থানে সংর্ঘষ সংহিসতা কোন্দল মেটাতে বৈঠক করছেন। সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও শুরুও হয়েছে। আর এসব বৈঠকে দলের ভেতরে বিভেদ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীকে সমর্থন করা না-করার বিষয়টিই আলোচিত হচ্ছে। বেঠকে গৃহদাহ নিরসনে তৃণমূল নেতাকর্মীরা কেন্দ্রের হস্থক্ষেপ চেয়েছেন অনেকে। গত শনিবার রংপুর এবং রোববার চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর নেতা ও সংসদ সদস্যদের নিয়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন। ৪ এপ্রিল খুলনা এবং ২১ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে ঈদের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তবে সব বৈঠকই হচ্ছে রাজধানী ঢাকায় ড্রয়িং রুমে, এসি রুমে বসে।

শেয়ার করুন