০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৭:০৫:১১ পূর্বাহ্ন


বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৪-২০২৪
বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ


রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী অন্যদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কর্মসূচি দিয়ে নতুন বছরে পাল্টাপাল্টি রাজনীতির যাত্রা শুরু করেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর প্রথম এধরণের কর্মসূচি দেয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। 

বিএনপি’র কর্মসূচি

বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে ২৬ এপ্রিল নয়াপল্টনে সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। একই দিন রাজধানীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মাধ্যমে পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি) চিঠিও দিয়েছিল বিএনপি। অন্যদিকে একই দিনে আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে পাল্টা সমাবেশের ঘোষণা দেয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা যোগ দেবেন সেই সমাবেশে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সমাবেশের জন্য ডিএমপিকেও অবহিত করা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি জানিয়েছে, চলমান তাপদাহ ও হিট অ্যালার্টের কারণে এই সমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শুক্রবার শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

বিএনপি’র এমন কর্মসূচির নেপথ্যে

যদিও চলমান তাপদাহ ও হিট অ্যালার্টের কারণে এই সমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তারপরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এমন কর্মসূচির পেছনে কি? লিফলেট কর্মসূচি ফেলে দিয়ে কেনো বিএনপি এই কর্মসূচি দিয়েছে তা নিয়ে চলছে আলোচনার ঝড়। ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন যেনো হতে না পারে সেজন্য দলটি বেশ কয়েকটি কঠোর কর্মসূচি নিযেছিল। কিন্তু শেষমেষ যখন নির্বাচনটি হয়েই যাবে ধরে নেয় তখন বিএনপি লিফলেট জাতীয় কর্মসূচি শুরু করে। ভোট কেন্দ্রে না যেতে আহবান জানিয়ে তাদের লিফলেট কর্মসূচি পালন করে। এরপর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেলে তার প্রায় এক মাস পর আবারো শুরু করে লিফলেট কর্মসূচি। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তি ও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি দেয় বিএনপি। ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ও বুধবার ঢাকাসহ দেশের সব মহানগরে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।

আওয়ামী লীগের উদ্বেগের জায়গা

অন্যদিকে নিবব নিথর হতাশায় আছে বলে বিদ্রুপ করা হচ্ছে যে বিএনপি’র বিরুদ্ধে সে-ই দলটিরই কর্মসূচির বিপরীতে ক্ষমতাসীনদের পাল্টা পদক্ষেপ ভাবিয়ে তুলেছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলকে। কারো কারো মতে, ক্ষমতাসীনদের এমন পাল্টা কর্মসূচির নেপথ্যে থাকতে পারে বেশ কয়েকটি কারণ। একটি হতে পারে কোনোভাবেই রাজনৈতিক মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’কে ফ্লোর না দেয়ার বিষয়টি। অন্যটি হতে পারে সরকার মুখে যা-ই বলুক না কেনো গোপনে বিএনপি’কে নিয়ে তাদের হিসাব-নিকাশ ঠিকই আছে। যখন তখন যে কোনো ধরনের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনকে উত্তপ্তের পাশাপাশি বেকায়দায় ফেলতে পারে তাদের-এমন আশঙ্কাও ক্ষমতাসীনদেরকে। আর সে-থেকেই পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নিজেদের একটি শক্তিশালি অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। আর ক্ষমতাসীনরা যে বিএনপি’কে নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছে তা দলটির একেবারে শীর্ষ থেকে নিয়ে মাঝারি গোছের নেতাদের কথাই বোঝা যায়। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিএনপি কে নিয়ে বেশ তীর্যক ও ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। ক্ষমতায় বসেই বলা হলো বিএনপি পরাজয়ের ভয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং জনগণের কাছে বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়ে ক্ষমতায় আসার অন্ধকার গলি খুঁজছে। বলা হয় বিএনপি সব সময় জনগণের ম্যান্ডেটের পরিবর্তে অন্য শক্তির সহায়তায় ক্ষমতায় যেতে চায়। কিন্তু এব্যাপারে কোনো ব্যাখা দেয়া হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের ডাকে পাল্টা কর্মসূচিতে মসে হচ্ছে বিএনপি’র দ্বারা ক্ষমতায় আসার অন্ধকার গলি খোঁজাখুঁজি ঠেকাতেই মাঠে সর্তক আওয়ামী লীগ। 

শেষ কথা..

মাত্র কয়েকদিন আগেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতিবাচক কর্মকান্ডের প্রতি জনগণের কোনো আগ্রহ নেই। তিনি বলেছেন, বিএনপির প্রতি জনগণের একধরনের ঘৃণা রয়েছে। যে কারণে জনগণ বারবার তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। আবার বলেছেন, বিএনপি নিজেই রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। তারা ব্যর্থ রাজনীতির ধারায় হাঁটায় হোঁচট আর ঝাঁকুনির প্রকোপে পর্যুদস্ত। বলেছেন, আন্দোলনে ও নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নিজেরাই ‘মহাবিপদে আছে’। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতার ভিত এত শক্তিশালী মনে করা হলে কেনো মাঠের এই ধরনের একটি নড়বড়ে বিরোধী দলের সাদামাটা সমাবেশ মোকাবেলায় পাল্টা কর্মসূচি দিতে হচ্ছে? কেনো ক্ষমতাসীনদের একেবারে শীর্ষ থেকে নিরব নিথর ঝাঁকুনির প্রকোপে পর্যুদস্ত বিএনপি’কে মোকাবেলায় সর্তক থাকতে হবে? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমগল মনে করেন পশ্চিমাদের গোপন বা নিরব চাপেই ক্ষমতাসীনরা হয়তবা বেকায়দা আছে। সেক্ষেত্রে মাঠের প্রধান বিরোধী দল একটু তৎপর হলে পরিস্থিতি হয়তো ক্ষমতাসীনদের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। কেননা আওয়ামী লীগ যতো মুখে হুঙ্কার ছাড়ুক না কেনো তাদের মাথায় আছে শক্তিশালি পশ্চিমাগোষ্ঠী বাংলাদেশে সুশাসন, গণতন্ত্র আর সুষ্ঠু নির্বাচন প্রশ্নে সাময়িক ছাড় দিয়েছে। কিন্তু কঠোর পর্যবেক্ষনেই আছে। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্র এক বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। একই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে আটক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সুষ্ঠু আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সর্বশেষ বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। এতে তারা বলেছে, বাংলাদেশে স্বাধীন আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়। আছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা। আর এসব সার্বিক কারণে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল নয় মাঠে প্রধানকেই শক্তিশালি মনে করে সর্তক থাকছে আওয়ামী লীগ। এর আরেক অর্থ হচ্ছে বিএনপি’র আন্দোলন ঠেকানোই এখন ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। একারণেই বিএনপি’র সব ধরনের কর্মসূচিতেই সজাগ আওয়ামী লীগ- এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন