২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ১১:৩৯:৩৬ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে চাল নিয়ে চালবাজি
চাল কারসাজিতে শিল্পপতি অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৬-২০২২
চাল কারসাজিতে শিল্পপতি  অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু


 ‘বাংলাদেশও শ্রীলঙ্কার মত পরিস্থিতি হবে’ বিভিন্ন মহলের এমন প্রচারনায় নড়েচড়ে বসে সরকার। সামার্থের সবটুকু দিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু লাগামহীন বাজার ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এরমধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তো রয়েছেই। সর্বশেষ, ভোজ্যপণ্য সয়াবিন তেলের পর আটার দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চাল। সব পণ্য কমিয়ে ব্যবহার করতে পারলেও বাংলাদেশের অতি দরিদ্রমানুষ এক মুঠো কম খেয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু তারা প্রতিদিন মাথার ঘাম পা’য়ে ফেলে পরিশ্রম করে দু’বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচার জন্য। আটাতে দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা থেকে এখন ১২০ টাকা কোথাও কোথাও। যা ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ লাগার আগেও ছিল ৭২-৭৫ টাকা। খোলা বাজারও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২/৩ টাকা এদিক সেদিক করে বাড়ছে।

বাকি ছিল চাল সেটাও শুরু। আটার দাম সেভাবে আলোড়ন না ফেললেও ভোজ্য তেলের বাজার লিটারে ৫০ টাকার উপরে এখন বৃদ্ধি। সেখানে চালও বাড়তে শুরু করেছে কোনোরকম কারণ ছাড়া। চাল বাংলাদেশেই উৎপাদন হচ্ছে সেখানে চালের মূল্য বৃদ্ধির কী কারণ। সার থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই সরকার ভর্তুকি দিয়ে কৃষিকাজ লালন করছে। সেখানে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ না থাকলেও ঘুরে ফিরে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন কারসাজিতে সেটাই করছেন। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর উদ্যোগ নেয়। খাদ্যমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, চাল সিন্ডিকেট বড় বড় রাঘব বোয়ালদের নিয়ন্ত্রণে। 

দেশে চালের কোনো ঘাটতি নেই। গত বোরো মৌসুমেও ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছে। বন্যা না হলে আমনেও ভালো ফলনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

কিন্তু এত ইতিবাচক খবরের পরও অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫২ টাকায় উঠেছে। এই দাম গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্য চালের দামও বাড়তি। ফলে এই করোনা মহামারির মধ্যে বিপাকে পড়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কারসাজি চক্রের কারণেই চালের দাম বাড়ছে। বেশি লাভের আশায় মিলার ও মজুতদাররা ধান, চাল মজুত করে রেখেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় বাজারে ধান-চালের সরবরাহ কম। এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে, চালের দাম কমাতে সরকার সারা দেশে ওএমএস চালু করলেও বাজারে তা কোনো প্রভাব ফেলছে না।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারও বিষয়টি স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘নব্য মজুতদারদের’ কারণে চালের দাম বাড়ছে। করোনার কারণে অন্য ব্যবসায় মন্দা থাকায় অনেক ব্যবসায়ী ধান, চাল কিনে মজুত করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, খাদ্যমন্ত্রী যদি এই মজুতদারদের বিষয়ে জানেন তাহলে কেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন না?

অবশেষে চাল কারসাজির কারনে বিভিন্ন গুদামে অভিযান পরিচালনা শুরু করে সরকার। এর মধ্যে স্কয়ার গ্রুপের দিনাজপুর সদরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের গুদামও রয়েছে। সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল জব্দ করে। অথব ওই গুদামে চাল রাখার অনুমতি ছিল ৩১২ টনের। এ ব্যাপারে মামলা হয়। 

মামলার কারণে স্কয়ার গ্রপের অন্যতম পরিচালক দেশ বরেণ্য শিল্পপতি, বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু (সিআইপি) হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন। অঞ্জন চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলাম। আদালত শুনানি নিয়ে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন।’ বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি সাহেদ নুর উদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। 

আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহবুব শফিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

উল্লেখ্য, গত ১ জুন দিনাজপুর সদরে স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল জব্দ করে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় মিলের ইনচার্জকে। 

এর আগে দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মর্তুজা আল মঈদ বলেন, উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ বাজারে কোম্পানিটির ছয়টি গুদামে গত ৩১ মে বিকেল থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়।

ওই সময় মিলের ছয়টি গুদামে ৫ হাজার ১২৪ টন আতপ চাল পাওয়া যায়, তবে মিলের অনুমোদন ছিল ৩১২ টন রাখার। সে হিসাবে মিলে বেশি মজুত ছিল চার হাজার টনের বেশি চাল। এ ঘটনায় মামলা হয়।  

দেশের বরেণ্য শিল্পপতি অঞ্জন চৌধুরী শুধু দেশের ঔষধ (স্কয়ার) শিল্পেই তাদের নাম নয়, এছাড়াও হাসপাতাল, টেক্সটাইল, ইফরমেশন টেকনোলজি, ফুড অ্যান্ডা বেভারেজ, টয়লেট্রিজ, সিকিউরিটি সার্ভিস, অ্যাভিয়েশন, ব্যাংকিং, স্পোর্টস ও মিডিয়া সেক্টরে সমান প্রভাব।

যিনি রাজনীতির দিক দিয়েও ক্ষমতাসীন দলেরই লোক। সব মিলিয়ে এমন এক ব্যাক্তিত্ব, কিভাবে দেশকে অস্থিতিশীল পর্যায়ে নিয়ে যেতে, দেশের মানুষকে বিপাকে ফেলতে,সর্বপরি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে সরকারকে বিপাকে ফেলতে এমন কারসাজিতে যুক্ত হতে পারে- মানুষের বিস্ময় যেন কাটছে না। 


শেয়ার করুন