১৯ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:০৩:৩১ পূর্বাহ্ন


রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে কেউ নেই বাংলাদেশের পাশে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৬-২০২২
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে কেউ  নেই বাংলাদেশের পাশে ক´বাজারের রোহিঙ্গা শিবির/ফাইল ছবি


রোহিঙ্গা ইস্যুতে বড্ড বন্ধুছাড়া বাংলাদেশ। প্রায় ১২ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে। কিন্তু এদের প্রত্যাবাসানে কোনো আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেই। বাংলাদেশকে মায়ানমারের জান্তা কর্তৃক ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গাদের ঠাঁই দেয়ার জন্য সে সময় অনুরোধ জানায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু এরপর এ ইস্যু নিয়ে মায়নামারের সঙ্গে কোনো দেনদরবার করছেনা কেউ। যেখানে মিয়ানমারকে প্রচন্ড চাপ দেয়া উচিৎ সেখানে সেটা তো দূরে থাক, সামান্য আহ্বানটাও জানাচ্ছে না তারা। উল্টো মায়নামারের সঙ্গে অনেক পরাশক্তির বাণিজ্যক সম্পর্ক দিন দিন বাড়িয়েই চলছে। 

বাংলাদেশ বারবার এ বিষয় বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানালেও এই ইস্যুতে রহস্যজনকভাবে সবাই যেন নিশ্চুপ। এক্ষেত্রে একান্তে পাশে পাচ্ছেনা বাংলাদেশ কাউকে। সেটা এশিয়ার ভারত,পাকিস্তান থেকে শুরু করে বিশ্বের কোনো দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে প্রত্যাবর্তনে কোনো চাপই দেয়ার জন্য এগিয়ে আসছেনা। কেন এ এক ইস্যুতে বন্ধুহীন একাকী বাংলাদেশ সেটা ঠাহর করা যাচ্ছেনা। 

গত ২০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার নতুন হাই কমিশনার লিলি নিকোলস প্রধানমন্ত্রীর সংসদ ভবনের কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেন ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত হওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য যে দীর্ঘ সময়ের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ কতদিন এত বড় বোঝা বহন করবে?’ সরকার কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিয়েছে এবং যেখানে তাদের জন্য তুলনামূলকভাবে উন্নত সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে বিষয়টিও প্রধানমন্ত্রী এ সসময় তাকে জানান। 

এর আগে ২৪ মে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে প্ররোচিত করছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার কারণে হতাশ হয়ে পড়ছে, যার একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, এটি তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করছে।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।শেখ হাসিনা ইউএনএইচসিআরকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার রাখাইন রাজ্যে যা পাওয়া যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম ও ভাষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অনুসরণ করে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুবিধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, মিয়ানমারের ১১ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার কারণে গভীর বনভূমি কক্সবাজারের উখিয়ার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা গাছ কাটার মাধ্যমে বনভূমি হ্রাস এবং এলাকার পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার এক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িকভাবে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ভাষানচরকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে গড়ে তুলেছে। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাপী উদ্বাস্তু, রাষ্ট্রহীন ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সহায়তায় ইউএনএইচসিআরের ভূমিকার প্রশংসা করেন।’

তবে বাংলাদেশকে অনেক দেশই প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বাধা না দেয়ার জন্য। যা একার্থে তাদের এ দেশে থাকার বৈধতা দেয়া ও নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রধান করা। বাংলাদেশ সেটাতে রাজি নয়। বারবারই বাংলাদেশ বলছে, তারা বাস্তুচ্যুত। তাদেরকে তাদের দেশে যাতে ফিরিয়ে নেয়া হয় এবং তাদের বসতভিটায় যথাযথভাবে থাকার অধিকার লাভ করতে পারে সে জন্য সবাই উদ্যোগ নিন। কিন্তু বাংলাদেশের এ কথা আন্তর্জাতিক মহল মনযোগ দিয়ে শুনলেও অজ্ঞাত কারণে চুপ হয়ে যান। এবং সবসময়ই নীরব থাকেন। 

এদিকে গত রোববার রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রসকে বলেন,‘গত শতকের সত্তর ও নব্বইয়ের দশকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছিল, ফেরতও গিয়েছিল বলে উল্লেখ করেন আব্দুল মোমেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সে সময় মিয়ানমারের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ছিল। তাই তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিয়েছিল। কিন্তু এখন এ নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং যুক্তরাজ্য ও পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারে ব্যাপক বিনিয়োগ অব্যাহত রেখেছে।’

এ সময় তিনি যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেন, যে তারা যেন বাংলাদেশ থেকে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গ নিয়ে যান এবং সেখানে পুর্নবাসন করেন। আব্দুল মোমেন প্রস্তাব দেন, ‘যুক্তরাজ্য যেহেতু ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন, তাই তারা বাংলাদেশ থেকে এক লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।’ 

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান এলিজাবেথ ট্রস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে যুক্তরাজ্য। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন।


শেয়ার করুন