১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ৬:২৬:৪১ অপরাহ্ন


দেশকে দেয়া সেই সাক্ষাতকারে পঙ্কজ ভট্টাচার্য যা বলেছিলেন
বিএনপি জামায়াত ছাড় আ.লীগ হেফাজত ছাড়
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৩
বিএনপি জামায়াত ছাড় আ.লীগ হেফাজত ছাড় পঙ্কজ ভট্টাচার্য


দেশকে দেয়া সেই সাক্ষাতকারে পঙ্কজ ভট্টাচার্য যা বলেছিলেন। যা

আবার তুলে ধরা হলো দেশ এর পাঠকদের জন্য 


ষাটের দশকের স্বৈরশাসক আইয়ুব-ইয়াহিয়াবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা, ঐক্য ন্যাপ সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেছেন, বিএনপিকে ঘোষণা করতে হবে যে জামায়াতকে তালাক দিলাম। জামায়াতের সাথে কোনো ধরনের সংশ্রব রাখবো না। বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ করতে হবে প্রকাশ্যেই। আত্মসমালোচনা করতে হবে, যে তারা ক্ষমতায় কিংবা বিরোধীদলে থাকলেও আর অতীতের মতো গর্হিত কাজ করবে না। জনগণের কাছে গিয়ে বিএনপিকে অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। 

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিরি একথা বলেন। ঐক্য ন্যাপের সভাপতি প্রবীণ রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য অনেক অসুস্থতা নিয়ে সাক্ষাৎকারটি দেন। দ্বিতীয় দফা করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তাকে বাসায় অক্সিজেন নিয়ে চলাফেলা করতে হচ্ছে। এই অবস্থাতেই তার এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

ব্যক্তিজীবনের সকল ধরনের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে গরিব মেহনতী, কৃষক-শ্রমিক, সংখ্যালঘু-আদিবাসী, নারী-শিশুসহ মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসের দায়বদ্ধতা নিয়ে এখনো দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, প্রচারবিমুখ ও অগ্রসর চিন্তার এমন একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক, তিনি হলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসৈনিক পঙ্কজ ভট্টাচার্য। পঙ্কজ ভট্টাচার্য, জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়া গ্রামে ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট। দুই ক্ষণজন্মার জন্ম এই গ্রামে। যাদের একজন অগ্নিযুগের বিপ্লবী ‘মাস্টারদা সূর্যসেন’ ও অন্যজন মহাকবি ‘নবীন চন্দ্রসেন’। পিতামহ রমেশ ভট্টাচার্য ছিলেন ব্রিটিশ আমলের বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজসংস্কারক। পিতা প্রফুল্ল কুমার ভট্টাচার্য একজন আত্মনিবেদিত শিক্ষাব্রতী আর মাতা মনিকুন্তলা দেবী স্বদেশী ও প্রগতিশীল আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মাতৃসম ও সুখ-দুঃখের আশ্রয়স্থল। পঙ্কজ ভট্টাচার্য মূলত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে গড়ে ওঠা যুগান্তর ও অনুশীলন নামক সংগঠনের ছায়াতলে বেড়ে ওঠেন। পরিবারের আদর্শিক ধারাবাহিকতায় শৈশব থেকেই মানবমুক্তির দীক্ষায় প্রবাহিত হন। ফলে স্কুলজীবন থেকেই জড়িয়ে পড়েন মানবমুক্তির রাজনীতিতে। অদ্যাবধি লড়ছেন, লড়াই করছেন, উৎসাহিত করছেন, উৎসাহ জোগাচ্ছেন সহকর্মী ও দেশবাসীর প্রত্যাশিত সমাজের পথরেখা বিনির্মাণে।

