২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০২:২৭:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


রাজনৈতিক সংকটের সমাধান সমঝোতায়
রাজনৈতিক অচলাবস্থা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৬-২০২২
রাজনৈতিক অচলাবস্থা অর্থনীতির জন্য শুভ নয়


দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ সংঘাত আর অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি ঘরনার কিছু বিরোধীদল বলছে রাজপথে আন্দোলন করে বর্তমান সরকাকরের পতন ঘটাবে, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে। সরকারিদল কোনো অবস্থায় কনস্টিটিউশনের বাইরে যাবেনা। এখনো নির্বাচনের দেড় বছর বাকি। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মেরুকরণ। সাধারণভাবে সরকারি দলের শাসন পদ্ধতি, দুর্নীতি, অপশাসন নিয়ে জনমনে অস্বস্তি থাকলেও অর্থনৈতিকভাবে দেশ অনেক এগিয়ে যাওয়ায় জনগণ এই মুহূর্তে কোনো সরকারবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবে বলে মনে হয়না।

 তাই সরকারবিরোধী আন্দোলন আদৌ জমাট বাঁধবে বলে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। তবে সরকারিদল  এবং অঙ্গসংগঠনসমূহে বিরোধীপক্ষের অনেক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সরকারি দলের অনেক অ্যাকটিভিস্টস দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। সরকার অতিরিক্ত আমলা-নির্ভর হয়ে পড়েছে। এগুলোও অস্বীকার করা যাবেনা। কিন্তু জনগণের কাছে কোনো বিকল্প জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সরকারবিরোধী মহল এগিয়ে আসতে পারেনি। জনগণের সামনে কোনো বিকল্প নেতৃত্ব দৃশ্যমান নয়। এমতাবস্থায় সরকারবিরোধী আন্দোলন হলে রাজপথে সংঘাত,অরাজগতা হবে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিরোধীপক্ষ জনঘনিষ্ঠ নয় বলে তাদের উদ্দেশ বাস্তবায়িত হবে বলে মনে হয়না। 

করোনা এখনো কিন্তু পুরোপুরি বিদায় নেয়নি। করোনা অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্ব এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়ায়নি। তদুপরি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করে রেখেছে। সব দিক বিবেচনা করলে বাংলাদেশ দুনিয়ার অনেক দেশ থেকে অনেক ভালো আছে। যদিও দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতি সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। জ্বালানি নিরাপত্তা দ্রুত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। সরকার বাজার ব্যবস্থা কঠোর তদারকির আওতায় আনতে চেষ্টা করছে বিভিন্নভাবে। কৃচ্ছ্রতা সাধনের চেষ্টা করছে। কিন্তু বিভিন্ন রেগুলেটরি এবং বিধিবদ্ধ সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণে দুর্নীতির রাশ টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা দৃশ্যমান।

জুন ২০২২ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ অনেক মেগা উন্নয়ন প্রকল্প চালু হলে দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। বিশেষত পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্তফুলী যদি তলদেশের টানেল, মেট্রোরেলের একটি অংশ ডিসেম্বর ২০২২ নাগাদ চালু হবে। বিরোধীপক্ষের কোনো হঠকারিতা তখন হলে আদৌ পানি পাবে কিনা সন্দেহ আছে। বরং ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেষ্টা করবে অশুভ মহল। 

সরকার কিন্তু নির্বাচন কমিশন আইন পাস করেছে। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়োজিত হয়েছে। যদিও সব সদস্যের নিরপেক্ষতা নিয়ে কিছু কিছু সন্দেহ আছে। সামনে আসছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। বিএনপিসহ কিছু দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ধারায়- গো ধরে বসে আছে। দেশে সংবিধানিক ধারা বজায় আছে। পার্লামেন্ট চালু আছে। দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে সরকার পতনের মতো সামর্থ্যবিরোধী দলের কাছে নেই। বরং সুনির্দষ্ট বিকল্প কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কাছে নিজেদের উপস্থাপনের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোই বিরোধী দল বা গোষ্ঠীর কৌশল হলে ভালো হবে।

যতই বলুক যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত- দেশ এখন ২০০১ পরিস্থিতিতে নেই। আর বিদেশি দূতদের কথা এতো বেশি উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়া কি বুঝতে চাচ্ছে? বাংলাদেশ পাকিস্তান নয় যে তুড়ি মেরে নির্বাচিত সরকারকে উড়িয়ে দিবে। কে হবে বিরোধী ঐক্যের মূল নেতা? খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে কারাবরণ করে আছেন। তারেক জিয়ার ঘাড়ে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঝুলছে। বিরোধীপক্ষ একক নেতৃত্বে একতাবদ্ধ হতে পারবে বলে মনে হয়না। সরকারিদল তৃণ মূলের সমস্যাগুলো মিটিয়ে ফেলে, হাইব্রিডের অভিশাপ মুক্ত হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরাজিত হবে না। জাতীয় পার্লামেন্টে ২০০ সদস্য সরকারিদল নির্বাচিত হলে বাকি ১০০ বিরোধীপক্ষ পেলেই বা ক্ষতি কি? কথা হলো বিরোধীপক্ষ ১০০ বিজয়ী সদস্য মনোনয়ন দিতে পারবে তো? 

মোদ্দাকথা, দেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দূর করতে হবে। সরকারকে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে বিরোধী পক্ষকে সুযোগ দিতে হবে। যারা নির্বাচনে আসবে না তারা বঞ্চিত হবে। দেশ এগিয়ে যাবেই। ২০০২৪-২০২৯ পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক হঠকারিতা চলবে না। 

সমাধান সমঝোতা। রাজপথে সংঘাত করে তার পরিণতি কারো জন্য শুভ হবে না।


শেয়ার করুন