০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ৬:৩৯:৫৮ পূর্বাহ্ন


দেশে বিদ্যুৎ সংকট
ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্বের সংকটে
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্বের সংকটে ঢাকার একটি বিদ্যুৎ অফিস


হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকার বাইরে সারা দেশে তীব্র বিদ্যুৎ সংকট চলছে। অনেক স্থানে ৬-৮ এমনকি ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে বলে সংবাদ মাধ্যম খবর দিচ্ছে। তীব্র গরমের সময় বিদ্যুৎ হীনতার পাশাপাশি খাবার পানি সরবরাহেও সংকট দেখা দিয়েছে। ঢাকার বাইরে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অস্তিত্বের সংকটে। বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রশ্ন করলেই বলে গ্যাস সঙ্কট। সামিট গ্রুপ মালিকানার এফেসারু সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসার পরেও কেন আর এলএনজি সরবরাহ বাড়েনি? বিষয়টি কেন খোলাসা করছে না কর্তৃপক্ষ? 

শুনছি বাংলাদেশে সাধারণ অবস্থা থেকে বিদ্যুৎ জ্বালানি ব্যবসা করে সিঙ্গাপুরের অন্যতম ধনী ব্যাবসায়ী এখন সামিট গ্রুপের কর্ণধার বন্ধু আজিজ খান। জানতে চাই, সামিট গ্রুপের এফেসারু কি চালু হয়েছে কিনা? চালু হলে জাতীয় গ্রিড আরো অন্তত ৩০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। পুরোটাই বিদ্যুৎ সেক্টরকে দিলে এখন ১৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মিটিয়ে লোডশেডিং হবার কথা না। তাহলে কি অন্য কোনো কারণ আছে?

ঈদের সময় অধিকাংশ মানুষ ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শহর এবং গ্রামাঞ্চলে থাকবে। শিল্পগুলো উৎপাদন সীমিত করায় হয়তো কিছুটা স্বস্তি থাকবে। কিন্তু ঈদের পর গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে বিদ্যুৎ চাহিদা। লোডশেডিং তীব্রতর হলে জনরোষ সৃষ্টি হবে। কিভাবে সমাধান করবে সরকার? 

বর্তমান সংকট সৃষ্টির পটভূমি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে নিজেদের ভ্রান্ত পরিকল্পনা এবং ভ্রষ্ট বাস্তবায়ন কৌশল মূলত দায়ী। এই সংকটের জন্য বিএনপি জামাতসহ পূর্ববর্তী সরকারগুলোকে দায়ী করার কোনো অবকাশ নেই। ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চতুর্থ ধারাবাহিক টার্ম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় সরকার। দাবি করে জ্বালানি সেক্টরসহ সর্বক্ষেত্রে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। কিন্তু জ্বালানি সংকটে সার কারখানা গুলো বন্ধ, শিল্প কারখানাগুলো অস্তিত্বের সংকটে, ২৫,০০০ মেগাওয়াটের অধিক উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও প্রচণ্ড গরমের সময় তীব্র লোড শেডিং ঢাকার বাইরে সারা দেশ এমন অবস্থা কি ডিজিটাল বাংলাদেশের সঙ্গে মানানসই? 

সরকারের একজন স্বনামধন্য উপদেষ্টা বলেন, করোনা পরবর্তী সময়ে জ্বালানি রপ্তানিকারকরা নাকি ১৪ বিলিয়ন ডলার লুট করে নিয়ে গাছে। ওনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, জ্বালানি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না হয়েও ১৬ বছর উনি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা। ওনার পরামর্শেই দেশের জ্বালানি খাত স্বনির্ভর না হয়ে আমদানি কৃত জ্বালানিনির্ভর হয়েছে। মূল্যবান কয়লা সম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে, স্থলে এবং জলভাগে গ্যাস-তেল উৎপাদন গতিহীন হয়ে রয়েছে? বিস্তারিত ঝুঁকি পর্যালোচনা না করে কেন বাংলাদেশ জ্বালানি আমদানির দিকে গেলো? বাংলাদেশের অর্থনীতি সঙ্গত কারণেই বিশ্ব বাজারের জ্বালানি অগ্নিমূল্য সামাল দিতে পারছে না। জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। 

দেশে দীর্ঘ সময় ধরে দ্রুত বিদ্যৎ সরবরাহ এক্টের আদলে জবাবদিহিবিহীন কালো কানুন জারি আছে। জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই চাহিদার তুলনায় দ্বিগুণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা স্থাপন করা হয়েছে, দেশব্যাপী বিদ্যুৎ সরবরাহ গ্রিড স্থাপন করা হয়েছে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই। 

ভুল কৌশলে জ্বালানি সেক্টর পরিচালনা এবং পরিচালনার জন্য শীর্ষ পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত আমলাদের নিয়োজিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বনির্ভর জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতের দর্শন থেকে সম্পূর্ণ উল্টো পথে হেঁটে সৃষ্টি করা হয়েছে আজকের সংকট। বর্তমান সঙ্কটের জন্য একান্তভাবেই বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী এবং আমলারা একান্তভাবে দায়ী। 

আপাতত ২০২৪-২০২৫ সাল বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখছি না। হয়তো বর্তমানে গৃহীত কার্যক্রমগুলো অধিকাংশ ২০২৬ নাগাদ বাস্তবায়িত হলে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি হতে পারে। কিন্তু এই সময়ে জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকট দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অশুভ প্রভাব সৃষ্টি করবে। অথচ যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করে নিজেদের জ্বালানি সম্পদ অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন করে কাজে লাগালে বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি হতো না।

শেয়ার করুন