আগরতলা মামলার কয়েক মাস পূর্বে স্বৈরাচার আইয়ুব-ইয়াহিয়া নীলনকশায় ১৯৬৭ সালে স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলায় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আগরতলা মামলায় যুক্ত করার পরিকল্পনাও করা হয়, কিন্তু পাকিস্তানের ন্যাপ এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়বে বিবেচনায় স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলায় একক আসামি হিসেবে তাঁকে কারাগারে ৩ মাসের অধিক সময় থাকতে হয়। আগরতলা মামলার পরিসমাপ্তির পর রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ থেকে স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলাও প্রত্যাহার করা হয়। উল্লেখ্য, স্বৈরাচার আইয়ুব-ইয়াহিয়ার সময়ে সাড়ে ৪ বছরের অধিক সময় কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় পঙ্কজ ভট্টাচার্যকে।  

দেশ: এই বয়সে কেমন দেখছেন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : রাজনৈতিক পরিস্থিতি তো এককথায় বলা কঠিন। দেশে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বাড়িঘর, সড়ক মহাসড়ক, নদীর ভেতরে সড়ক সবই হচ্ছে। কিন্তু যে ধারায় বাংলাদশে অগ্রসর হওয়ার কথা ছিল সে ধারায় তো দেশ অগ্রসর হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের অর্জন ছিল গণতন্ত্র। সেটা আজ সঙ্কুচিত ও নিয়ন্ত্রিত। ভোটের জন্য এখন জনগণের দরকার পড়ে না। বিএনপি এধরনের কাজ করেছে। সামরিক কর্তারা যখন ছিল তখন তারাও এটা করেছে। আওয়ামী লীগও করছে। কিন্তু এখন যখন মুক্তিযুদ্ধের দলের নেতৃত্বে দেশ চলছে...এখনো কেন সে ধারাটা অনুসররণ করছে- এটাই বড় প্রশ্ন। জনগণ ক্ষমতার মালিক। এটা সংবিধানে লেখা আছে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সে রাষ্ট্রের মালিকের মালিকানা আছে কি? আছে কি গণতান্ত্রিক অধিকারের? এই মালিকানাটা ছিনতাই হয়ে গেছে। এটা বিএনপি আমলেও হয়েছে। সামরিক আমলেও হয়েছে। এটা এখন কেন জানি অনুসরণ করা হচ্ছে বুঝতে তো পারছি না। এধরনের পরিস্থিতিতে শুধু গণতন্ত্র খর্ব হয়নি... শুধু গণহীন নির্বাচনে পর্যবেশিত হয়নি, আজকে অর্থ আর বিত্তের কাছে ক্ষমতা, রাজনীতি জিম্মি। আজকে দেশ জিম্মি। এখন জাতীয় সংসদে শতকরা বাহাত্তর শতাংশ ধনিকশ্রেণির নেতৃত্বে। ধনীদের হাতে সংসদ। তাদের হাতে নিয়ন্ত্রক। আমলাদের হাতে নিয়ন্ত্রিক। রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদের হাতে নেই। 

দেশ: এমন অবস্থা মেনে নিয়ে দেশের মানুষ তো বেশই আছে। জনগণের মনে কোনো ক্ষোভ বা আক্ষেপ আছে বলে মনে করেন? বিষয়টা কি এমন না যে তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে মনে করছে বেশই তো আছি..আগেই কি বেশ ভালো ছিল- আপনার মতামত কি?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : জনগণ কেন ক্ষেপে উঠছে না? কেন গণঅসন্তোষ হচ্ছে না? কেন গণজাগরণ হচ্ছে না? এর মোটা দাগের কারণগুলো হচ্ছে আগের সরকার তো একই কাজ করেছে। তারাও তো একই রকম আচরণ করেছে। অতীতের যারা ক্ষমতায় ছিল যারা এখন বিরোধীদলে আছে, তাদের সমর্থন হয়তো বাড়ছে। কিন্তু জনগণ এ সরকারকে সরাতে তাদের মাথায় তুলে নাচতে শুরু করেনি। 

দেশ:  এর কারণ কি? জনগণ কি মাঠের বিরোধীদলের ডাকে আস্থা রাখতে পারছে না?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : একেবারে ঠিক। কারণ অতীতে তারা এর চেয়েও গর্হিত কাজ করেছে। তারাও গণতন্ত্র সঙ্কুচিত করেছে। ইয়েস অর নো ভোট দিয়েছে। সুতরাং তাদের ওপর আস্থা রাখতে হলে তাদেরকে সংশোধন হতে হবে। 

