২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৪৭:৩০ পূর্বাহ্ন


স্বাগত মাহে রমজান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৪-২০২২
স্বাগত মাহে রমজান


মহান আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ, অফুরান করুণা আর তাকওয়া অর্জনের শাশ্বত পয়গাম নিয়ে বছর ঘুরে আবারো হাজির মহিমান্বিত মাস রমজানুল মোবারক। অপার বরকতের এ মাসে মোমিন বান্দারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় ও তাকওয়ার সোপান সিয়াম সাধনার পাশাপাশি সালাতুত তারাবি, তাহাজ্জুদ, কোরআনুল কারিম তিলাওয়াত, দান-সদকাহ ইত্যাদি ইবাদতে অধিক মনোযোগী হয়ে নিজেদের মহান প্রভুর কাছে সঁপে দেবেন, তার প্রিয় হতে আত্মনিয়োগ করবেন।  

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে রোজা, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারো।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৩)। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের যাবতীয় গুণাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি, মুসলিম) 

অপর হাদিসে রাসুলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে, এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি, মুসলিম)

অপার বরকতময় এ মাসে আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কোরআন নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘রমজান মাস, এতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং হেদায়েতের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে...।’ (সুরা বাকারাহ : ১৮৫)

আমরা আরো প্রত্যাশা করবো, শাবান মাসের শেষ গোধূলিবেলায় পশ্চিম দিগন্তে উদিত কৃষকের কাস্তের মতো বাঁকা চাঁদ যে ত্যাগ ও সংযমের বার্তা বহন করে নিয়ে এসেছে, তা সবাই শুনতে পাবে। রোজাদাররা পান, আহার ও জৈবিক চাহিদা বর্জনের পাশাপাশি আত্মিক পরিশুদ্ধির সাধনাও চালিয়ে যাবেন। পবিত্র রমজানের বড় শিক্ষা হলো- আত্মসংযম। এই সংযম শুধু খাবার ক্ষেত্রে নয়, সর্বত্র। খাবারের পাশাপাশি আমাদের চোখ, হাত এবং মুখকে সংযম করতে হবে। সেই সাথে আত্মশুদ্ধি করতে হবে। আত্মশুদ্ধি এবং আত্মসংযম আমাদের প্রতিটি কাজেই দেখাতে হবে।

আমরা জানি, রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। শিা দেয় ত্যাগ ও মিতব্যয়িতার; ভোগ না করে বিলিয়ে দেয়ার আদর্শ। দুঃখজনক হলেও সত্য, রমজানের ত্যাগ ও সংযমের এই শিা অনেকের জীবনে প্রতিভাত হয় না। এই রমজান মাস হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার মাস, গুনাহ মুক্ত করার মাস। সেই বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে।

তারপরেও আমরা দেখি পবিত্র মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে দেশে এবং প্রবাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঊর্ধ্বগতি। একশ্রেণির মুনাফাখোর ব্যবসায়ী এই ঘৃণীত কাজটি করে থাকেন। বিশেষ করে বাংলাদেশে। প্রবাসেও নানা কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে দাম অনেক বেশি। কিন্তু বাংলাদেশে কালোবাজারিরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এই কাজটি করে থাকেন। আল্লাহকে অসন্তুষ্টকারী কাজকর্ম কেন করে বেড়াবো? কেন আমরা মিথ্যা বলবো? কেন আমরা মিথ্যা স্যা দেবো? কেন আমরা মুসলমান ভাইয়ের মনে কষ্ট দেবো? কেন অপরের হক নষ্ট করবো? কেন মানুষের অধিকার হরণ করবো? কেন জুলুম করবো? কেন আমরা অন্যের রক্ত ঝরাবো? মোট কথা, এরূপ যত বিষয় আছে, যেন সেসব অন্যায় ও গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাস, ধ্যান-খেয়াল এবং গুরুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়- এটিই তাকওয়া।

আফসোসের বিষয় হলো, রমজানের প্রশিণের এ বিষয়টি আমাদের বোধ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এ মাসে প্রশিণ গ্রহণ করে আমাদের জীবনাচার উন্নত ও সুন্দর করার মানসিকতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে রমজান আসে রমজান যায়, কিন্তু আমরা আগের মতোই থেকে যাই। রোজার কোনো প্রতিক্রিয়া আমাদের মাঝে পরিলতি হয় না। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে রমজানের যে ফজিলত তা থেকে আমরা বঞ্চিত হবো। পবিত্র রমজানে আমরা যদি পাপমুক্ত হতে না পারি, তাহলে এর চেয়ে কষ্টের আর কিছু হতে পারে না। কারণ আমরা জানি না, হয়তো এটাই আমাদের শেষ রমজান। সুতরাং সবার এই সুযোগটি কাজে লাগানো উচিত।

শেয়ার করুন