০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০১:৪০:৩৪ পূর্বাহ্ন


সীমান্ত জুড়ে সেনা মোতায়েন ‘এখন সময়ের দাবি- রিজভী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২৪
সীমান্ত জুড়ে সেনা মোতায়েন ‘এখন সময়ের দাবি- রিজভী


বানন্দবানে কথিত কুকি-চিন সশ্বস্ত্র গোষ্ঠির হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সীমান্ত জুড়ে সেনা মোতায়েন ‘এখন সময়ের দাবি’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ ভোট ডাকাত সরকার ক্ষমতায় থাকলে সীমান্ত নিরাপদ নয়, নিরাপদ নয় নাগরিকদের জান-জবান-সম্পদ। গণতন্ত্র হত্যাকারী ভোট ডাকাত, ক্ষমতালোভী, দুর্নীতিবাজ লুটেরা আর টাকা পাচারকারী মাফিয়া চক্রের কাছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিরাপদ নয়। দেশের স্বাধীনতা যখন সংকটে তখন স্বাধীনতার ঘোষকের দল বিএনপি চুপ করে বসে থাকতে পারে না।”

‘‘শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিংবা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড(বিজিবি) ওপর নির্ভরশীল না থেকে অবিলম্বে এই মুহুর্তে দেশের সীমান্তজুড়ে বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন এখন সময়ের দাবি।”

তিনি বলেন, ‘‘ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন প্রায়। ১৯৭১ সালে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। আবার আমরা ঐক্যবদ্ধ হই দেশ এবং জনগনের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য।দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ে আমাদের চেতনায় আমাদের প্রেরণা দেদীপ্যমান।”

‘‘ মাওলানা ভাসানীর হুংকার- ‘পিন্ডির গোলামীর জিঞ্জির ছিন্ন করছি দিল্লীর দাসত্ব করতে নয়’, স্বাধীনতার ঘোষকের দৃপ্ত শপথ- ‘মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কাউকে কেড়ে নিতে দেয়া হবে না’, মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাণজয়ী উচ্চারণ- ‘ওদের হাতের গোলামীর জিঞ্জির আর আমাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা’, আর বিপন্নপ্রায় দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে দেশনায়েক তারেক রহমানের সময়োপযোগী আহ্বান ‘টেইক বেগ বাংলাদেশ’।”

‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্য রহস্যজনক’

রিজভী বলেন, ‘‘ গত ৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একটি বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তার বক্তব্য একধারে বেশ কৌতুহলোদ্দীপক এবং উদ্বেগজনক বটে । তিনি বলেছেন, কু-কি-চিনের আস্তানা আমাদের র‌্যাব ওআর্মি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলো। তারা আমাদের সীমানা পার হয়ে ভিন্ন কোনো দেশে আশ্রয় নিয়েছিলো এবং সেভাবে তারা অবস্থান করছিলো। এখন তারা কোত্থেকে আসছে, কিভাবে আসছে… মাঝে মাঝ তাদের প্রতিনিধি এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলে… বলেছিলো তারা শান্তি চায়…অনেক কিছুই বলেছিলো।”

‘‘ স্বরাষ্ট্র এই বক্তব্যে স্পষ্ট প্রমাণিত… স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এই সরকারের মন্ত্রী। কুকি-চিন সম্পর্কে তিনি অবগত থাকলেও তাদের সম্পর্কে তিনি খোঁজ-খবর রাখেননি কিংবা রাখার প্রয়োজন মনে করেননি। বরং অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় কোনো এক অজ্ঞাত অজানা কারণে কুকি-চিনকে তোয়াজ করা হয়েছে। কেনো কুকি-চিনকে এতো তোয়াজ করা হয়েছে এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে আসল রহস্য। দেশবাসী জানে, এই সশ্বস্ত্র বাহিনী প্রশাসনের নাকের ডগায় বেড়ে উঠলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিনের পরিবর্তে পাহাড়ে তথাকথিত জঙ্গি ধরার নাটক করেছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এই কুকি-চিনকে ব্যবহার করে নিজেদের হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে গিয়ে অবৈধ ক্ষমতালিপ্সু শেখ হাসিনার সরকার দেশের সার্বভৌমত্বকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।”

কুকি-চিনের হামলায় ঘটনা সম্পর্কে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

‘‘ কুকি-চিন গত দুই-তিন যেভাবে বান্দরবানে থানা-পুলিশ ফাঁড়ি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে তাতেই এটা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, এই সশ্বস্ত্র গোষ্ঠির সম্পর্কে দেশের গোয়েন্দারা ছিলো বেখবর কিংবা তাদেরকে বেখবর করে রাখা হয়েছিলো।”  

রিজভী বলেন, ‘‘ বান্দনবানে কু-কি-চিনের ভয়াবহ হামলা শেখ হাসিনার বিনা ভোটের সরকারের তাবেদারী পররাষ্ট্র নীতির কুফল ছাড়া আর কিছুই না। দেশপ্রেমিক জনগন মনে করে, এই তাবেদারি সরকারের কারণে কু-কি-চিন দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের ভয়াবহ ঘটনাকে কোনো বিচ্ছিন্ন কিংবা সাধারণ ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা্ আরও প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে।”

‘‘ কু-কি-চিনের তৎপরতা বন্ধ করতে হলে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে গ্রেফতার এবং রিমান্ডে নিয়ে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। অন্যথায় ব্যাংক লুট, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার ঘটনার প্রকৃত রহস্য কখনো জানা সম্ভব হবে না।”

কেনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর গ্রেফতার দাবি প্রশ্ন করা হলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘‘ উনি(স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী) বলেছেন, উনি সব জানেন। উনি বলেছেন, কু-কি-চিনরা এখানে অবস্থান ছিলো আগের থেকে … এসব বিষয় উনার জানা ছিলো। সব কিছু মিলিয়ে আজকে যে সংঘাতময় পরিবেশ, আজকে যে রক্তাক্ত পরিবেশ… এই পরিবেশ যে পূর্ব পরিকল্পিত এটা তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যেই প্রমাণ হচ্ছে।”

‘‘ সুতরাং তাকে যদি জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় তাহলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।”

মিয়ানমারের মতো ভারত সীমান্তে ‘অরক্ষিত’ উল্লেখ করে সেখানকার সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ঘটনা হচ্ছে বলে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন রিজভী।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস, অধ্যাপক সিরাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।



শেয়ার করুন