দেশ: এই সংশোধন তারা কীভাবে করবে? উপায় কি? 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : তারা জনগণের কাছে যেয়ে বলতে হবে যে তারা অতীতে ভুল করেছে। তাদের তো বলতে হবে যে এখন মাঠে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তা আমরা ভবিষ্যতে পালন করবো। তা না করলে আপনারা আমাদের পরিত্যাগ করবেন। বলতে হবে যে আমরা আত্মসমালোচনা করে নিজেকে সংশোধন করবো। একথা তাদের বলতেই হবে এবং এর প্রমাণ দেখাতে হবে যে, তারা পরিবর্তন হয়েছে। তাদের কাজ, আচার-আচরণই প্রমাণ করে দেবে যে তারা কতটা সংশোধন হয়েছে। এটা করতে গেলে তারা অবশ্যই জনগণকে বোঝাতে হবে যে, আমাদের ওপর আস্থা রাখেন। 

দেশ: আপনি নিশ্চয়ই এমন মেসেজ বিএনপিকে দিচ্ছেন? বলতে চাচ্ছেন বিএনপিকে জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। 

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ অবশ্যই.. বিএনপিকে জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। 

দেশ:  কিন্তু বিএনপির বিরুদ্ধে আপনারাই অভিযোগ করে থাকেন যে দলটির মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে সম্পর্ক। তারা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির সাথে জোট করেছে। তো সে বিএনপিকে মেসেজ দিচ্ছেন ক্ষমা চাইতে..  

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : হ্যাঁ..আপনার প্রশ্নটা সঠিক। বিএনপিকে ঘোষণা করতে হবে যে, জামায়াতকে তালাক দিলাম। জামায়াতের সাথে কোনো ধরনের সংশ্রব রাখবো না। কেননা জামায়াত তো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। প্রকাশ্যেই পাকবাহিনীকে সমর্থন দিয়েছে। আলবদর-আলশামস রাজাকারদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। সুতরাং বিএনপিকে সাম্প্রদায়িক এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ করতে হবে প্রকাশ্যেই। বিএনপি এই দুটি কাজ করতেই হবে। আত্মসমালোচনা করতে হবে যে, তারা ক্ষমতায় কিংবা বিরোধীদলে থাকলেও আর অতীতের মতো গর্হিত কাজ করবে না। আবার এর পাশাপাশি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা। এটা করা গেলে তারা বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন লাভে সমর্থ হবে। 

দেশ: আপনি বলছেন বিএনপিকে জামায়াতের সাথে সম্পর্কোচ্ছেদ করতে। কিন্তু দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি এ দলটিকে ছেড়ে দিলে অওয়ামী লীগ তাদের নিয়ে নেয়..এটা কীভাবে দেখেন?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : আপনি যথার্থই বলেছেন। শোনেন যে সাম্প্রদায়িক শক্তি মানুষে মানুষে বিভেদ ছড়ায় তাকে বিএনপি শুধু না আওয়ামী লীগকেও ছাড়তে হবে। সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে দোস্তির রাজনীতি আওয়ামী লীকেও ছাড়তে হবে। বিএনপিকেও ছাড়তে হবে এবং জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। হেফাজতের সাথে দোস্তি করে আপনি আমার কোমলমতি শিশুদের পাঠ্যপুস্তক বদলাবেন..হেফাজতকে সুযোগ করে দেবেন..হিংস্রতা শেখাবেন..অন্য ধর্মের প্রতি বৈষম্য দেখাবেন, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করবেন..তাহলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ থাকে কোথায়? আমার এখন এককথা। বিএনপি জামায়াত ছাড়। আওয়ামী লীগ হেফাজত ছাড়। সুতরাং জঙ্গিবাদকে যারা প্রশ্রয় দেয়, তাদের সাথে কৌশলগত বা নির্বাচনী দোস্তি নীতি ত্যাগ করতে হবে। আর জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে। 

