০৬ মে ২০১২, সোমবার, ০৫:৬:৩৬ পূর্বাহ্ন


এমএসএফ’র উদ্বেগ
অক্টোবর মাসে ৭ অজ্ঞাতনামা লাশ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
অক্টোবর মাসে ৭ অজ্ঞাতনামা লাশ


সারা দেশে গত অক্টোবর ’২২ মাসে সাতটি অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন নারী ও ৫ জন যুবক রয়েছে। আর এ ধরনের ঘটনাকে উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয় বলে উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি ঘটনা ছাড়া সব কয়টি লাশের পরিচয় অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে। কে কোথায় কখন অপহৃত হবে, কোথায় কার লাশ পাওয়া যাবে, তা মানুষের একটি  বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা যত ক্ষমতাবানই হোক, সব অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। এমএসএফ মনে করে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। কাজেই সরকারকেই এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধুমাত্র অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)’র ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। সংগঠনটি মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন অক্টোবর ২০২২ প্রকাশ করেছে। 

এতে বলা বলা হয় এ মাসের (অক্টোবর) উদ্বেগ-আতঙ্কের বিষয়টি ছিল অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর মাসে অন্তত ২ জন নারী ও ৫ জন যুবকের অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে যা ভয়ংকর এবং অনাঙ্খিত। ১টি, স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বাঁধা রাস্তার ধারে পড়ে থাকা ১টি লাশ, ১টি হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বস্তাবন্দি ও বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন অবস্থায় পানিতে ভাসমান ৪টি ও  ১টি রেল লাইনের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া ১টি লাশ। 

প্রতিবেদনে জানান হয় ১৮ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৩টায় চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের গোপ্তাখালী সাগর উপকূলের মুরাদপুর ইউনিয়নের গোপ্তাখালী এলাকা থেকে অজ্ঞাত (৪০) এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির খবরের ভিত্তিতে সীতাকুন্ড থানা পুলিশ ও কোস্টগার্ডসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাউছিয়া কমিটির সহায়তায় মরদেহটি উদ্ধার করে। তবে নিহতের বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি।

১৭ অক্টোবর সকালে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে উজানী সড়কের কৃষ্ণনগর এলাকায় রাস্তার পাশে স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বাঁধা চোখের উপরে আঘাতের চিহ্নসহ অজ্ঞাতনামা (৩৫) এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা লাশটি রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। লাশটির কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি।

১৮ অক্টোবর দিবাগত রাত ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অজ্ঞাত প্রায় ২৫ বছর বয়সী এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে নৌ পুলিশ। রাতে ফেরীঘাট সংলগ্ন পন্টুনের পাশে নদীতে ভাসমান অবস্থায় বস্তাবন্দি লাশটি দেখতে পান ডিউটিরত পুলিশ।

২২ অক্টোবর সকাল ৯টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়ায় সিরামপুর বিল থেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্নসহ অজ্ঞাত (২৭) যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকালে স্থানীয় কৃষকেরা বিলে কাজে যাওয়ার সময় মরদেহ ভাসতে দেখে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে থানা-পুলিশে খবর দেয়। তাদের ধারণা, দুর্বৃত্তরা যুবকটিকে দূরে কোথাও হত্যার পর সেখানে ফেলে দিয়েছে।

২৩ অক্টোবর সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌরশহরের শিবপুর রেল লাইন থেকে নিখোঁজের ৭ দিন পর বেলকুচি উপজেলার গাবগাছি গ্রামের ফকির চাঁদের (৩২) এর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরিবারের লোকজন অনেক খোঁজাখুঁজির পরও কোনো সন্ধান না পেয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর বেলকুচি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

২৬ অক্টোবর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের বালিয়াবাঁধা বাজারের দক্ষিণ পাশে কালিগঙ্গা নদী থেকে অজ্ঞাত (৩৫) এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, ১৫-২০ দিন আগে অজ্ঞাত নারীটি মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় তুরাগ থানাধীন ১৭ নম্বর সেক্টর ব্লক-১, প্লট নং-১১ এর নির্মাণাধীন ভবনের ৫০ গজ উত্তরে পাকা রাস্তার ওপর থেকে চাদর পেঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক নারীর (৫০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর ২০২২ মাসের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখিযেছে। এতে বলা হয় রাজনৈতিক সহিংসতা, ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতনে ঘটনা বাড়ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার করে সাধারণ নাগরিকদের বস্তুনিষ্ঠ ও স্বাধীন চিন্তা, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। 

পুলিশি হয়রানি আরও বেড়েছে। এছাড়াও কারা হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে চলেছে। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। পুলিশসহ ক্ষমতাসীন পার্টিও ক্যাডাররা বিরুদ্ধমত দমনে অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগ করছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেফতার, তাঁদের বাড়িঘরে হামলা, তাঁদের সভা সমাবেশে বাধা দেওয়ার ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। 

অধিকন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের বিচার দাবি করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণভাবে তা উপেক্ষা করে যাচ্ছে। মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা এভাবে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া ও বিচারহীনতায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাাশ করছে।

এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে  ৩৬৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৬১টি, দলবদ্ধ ধর্ষণ ২০টি, ধর্ষণ ও হত্যা ২টি। এর মধ্যে ৩ জন প্রতিবন্ধী নারী ও ১ কিশোরীও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনটি প্রতিবেদনে বলেছে, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধে কার্যকর ভূমিকা লক্ষণীয় নয়। এ কারণে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা ক্রমে বেড়েই চলেছে।

শেয়ার করুন