দেশ: আওয়ামী লীগকে আপনার পরামর্শ কি?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণে কাজ করতে হবে। আমি মনে করি, এ সরকারকে বঙ্গবন্ধু প্রদর্শিত পথে হাঁটতে হবে। কেননা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলোন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ দেখতে। মানুষের কাছে গণতন্ত্রের সুফল পৌঁছে দেবেন। যদিও শেষজীবনে তিনি একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তা হলো বাকশাল গঠন। বাকশাল করেছিলেন পরিস্থিতির চাপে। পায়ের তলায় মাটি চলে গেছে, তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়েছিলেন। দলের ভেতরে ষড়যন্ত্র...দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র হচ্ছিল...দুর্ভিক্ষ হচ্ছে। সব মিলিয়ে তিনি প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়ে তিনি বাকশাল গঠন করতে চেয়েছিলেন। বাকশাল গঠন তিনি খুব আনন্দে করতে গিয়েছিলেন বলে মনে হয় না। আমরাও বাকশাল গঠনে তাতে সহায়তা করেছি। এ ব্যাপারেও আত্মসমালোচনা করা উচিত। এই দেশটাকে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তার আহ্বান ছিল, ছিল আন্তরিকতা। সে পথে যদি আওয়ামী লীগ চললে দেশের ভবিষ্যৎ আছে। তা না হলে বলতে হবে আমরা একটা কঠিন অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছি। 

দেশ: কিন্তু আপনি বলছেন দেশে গণতন্ত্র নেই...

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : না আমি বলেছি সঙ্কুচিত। গণতন্ত্র নেই বললে তো বলতে হয় আমি তো এখন কথা বলতে পারছি। কিন্তু কোন কথার কারণে আমাকে ডিজিটাল আইনে আটকাতে পারে। আপনার সাংবাদিকতার কলমটা বন্ধ করে দিতে পারে- সে ব্যবস্থা তো দেশে আছে। সুতরাং গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রিত। তাই বলছি সঙ্কুচিত গণতন্ত্রকে প্রসারিত করতে হবে। এখন জনগণকে ভয় পেলে চলবে না। তাদের মুখ থেকে সমালোচনা শুনতে হবে এবং সংসদ প্রাণবন্ত হতে হবে। একদলীয় সংসদ ব্যবস্থা রেখে তা সম্ভব না। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে। আদালতগুলো যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে বলে মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেত পারছে বলে মনে হয় না। আমাদের দেশ থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। কিন্তু তাদের নির্বাচন কমিশন নিয়ে তো প্রশ্ন আসে না। উন্নত দেশের কথা বাদই দেই। এসব দেশে তো নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন থাকে না। কেন বাংলাদেশে প্রশ্ন থাকে? কারণ বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই, স্বাধীন নয়। 

দেশ:  দেশের একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আপনি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। বর্তমান অবস্থা দেখে কি আপনি সন্তুষ্ট?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : সন্তুষ্ট তো হতে পারছি না, দুশ্চিন্তা এ কারণে। কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য  না। দুশ্চিন্তা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশটা অচেনা হয়ে গেছে। বির্বণ, মলিন হয়ে যাচ্ছে। অচেনা বাংলাদেশকে চেনা বাংলাদেশে পরিণত করতে হলে এখন থেকেই কাজ করতে হবে এবং এটা আগামী নির্বাচনকে লক্ষ রেখেই করতে হবে। জনগণ যেন তাদের মতামতটা প্রকাশ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। এই যে বারবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের জন্য ঝগড়া হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে চিরতরে। প্রতিবারই এ নিয়ে আওয়াজ তোলা যাবে না। সব রাজনৈতিক দল মিলে একটা সমঝোতা করতে হবে, নির্বাচন কমিশন হবে এভাবে। পদক্ষেপ নিতে হবে যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। এর পাশাপাশি সবাইকে বলতে হবে ওই ইলেকশন কমিশনের অধীনে নির্বাচনকে আমরা মেনে নেবো। সেই ধরনের জাতীয় সমঝোতাটা না করে তো কিছু হবে না। ধরেন আমি জাতীয় সমঝোতা না করে নির্বাচনটা দিলাম, মানলে মানো, না মানলে যাও- তা হলে তো গণতন্ত্র থাকবে না। নির্বাচন কমিশন, সংসদ, বিচার বিভাগ, মানবাধিকার কমিশনকে প্রকৃতই স্বাধীন করতে হবে। পার্মান্যান্ট সমাধান হচ্ছে, এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন করতে হবে। 

দেশ: আপনি যে কথাগুলি বলছেন, তা কি এ সরকারের দ্বারা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে? তা কি এতে আগ্রহী হবে?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : কঠিন, অনেক কঠিন। কারণ সরকার যে পথে চলে গেছে...কারণ এ সরকার অর্থশালী ব্যক্তির সিন্ডিকেট। আমলাচক্রের হাতে অবশ্য কিছু সৎ আমলাও আছে। তবে অসৎ আমলার খপ্পড়ে পড়ে গেছে সরকার। রাজনীতিবিদের হাতে রাজনীতি নেই। নেত্রীকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সামনে রেখে একটা কর্তৃত্বপরায়ণ দেশ বানানোর চেষ্টা করছে এসব অসৎ আমলারা। এখন যা যা হচ্ছে সে ব্যাপারে রাজনীতিবিদরাই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা মনে করার কোনো কারণ নেই। যেসব জনক্ষতিকর সিদ্ধান্ত আসছে, তা কিন্তু এই অসৎ আমলা এবং সিন্ডিকেটের স্বার্থেই হচ্ছে। একটা উদাহরণ দেই। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছে না। ঋণখেলাপি হয়ে গেছে, কিন্তু ব্যাংকগুলি তাদের নাম প্রকাশ করছে না। তাদের কোনো শাস্তি দিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কৃষক ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল কিংবা কোটি টাকা নিয়েছিল গরুর ফার্ম করবে, কিন্তু তারা নানান কারণে ফেল করেছে লক্ষ্যে পৌঁছাতে। সেখানে এই অসহায় কৃষকের কোমরে রশি বেঁধে জেলে ঢোকানো হচ্ছে। তাই কৃষক আর ধনীর পার্থক্য যদি রাষ্ট্র করে। প্রশ্ন যাদের মওকুফ বলা হচ্ছে তারা কি সরকারের আত্মীয়স্বজন? রাষ্ট্রের পরিচালক তারা? ঋণখেলাপিরা যদি রাষ্ট্রের পরিচালক হয়, তাহলে সে রাষ্ট্রের অবস্থা কি হবে?

দেশ:  তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন সামনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি?

পঙ্কজ ভট্টাচার্য : কঠিন পরিস্থিতি। জনগণের শাসন প্রকৃতই ফিরিয়ে আনতে হবে। রাষ্ট্রের খোল নলচে বদলাতে হবে। সংসদে থাকবে শতকরা ৭২ জন ধনীর সন্তান? তাহলে সে সংসদের কাছে কি আশা করা যায়। তাই ধনী বিত্তশালীর হাত থেকে ক্ষমতার বলয়টা সরিয়ে ফেলতে হবে এবং প্রকৃত রাজনীতিবিদরে হাতে ক্ষমতা দিতে হবে এবং সেটা জনগণই করতে পারে। জনগণই প্রকৃত রাজনীতিবিদদের চিনবে। প্রকৃত ভালো মানুষদের চিনবে। তবে সেই জনগণকে গ্যারান্টিটা দিতে হবে যে, প্রত্যেকেই ভোটটা দিতে পারবে। ভোট কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। সেজন্যই বলছি, মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম যারা করেছে, তাদের দিকে খেয়াল করে দেশটাকে আমূল পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সে মানুষরা তখনই গণতন্ত্রের জন্য ছাপিয়ে পড়বে, যখন তারা একটি সৎ রাজনীতিবিদের সাথে পাবে।

শেয়ার করুন